You dont have javascript enabled! Please enable it! 1974.06.30 | যাদু-অলি গ্রেফতার, ভাসানী-আতাউরকে ধরে নিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে | দৈনিক আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

যাদু-অলি গ্রেফতার, ভাসানী-আতাউরকে ধরে নিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে

ঢাকা: সরকারের কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে সর্বদলীয় ঐক্যফ্রন্টের ৩০ জুনের ঘােষিত কর্মসূচি সাফল্যমণ্ডিত হয়নি। জুনের গােড়ার দিকে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে পলটন ময়দানে জনসভা করার কর্মসূচি ঘােষণা করা হয়। কিন্তু ২৬ জুন ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারী করা হলে ঐক্যফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করার দাবী জানান। অন্যথায় ১৪৪ ধারা লঙ্ন করে জনসভা অনুষ্ঠান করা হবে বলে তারা ঘােষণা করেন। শনিবার শেষ রাতে পুলিশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাধারণ সম্পাদক জনাব মশিউর রহমানের বাসভবনে হানা দিয়ে সেখানে অবস্থানরত ঐক্যফ্রন্টের চেয়ারম্যান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও জনাব মশিউর রহমানকে নিয়ে যায়। রবিবার ১১ টার দিকে পুলিশ ঐক্যফ্রন্টের অফিস থেকে জনাব অলি আহাদকেও ধরে নিয়ে যায়। বিকালে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করলে বায়তুল মােকাররম মসজিদের সিঁড়ি থেকে জনাব আতাউর রহমান খান এমপি ব্যারিস্টার কামরুল ইসলাম মাে. সালেহউদ্দিন এমপিকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। এ সময়। পুলিশ ১৪৪ ধারা ভঙ্গের অভিযােগে আরও কয়জনকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। তার মধ্যে গণতন্ত্রী দলের প্রচার সম্পাদক জনাব আনিসুর রহমান সৈয়দ মাহবুব, গােলাম মহিউদ্দিন, গাজী আনােয়ারুল হক (কলেজ ছাত্র) মাে. ইউসুফ (স্কুল ছাত্র), আমানউল্লাহর নাম পাওয়া গেছে। এর আগে পুলিশ ফুলবাড়িয়া এলাকা থেকে মাে. ইসমাইল (১৬) নামে জুতা কারখানার জনৈক শ্রমিককে গ্রেফতার করেছে। সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও রক্ষীবাহিনী মােতায়ন করা হয়। লৌহ শিরস্ত্রাণধারী সশস্ত্র রক্ষীবাহিনী বায়তুল মােকাররম প্রাঙ্গণ ও পল্টন ময়দান সম্পূর্ণ ঘিরে রাখে। মধ্যাহ্ন থেকেই বঙ্গবাজার, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, বায়তুল মােকাররম স্টেডিয়াম ও পল্টন বাজারের চারদিকে অসংখ্য লােকের সমাগম শুরু হয়। মাঝে মাঝে বিভিন্ন স্থান থেকে স্লোগান শােনা যায়। পুলিশ স্লোগানকারীদেরকে লাঠি চার্জ করে তাড়িয়ে দেয়। বিকাল ৫ টা ২০ মিনিটে জনাব আতাউর। রহমান খান বায়তুল মােকাররম মসজিদে যান। তার সাথে অন্যান্যের মধ্যে ব্যারিস্টার সালেহউদ্দিন ও জনাব ইকবাল আনসারি ছিলেন। আসরের নামাজ আদায় করে সাড়ে ৫ টার সময় জনাব আতাউর রহমান ও জনাব সালেহউদ্দিন মসজিদ থেকে বেরিয়ে সিড়িতে আসার সাথে সাথে বেশ কিছু সংখ্যক লােক মসজিদের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে “নারায়ে তকবীর-আল্লাহু আকবর” শ্লোগান দেয়। তখন পুলিশ জনাব আতাউর রহমান খান ও জনাব সালেহউদ্দিনকে সিড়ি থেকে হেঁচড়ে টেনে নিচে নামিয়ে আনে। এবং পুলিশের গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। এসময় মসজিদের সিঁড়িতে অবস্থিত বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশকে তিরষ্কার করে ও তাদের উপর জুতা, স্যান্ডেল প্রভৃতি নিক্ষেপ করে। পুলিশ জনাব আতাউর রহমান ও জনাব সালেহউদ্দিনকে ধরে আনছিল তখন তারা সিড়ির উপর দাঁড়িয়ে মােনাজাত করছিলেন। গভীর রাতে জনাব আতাউর রহমান খানের বাসভবনে টেলিফোনে যােগাযােগ করলে তিনি জানান যে পুলিশ বায়তুল মােকাররম থেকে তাদের সরাসরি নিজ নিজ বাসভবনে পৌছে দেয়। জনাব খান ও জনাব সালেহউদ্দিনের বাসভবনের সামনে পুলিশ মােতায়েন রয়েছে বলেও তারা জানিয়েছেন।৯৯

রেফারেন্স: ৩০ জুন, ১৯৭৪, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত