You dont have javascript enabled! Please enable it! 1974.06.25 | কর আরােপের প্রস্তাব করেছি দরিদ্র মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য: অর্থমন্ত্রী | দৈনিক ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

কর আরােপের প্রস্তাব করেছি দরিদ্র মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য: অর্থমন্ত্রী

সংসদ ভবন: অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ বলেন যে, দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সমাজতান্ত্রিক দেশসমূহ থেকে বৈদেশিক সাহায্য ও সহযােগিতা প্রয়ােজন। স্বাধীনতা সংগ্রামকালে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহের নৈতিক ও বৈষয়িক সাহায্যের কথা পুনরুল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমেদ বলেন যে, এই রাষ্ট্রগুলাে ভবিষ্যতেও নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী বাংলাদেশকে সাহায্য করবে। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে ফাইন্যান্স বিল ১৯৭৪ এর উপর বিরােধী ও স্বতন্ত্র সদস্যগণ কর্তৃক আনীত সংশােধনী প্রস্তাবের বিরােধিতা করতে যেয়ে অর্থমন্ত্রী এই কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন যে, বাংলাদেশ তার ৫২৫ কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেটের মধ্যে ৩শত ১৪ কোটি টাকা বৈদেশিক সাহায্য হিসেবে পাবে বলে বলে আশা করা যাচ্ছে। তিনি বলেন যে, মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য সুষ্ঠু চিন্তা ও উন্নয়নমূলক পরিকল্পনার প্রয়ােজন। তিনি বলেন, সেই উন্নয়নমূলক পরিকল্পনার জন্য আমাদের বাড়তি অর্থের প্রয়ােজন। সংশােধনীর বিরােধিতা প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন যে, যেহেতু প্রস্তাবিত ফাইন্যান্স বিল সম্পর্কে ইতােমধ্যেই জনগণ সম্যক জ্ঞাত রয়েছে সেহেতু জনসাধারণের মধ্যে তার প্রচারের কোনাে প্রয়ােজন নেই। করারােপের পর্যায়ে সমর্থন করে অর্থমন্ত্রী বলেন যে, টেলিভিশনের যে ডিউটি আরােপের প্রস্তাব নেয়া হয়েছে। তার ফলে সাধারণ মানুষের উপর কোন চাপ বা প্রতিক্রিয়া হবে না। তিনি বলেন, টেলিভিশন সৌখিন সামগ্রীর অন্তর্ভুক্ত। দরিদ্র ব্যক্তিরা তা ক্রয় করে না। অর্থমন্ত্রী বলেন যে, আগামী অর্থবছরের রাজস্ব আয় ৪শত ৭০ কোটি টাকা হবে বলে ধরা হয়েছে এবং এই আয় হতে ব্যয় সংকুলান হবে। শুধু তাই নয় যে মূল্যে খাদ্যশস্য ক্রয় করা হয় সেই মূল্যে জনসাধারণের মধ্যে বিক্রয় করতে পারলে ৬ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত হবে বলে অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আগামীতে খাদ্যশস্যের ভর্তুকি প্রদানের জন্য ৯৭ কোটি টাকা ব্যয় হবে। তিনি প্রশ্ন করেন যদি করারােপ না করা হয় তাহলে খাদ্যশস্যের জন্য ভর্তুকি কোথা থেকে আসবে? প্রশাসনিক ব্যবস্থা সম্পর্কে স্বতন্ত্র সদস্য মি. মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার সমালােচনার জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন যে, আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের রায়েই ক্ষমতায় এসেছে এবং এই সরকার তার দায়িত্ব সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন। তিনি বলেন যে, যদি প্রয়ােজন হয় সুষ্ঠু প্রশাসন ব্যবস্থার জন্য সরকার যথােপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। জনাব তাজউদ্দীন আহমদ বলেন, শাসন করা আর রাষ্ট্র পরিচালনা করা এক জিনিস নয়-আমরা যে করারােপের প্রস্তাব করেছি তা শাসনকার্য পরিচালনার জন্য নয়, দেশের দরিদ্র মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য। তিনি বলেন, পরিবর্তন করা সম্ভব কিনা, তা আমার জানা নাই। কোন দেশই বাংলাদেশকে সাহায্য দিতে রাজী না-মি, মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার এই উক্তির বিরােধিতা করে অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ বলেন যে, তিনি কোনাে সময়ই এই ধরনের কোন মন্তব্য করেন না। দেশে কোন উন্নয়ন সাধন হয় নাই বলে বিরােধী দলীয় সদস্যগণ যে অভিযােগ করেছেন জনাব তাজউদ্দীন আহমেদ তার তীব্র বিরােধিতা করে বলেন যে, অভিযােগ সত্য না। তিনি দেশের বিভিন্ন রাস্তাঘাট ও সেতু পুনঃনির্মাণের কথা উল্লেখ করেন। অর্থমন্ত্রী বক্তৃতা শেষে সংসদ স্বতন্ত্র সদস্য আনীত ফাইন্যান্স বিলের সংশােধনী নাকচ করে দেন।৮৪

রেফারেন্স: ২৫ জুন, ১৯৭৪, দৈনিক ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত