নতুন যুগ সৃষ্টিতে অকৃত্রিম বন্ধুত্ব ও বিশ্বস্ত উদ্যোগ চাই: বঙ্গবন্ধু
ঢাকা: সকল দ্বিধা-সংকোচ পরিহার করে নতুন যুগের সূচনা প্রচেষ্টায় অকৃত্রিম বন্ধুত্ব ও বিশ্বস্ত উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জনাব ভুট্টোর উদ্দেশ্যে আহ্বান জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে আয়ােজিত নৈশ ভােজসভায় বঙ্গবন্ধু এই আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে বলেন, আসুন আমরা আমাদের দুঃখী মানুষের স্বার্থে সর্বপ্রকার বিদ্বেষের তিক্ততা ভুলে সম্ভাবনা ও সমৃদ্ধির নতুন অধ্যায়ের সূচনা করি। বঙ্গবন্ধু বলেন যে, সম্পর্কোন্নয়নের স্বার্থে বাংলাদেশ পাকিস্তানের সম্পদ বাটোয়ারার প্রশ্নটি আশু বিবেচনা ও সুরাহার অপেক্ষা রাখে। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর এই সফরকে শােকাবহ স্মৃতির পটভূমিকায় মর্মস্পর্শী ও একই সঙ্গে অনস্বীকার্য তাৎপর্যে সম্পৃক্ত বলে মনে করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন ঐতিহাসিক পটভূমির মাত্রাতিরিক্ত প্রত্যাশা যেমন আমাদের নাই ঠিক তেমনি একটি ঐতিহাসিক সম্ভাবনা স্বার্থের বালুচরে হারিয়ে যাবে সেই আশংকাও আমরা করি না। বঙ্গবন্ধু বলেন যে, সত্যিকারের নিষ্পত্তির স্বার্থে পাকিস্তানি সরকার ও জনগণকে ১৯৭১ সালের সশস্ত্র সংগ্রাম থেকে উদ্ভূত অমীমাংসিত সমস্যাসমূহ সমাধানের জন্য দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে। আসতে হবে। রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক সুবিধাবাদের আবর্তে মানবিক সমস্যাকে নিক্ষিপ্ত না করার জন্য তিনি আহ্বান জনান। বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতার পূর্ণ বিবরণ নিম্নে প্রদত্ত হলাে:
স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে জনাব ভুট্টোর এই প্রথম সফর। একদিকে আপনার এই সফর শােকাবহ স্মৃতির পটভূমির মর্মস্পর্শী অন্যদিকে এই সফর অনস্বীকার্য তাৎপর্য সম্পৃক্ত। বাংলাদেশের বীর জনগণ একটি অসম ও রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে তাদের যুগ-যুগান্তরের আরাধ্য স্বাধীনতা অর্জন করেছে। এই মুক্তি সংগ্রামে চরমতম ত্যাগের অংশীদার হতে হয়েছে বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি পরিবারকে। আজও বাংলায় রক্তদান শ্যামল প্রান্তর প্রিয়জন হারানাে বিপুল ক্রন্দনের ধ্বনি প্রতিধ্বনিতে অনুরণিত। ধ্বংসস্তুপের উপর দাঁড়িয়ে আজ আপনাকে ও আপনার সহযাত্রীদের স্বাগত জানানাের মুহুর্তে বাংলার আপামর জনগণের মানস পটে সেই দুঃসহ দিনগুলাে এবং যুদ্ধের ধ্বংসতর ফলশ্রুতি অভিসম্পাদিত সত্য জাগ্রত হওয়া অস্বাভাবিক নয়।৮৮
রেফারেন্স: ২৭ জুন, ১৯৭৪, দৈনিক ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত