You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার মাটিতে যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে সে জন্য পাকিস্তানিরা অনুতপ্ত: ভুট্টো

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টো অতীতের সকল গ্লানিকর ঘটনা ও তিক্ত স্মৃতিকে ভুলে গিয়ে পারস্পরিক মঙ্গল ও ভবিষ্যত উন্নতির জন্য একযােগে কাজ করে যাবার আহ্বান জানিয়েছেন। জনাব ভুট্টো গতকাল শুক্রবার অপরাহে বঙ্গভবনে তার সম্মানে আয়ােজিত এক নাগরিক সংবর্ধনায় ভাষণ দিচ্ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সমবায়মন্ত্রী জনাব মতিউর রহমান। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মন্ত্রিসভার সদস্য ও প্রতিমন্ত্রীগণ, ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনের প্রধান ও ঢাকার বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ এবং সংসদ সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন। সম্বর্ধনার জবাবে পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের স্বার্থ পরস্পরের পরিপূরক। তিনি বন্ধুত্ব এবং সহযােগিতাপূর্ণ ভবিষ্যত গড়ে তােলার জন্য দু’দেশের নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানান। ১৯৭১ সালের গণহত্যা প্রসঙ্গ উত্থাপন করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৎকালীন পাকিস্তানি সামরিকজান্তা বাংলার মাটিতে যে অবর্ণনীয় অত্যাচার করেছে সেজন্য তার সরকার লজ্জিত। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ তকালীন সামরিক একনায়কত্বের সাথে পাকিস্তানি জনগণকে এক পর্যায়ে ফেলে অবিচার করেছে। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানের জনগণের তাদের বাংলাদেশের ভাইদের জন্য প্রচুর ভালােবাসা রয়েছে। জনাব ভুট্টো দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, পাকিস্তানকে তার অতীত ভুলের মাশুল দিতে হয়েছে এবং পাকিস্তানের দুটি অঞ্চল বিভক্ত হয়ে গেছে। তিনি বলেন, যা ঘটেছে পাকিস্তানিরা সেজন্য অনুতপ্ত। তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তিনি বলেন, অতীতের ভুলের পুনরাবৃত্তি করে আমরা যেন মানবতার প্রতি অবিচার না করি-আসুন সেই শপথ গ্রহণ করি। পাকিস্তান-ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ভুল বােঝাবুঝির সৃষ্টি করছে বলে যে অভিযােগ করা হয়েছে জনাব ভুট্টো তা সরাসরি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, পাকিস্তান কারাে অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করাকে নীতিগতভাবে বিশ্বাস করে না। ‘৭১ সালের ঘটনার উল্লেখ করে জনাব ভুট্টো বাংলাদেশে অত্যাচার চালানাের জন্য তৎকালীন সামরিক জান্তাকে সম্পূর্ণরূপে দায়ী করেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তিনি ঢাকা থেকে করাচী প্রত্যাবর্তন করে ‘আল্লাকে ধন্যবাদ, পাকিস্তান রক্ষা পেয়েছে’ বলেছিলেন বলে যে খবর প্রকাশিত হয়, সে প্রসঙ্গে জনাব ভুট্টো বলেন, তিনি যা বলেছেন তার ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এর আগে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জনাব ভুট্টোকে স্বাগত জানিয়ে সমবায় মন্ত্রী জনাব মতিউর রহমান একটি মানপত্র পাঠ করেন। জনাব মতিউর। রহমান তার ভাষণে বলেন, বিধ্বস্ত বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার নাগরিকদের পক্ষ থেকে আপনাকে সংবর্ধনা জানানাে হচ্ছে সমবায় মন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের শােকাবহ ঘটনাকে সামনে রেখেই আমরা বন্ধুত্ব সমঝােতা প্রতিষ্ঠার যাত্রাপথে অগ্রসর হয়েছি। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, জনাব ভুট্টোর নেতৃত্বে পাকিস্তানের জনগণও মৈত্রীর এই সেতুবন্ধন রচনায় এগিয়ে আসবেন। তিনি বলেন, ঢাকা থেকেই আবার আমাদের শান্তি ও মৈত্রীর যাত্রা শুরু হােক। জনাব মতিউর রহমান লক্ষ লক্ষ সংগ্রামী ঢাকাবাসীর পক্ষ থেকে জনাব ভুট্টো আপনাকে এবং তার সঙ্গীদের আন্তরিক অভিনন্দন জানান। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে জনাব মতিউর রহমান জনাব ভুট্টোকে ঢাকাবাসীর শুভেচ্ছার নিদর্শন স্বরূপ উপহার প্রদান করেন। সবশেষে একটি প্রীতি চাচক্রের আয়ােজন করা হয়।৯০

রেফারেন্স: ২৮ জুন, ১৯৭৪, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!