You dont have javascript enabled! Please enable it!

সংসদে কালাে টাকার হিসাব প্রকাশের প্রস্তাবে বিরােধিতা

সংসদ ভবন: বৃহস্পতিবার সংসদের বিরােধী দলীয় সদস্য জনাব আবদুস সাত্তার স্বাধীনতার পর দেশে অবৈধ উপায়ে অর্জিত কোটি কোটি কালাে টাকার সঠিক পরিমাণ জানার জন্য একটি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। সিদ্ধান্ত প্রস্তাবে জনাব সাত্তার প্রস্তাব করেন যে, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলােতে যে সমস্ত হিসাব খােলা হয়েছে সেসব হিসাব তদন্ত করা হােক। স্পীকার জনাব সাত্তারের এই প্রস্তাবটি উত্থাপনের অনুমতি দিলে ট্রেজারী বেঞ্চের সদস্যরা এর প্রবল বিরােধিতা করেন। সরকার দলীয় সদস্য জনাব সিরাজুল হক প্রথমেই এই সিদ্ধান্ত প্রস্তাবটির বিরােধিতা করে বলেন, এটি জনস্বার্থ বিরােধী। এর ফলে দেশের মানিমার্কেটে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। জনাব সিরাজুল হক প্রস্তাবটিতে আলােচনা না করতে দেয়ার অনুরােধ জানান। আইনমন্ত্রী শ্রী মনােরঞ্জন ধরও এর বিরােধিতা করে বলেন, এটি দেশের চলিত আইন বিরােধী। তিনি মনে করেন এটি নিয়ে আলােচনা করতে যাওয়া মানে আইনের বিরােধিতা করা। তিনি প্রসঙ্গত বলেন একমাত্র আদালতই প্রয়ােজনে কারাে ব্যাংক একাউন্ট জানতে পারেন। জনাব সাত্তার তার প্রস্তাবটিকে হাউসে উত্থাপনের জন্য চাপ দিতে থাকেন। ডেপুটি স্পীকার তখন রুলিং দেন যে, হাউস সুপ্রীম। হাউস থেকেই আইন প্রস্তুত হয়। জনাব বায়তুল্লাহ বলেন এটিকে আলােচনায় গ্রহণ করতে আপত্তি থাকার কোন কারণ নেই। কেননা এটি দিনের কর্মসূচিতে গ্রহণ করা হয়েছে। তারপর একে একে চীফ হুইপ শাহ মােয়াজ্জেম হােসেন, হুইপ জনাব আবদুর রউফ, সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার মইনুল হােসেন, জনাব নিজাম উদ্দিন আহমদ, অধ্যক্ষ হুমায়ুন খালেদ, জনাব আবদুর রব সেরনিয়াবাত, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব এম মনসুর আলী সকলেই জনাব সাত্তার কর্তৃক উত্থাপিত সিদ্ধান্ত প্রস্তাবটির বিরােধিতা করেন। সকলেই বিষয়টি জনস্বার্থ বিরােধী বলে বর্ণনা করেন। কিন্তু ডেপুটি স্পীকার জনাব বায়তুল্লাহ তার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অটল থাকেন। তিনি বলেন, প্রস্তাবটি সম্পর্কে হাউস সিদ্ধান্ত নিবে। তিনি জনাব সাত্তারকে তার বক্তব্য পেশ করার সুযােগ দেন। জনাব সাত্তার তখন তার প্রস্তাবের সপক্ষে বক্তব্য রাখতে যেয়ে বলেন, দেশে বৈদেশিক মুদ্রা মজুত ভয়ানকভাবে কমে গেছে। তিনি অভিযােগ করেন, স্বাধীনতার পর এক শ্রেণির লােক লক্ষ লক্ষ কালাে টাকা উপার্জন করেছে। তিনি বলেন, কালাে টাকার মালিকরা সরকারকে এবং আয়কর ফাঁকি দেবার জন্য টাকা বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে। এরা দেশের অভ্যন্তরে কোনাে শিল্প স্থাপন করছে না। জনাব সাত্তার আরও বলেন, এসব লােকেরা ডলার পাউন্ডের সরকারি রেট নির্ধারিত থাকলেও ৪০-৫০ টাকা দিয়ে ডলার পাউন্ড ক্রয় করছে এবং সেগুলাে বিদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। জনাব সাত্তার মতাে প্রকাশ করেন যে ব্যাংক একাউন্ট তদন্ত করা অবশ্যই জনস্বার্থ বিরােধী নয়। তিনি মনে করেন, এটা তদন্ত করে দেখা সরকারের কূটনৈতিক দায়িত্ব। তিনি বলেন, এসব টাকার মালিকরা সরকারকে নিয়মিত আয়কর এবং অন্যান্য কর দিচ্ছে কিনা তাও পরীক্ষা করে দেখা সরকারের দায়িত্ব। এসব কালাে টাকার। মালিকরা সুনামে-বেনামে ও ছেলেমেয়েদের নামে শত শত ব্যাংক একাউন্ট খুলেছে বলে তিনি অভিযােগ করেন। জনাব সাত্তার হাউসে দাবী করেন, তার প্রস্তাব মেনে নিয়ে কালাে টাকার মালিকদের জনসমক্ষে তুলে ধরার আহ্বান জানান। ডেপুটি স্পীকার পরে হাউসের মতামতের জন্য ভােটে দিলে এটি কণ্ঠভােটে বাতিল হয়ে যায়। এর আগে হাউসের জনাব আবদুল্লাহ সরকার এবং ময়নুদ্দিন আহমদ মানিকের উত্থাপিত আরাে দুটি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব কষ্ঠ ভােটে বাতিল হয়ে য়ায়।৪০

রেফারেন্স: ১৩ জুন, ১৯৭৪, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!