সম্পূরক বাজেটে বাড়তি ব্যয় সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী
সংসদ ভবন: শনিবার জনাব তাজউদ্দীন আহমেদ সংসদে স্পষ্টভাবে বলেন যে, অনিবার্য কারণে চলতি অর্থবছরে সম্পূরক বাজেটে ২৭৮ কোটি ৯১ লক্ষ টাকার অতিরিক্ত ব্যয়ের প্রয়ােজন ছিল। এর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন যে, আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যসহ অন্যান্য দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি তা দেশে আনার ভাড়া বৃদ্ধি এবং দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রাজনৈতিক কারণে এই অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করা একান্ত প্রয়ােজন ছিল। সম্পূরক বাজেটের উপর গত শুক্রবার জনাব আবদুস সাত্তার এবং শ্রী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ও মঈনউদ্দিন আহমদ মানিক বক্তৃতা করেন। জনাব তাজউদ্দীন আহমদ এই বাজেট প্রস্তাবের উপর সমাপ্তি ভাষণ দেন। জনাব তাজউদ্দীন আহমদ বলেন যে, ২৭৮ কোটি ৯১ লক্ষ টাকা সম্পূরক বাজেটের মধ্যে ১১৯ কোটি ৫৮ লক্ষ ১১ হাজার টাকা হলাে চার্জ ও এক্সপেন্ডিচার। অতিরিক্ত ব্যয়ের পক্ষে মতাে প্রকাশ করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন যে, গােটা বাজেটের ব্যয়ের দিকে তাকালে এই ব্যয় তেমন কিছু নয়। তিনি বলেন সরকারকে রিলিফ খাতে অনির্ধারিত ব্যয় হিসেবে ছয় কোটি টাকার বেশি ব্যয় করতে হয়েছে। তিনি বাংলাদেশের মতাে যেসব দেশকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের অহরহ মােকাবেলা করতে হয় তাদের জন্য এটা একান্ত স্বাভাবিক। পরিবহন সমস্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে কোন জাহাজ ছিল না। পরবর্তী দুবছরের মধ্যে আমরা একটি ছােটখাটো নৌবহর তৈরি করেছি। তবে তা আমাদের প্রয়ােজন মেটানাের জন্য যথেষ্ট নয়। তিনি বলেন, দু’বছর পূর্বে প্রতিটন মাল বহনে যেখানে ৪৫ ডলার লাগত তার দুইবছর পর তা হয়েছে ৭০-৭২ ডলার। মন্ত্রী আরাে বলেন যে, প্রথমে দেশে কোন বিমান ছিল না এবং বৈদেশিক মুদ্রাও ছিল না, তবে এক্ষেত্রে দেশ এখন বেশ সামর্থ্য সঞ্চয় করেছে। মন্ত্রী আরাে বলেন যে, আন্তর্জাতিক বাজারে যে চালের টন ছিল ৭০ ডলার স্বাধীনতার পর তা হয়েছে ১০৫ ডলার এবং এখন তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে। চারশত ডলার। গমের মূল্যও বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২৪২ ডলার। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার এ অবস্থা সত্ত্বেও খাদ্যশস্য সংগ্রহ করে চলছেন। তিনি উল্লেখ করেন, ইতােমধ্যে বাংলাদেশের বন্দরে ২০ লক্ষ ৫০ হাজার টন খাদ্যশস্য পৌছে গেছে এবং আরাে আসছে। জনাব তাজউদ্দীন। শ্ৰী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ব্যাংক এবং জনাব আবদুল্লাহ সরকারের এত মন্ত্রী নিয়ােগ এবং জনাব আবদুস সাত্তারের স্বায়ত্তশাসিত সংস্থায় স্বায়ত্তশাসনের অভাব-এই জাতীয় অভিযােগের জবাব দেন। সম্পূরক বাজেট আলােচনা শুরু করেন শ্রী লারমা। তিনি বলেন, এই বিপুল চার্জ এক্সপেন্ডিচারের দায় শােধের দায়িত্ব দরিদ্র জনগণের উপরই পড়বে। তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন, এই অর্থ জনগণের কল্যাণে ব্যয় হয়েছে কিনা। তিনি বলেন এই ব্যয়ভার বহনের জন্য তা অন্য কোন সংস্থা থেকে সংগ্রহ করতে হয়েছে এবং তার জন্য সুদ দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, সম্ভবত এর দায় শােধ সাধারণ মানুষের উপর পড়ে। তিনি এই ধরনের চেষ্টা ত্যাগ করার পক্ষে মতাে প্রকাশ করেন। জনাব মইনউদ্দিন আহমেদ মানিক বলেন, তিনি গত বছরই বলেছিলেন এই ধরনের বাজেট দ্বারা জনগণের কল্যাণ হয় না। এবারও বলেছেন এর দ্বারা জনগণের কল্যাণ আসবে না।৭৮
রেফারেন্স: ২২ জুন, ১৯৭৪, দৈনিক ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত