You dont have javascript enabled! Please enable it!

সংসদে আতাউর রহমানের ভাষণ

সংসদ ভবন: মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে বিরােধী দলীয় জনাব আতাউর রহমান খান বাজেটের তীব্র সমালােচনা করেন। তিনি অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতাকে স্বার্থবিরােধী এবং অর্থহীন আখ্যা দিয়ে বলেন, এতে দেশের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা হয়নি। জনাব আতাউর রহমান খান তার ভাষণে অভিযােগ করেন, সরকার কালাে টাকার হিসাব গ্রহণে কোনাে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। তিনি জানতে চান অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় যে আইডল মানির idle কথা বলছেন তা কি? জনাব খান বলেন, যা আইডল মানি তাই কালাে টাকা। কেবল ব্যাংক রেট ৫ টাকা থেকে ৮ টাকা করে দিলেই কালাে টাকা সাদা হয়ে যাবে না বলে তিনি মতাে প্রকাশ করেন। বিরােধী দলীয় প্রবীণ নেতা বলেন, পূর্ণিমার চাঁদ দেখতে যেমন পঞ্জিকা দেখার প্রয়ােজন পড়ে না দ্রুপ কালাে টাকার উৎস কি তা জানতেও বিশেষ কষ্ট করতে হয় না। তিনি বলেন, সরকার না জানার ভান করতে পারে না। কিন্তু দেশবাসী জানেন, কালাে টাকার উৎস কি, এবং কারা কালাে টাকার মালিক। জনাব খান দেশব্যাপী দুর্নীতি প্রসারকে এর অন্যতম কারণ বলে বর্ণনা করে বলেন, দেশে এমন ডিপার্টমেন্ট নেই যেখানে দুর্নীতি বা ঘুষ প্রবেশ করেনি। তিনি স্থানীয় একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, এই পত্রিকায় অভিযােগ রয়েছে যে, মন্ত্রীরা বিদেশে টাকা পাচার করছে, কোলকাতায় বাড়ি করছে। তিনি চান পত্রিকাটি সরকার সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও যে অভিযােগ করেছে তার পরেও সরকার কেন তার প্রতিবাদ করেননি। জনাব আতাউর রহমান খান বলেন, সরকার জানেন যে, বেবিফুড কালােবাজারী করছে, যে রিলিফের কাপড় চুরি করছে কিংবা বাড়ি হাইজ্যাক করছে কালাে টাকা কামিয়ে বড় লােক হচ্ছে সরকার তা জানেন কিন্তু কিছুই করছে না। জনাব রহমান অর্থমন্ত্রীর পূর্বর্তন বক্তৃতাকে সমর্থন করে বলেন, অর্থনীতির মেরুদণ্ড সত্যিই ভেঙে পড়েছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় ভাঙা অর্থনীতিকে জোড়া লাগানাের কোন ব্যবস্থা নেই। বিরােধী দলীয় নেতা চলতি বছরের বাজেটকে দায়সারা বর্ণনা করে বলেন, এ বাজেট জনগণের কাজে লাগবে না। গত বছরের বাজেটের ন্যায় এ বছরের বাজেটও ব্যর্থ হতে বাধ্য। জনাব আতাউর রহমান সরকারকে দেশে বৈষম্য সৃষ্টির জন্য দায়ী করেন। তিনি অভিযােগ করেন, সরকারের বৈষম্যমূলক নীতির কারণে একদল আরাে ধনী হচ্ছে, অপরদিকে গরীবরা আরাে গরীব হচ্ছে।
চোরাচালান প্রসঙ্গ: জনাব আতাউর রহমান বলেন, দেশে খাদ্যসম্পদ ও অন্যান্য অর্থনৈতিক দুরবস্থার জন্য চোরাচালান সবচেয়ে বেশি দায়ী। তিনি অভিযােগ করেন স্বাধীনতার পর মােট ৪শ ৮০ কোটি টাকার খাদ্যশস্য চোরাচালান হয়েছে এবং ১০ লক্ষ বেল পাট চোরাচালান হয়েছে। প্রসঙ্গত তিনি বলেন, আমাদের থেকে পাট আমদানি করে কোন কোন দেশ তা বিদেশে পুনরায় রপ্তানি করছে। এটাকে তিনি আন্তর্জাতিক রীতি বহির্ভূত বলে মনে করেন।
শান্তি শৃঙ্খলা: জনাব আতাউর রহমান খান দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন। খুনের আগামীরা প্রকাশ্যে ঘুরছে বলে তিনি অভিযােগ করেন। জনাব খান বলেন, সেনাবাহিনীর চাপের মুখে সঠিকভাবে কাজ করতে পারেনি।
টেস্ট ক্যাপিটালিজম: জনাব আতাউর রহমান খান সরকারের জাতীয়করণকে টেস্ট ক্যাপিটালিজম হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, সরকার নিযুক্ত প্রশাসকরা পরিত্যক্ত শিল্পসমূহ থেকে কোটি কোটি টাকার সম্পদ মেরে দিয়েছে। তিনি দুঃখ করে বলেন, মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী নিজেদের বিলাসিতার মাঝে ডুবিয়ে রেখে সাধারণ মানুষকে কৃছু সাধনার উপদেশ দিচ্ছে। এ অবস্থাকে তিনি ভয়াবহ বর্ণনা করে বলেন, সরকার বারুদের ওপর বসে আছেন, যেকোনাে মুহূর্তে আগুন ধরে যেতে পারে।
অবাধ নির্বাচন দাবী: জনাব আতাউর রহমান বলেন, সরকার জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেননি। জনগণ তাদের অনেক বিশ্বাস করে ৩ বছর সময় দিয়েছিল। কিন্তু তারা জনগণকে হতাশ করেছে। তিনি বলেন, এমন পরিস্তিতিতে জনগণ সরকারকে চায় কিনা তা যাচাই করে দেখার জন্য অবাধ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন দেয়া দরকার। অনেক রাত্রি হয়ে যাওয়ায় জনাব আতাউর রহমান খান তার বক্তৃতা অসম্পূর্ণ রাখেন। আজ বুধবার তিনি পুনরায় বাজেটের উপর বক্তৃতা রাখবেন। জনাব খানের বক্তৃতা শেষে ডেপুটি স্পীকার জনাব বয়তুল্লাহ আজ বুধবার বিকেল ৩ টা পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবী ঘােষণা করেন।৫

রেফারেন্স: ২ জুলাই ১৯৭৪, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!