ব্যর্থতার স্পষ্ট দলিল
ঢাকা: বাংলাদেশ জাতীয় লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য জনাব আতাউর রহমান অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদের প্রস্তাবিত বাজেটকে বর্তমান সরকারের ব্যর্থতার একটি স্পষ্ট দলিল বলে অভিহিত করেন। এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে তার মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে শুক্রবার তিনি বলেন, দেশের সমস্যা সমাধানে সরকার যে একান্তই অপারগ এ বাজেট দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, সমস্যা সমাধানের ইঙ্গিত এই বাজেটে নেই। বরং সমস্যা বৃদ্ধির আভাস দান করছে। বাজেট সম্পর্কে তিনি প্রশ্ন করেন, উন্নয়নের বাজেটের টাকা কোথা থেকে আসলাে? তার আভাষ তাে বাজেটে নেই। তাছাড়া বিদেশ থেকে অর্থ সাহায্যে আসার সম্ভাবনাও নেই। কেননা পূর্বে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিদেশি সাহায্য এসেছে এবং তা যে লুটপাট ও পাচার হয়ে গেছে তা বিদেশ জানে। তারা এখন পর্যন্ত সাহায্য দানের কোনাে প্রকার আভাষ দিচ্ছে না। জনাব আতাউর রহমান খান বলেন যে, বর্তমান বাজেটে উৎপাদন বৃদ্ধির কোনাে সুষ্ঠু পরিকল্পনা নেই। কেবল এই বলে অনুমান প্রকাশ করা হয়েছে যে, উৎপাদন বৃদ্ধি হতে পারে ইত্যাদি। সরকার মারাত্মক পাটনীতি অবলম্বন করেছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এর ফলে পাটের উৎপাদন হ্রাস পাবার আশংকা রয়েছে এবং তাহলে বৈদেশিক মুদ্রা আরাে কমে যাবে। জাতীয় লীগ প্রধান উল্লেখ করেন যে, চলতি বছর যে কৃষি উৎপাদন আশা করা গিয়েছিল তা হয়নি। বর্তমান বাজেটে এ সম্পর্কে যা উল্লেখ রয়েছে তাতে অনুমান করা যায় আগামী বছর উৎপাদন আরাে হ্রাস পাবে। তিনি বলেন, সেচ ব্যবস্থা আরাে ভেঙে পড়েছে। সারের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ তাে রয়েছেই। তিনি বলেন, এছাড়াও দেশের অর্থনীতির উপর আঘাত হানছে চোরাচালানীরা। তারা ইতােমধ্যে প্রায় ৪শ কোটি টাকার ধান চাল, দশ লক্ষ বেল পাট এবং অন্যান্য জিনিসপত্র সীমান্ত দিয়ে পাচার করে দিয়েছে। এর ফলে চালের ঘাটতি এত বেশি রয়েছে। বাজেটে কর আরােপ সম্পর্কে তিনি বলেন যে, চিনি, চা, সিমেন্ট, ঢেউটিন ইত্যাদির উপর যে বাড়তি কর ধার্য করা হয়েছে তা সাধারণ লােকের দুঃখের বােঝা আরাে বৃদ্ধি করবে। বাড়ি ভাড়ার উপর যে কর ধার্য করা হয়েছে তা পরােক্ষভাবে ভাড়াটিয়াদের উপর বর্তাবে। জনাব আতাউর রহমান খান বলেন যে, সরকার বাজেটে সমাজতন্ত্রের কথা উল্লেখ করলেও বাস্তব পরিকল্পনা ও কার্যকলাপে তা নেই। কালাে টাকা এবং অসৎ উপায়ে অর্জিত সম্পত্তি উদ্ধার সম্পর্কে বাজেটে কোনাে সুস্পষ্ট বক্তব্য নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।৭৬
রেফারেন্স: ২১ জুন, ১৯৭৪, দৈনিক পূর্বদেশ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত