You dont have javascript enabled! Please enable it! 1974.06.20 | বিভিন্ন মহলে নয়া বাজেটের প্রতিক্রিয়া | দৈনিক পূর্বদেশ - সংগ্রামের নোটবুক

বিভিন্ন মহলে নয়া বাজেটের প্রতিক্রিয়া

ঢাকা: বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষে সাধারণ সম্পাদক কমরেড মােহাম্মদ ফরহাদ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে নয়া বাজেটের সমালােচনা করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বাজেটে ৮৯ দশমিক ১৪ কোটি টাকার নতুন কর ধার্যের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই কর ধার্য করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী যুক্তি প্রদর্শন করেছেন যে, নয়া বাজেটে সুতা, পেট্রোল শিশুখাদ্যের উপর নতুন কর বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়নি। এবং আমদানি লাইসেন্স ফি শতকরা ২০ ভাগ বৃদ্ধির প্রস্তাব করলেও খাদ্যশস্য, সার, ভােজ্য তৈল, শিশুখাদ্য কাপড়, শশাধিত নারিকেল তৈল, ঔষধ প্রভৃতি এর আওতায় আসবে না বলে নতুন করের চাপ সাধারণ মানুষের উপর পড়বে না। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর এই যুক্তি বাস্তবে কার্যকরী হবে না এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। কারণ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির রেশ ও দ্রব্যমূল্যের স্থিতিশীলতা আনয়ন, বণ্টন ব্যবস্থার সুষ্ঠুকরণ ও মুনাফোখােরদের দমনে সরকার থেকে আজও কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তদপুরি রেলের ভাড়া বৃদ্ধি, চিনি, পােস্টকার্ড, সিমেন্ট, ঢেউটিন প্রভৃতির উপর কর বৃদ্ধি করা হয়েছে। আমদানী লাইসেন্স ফি শতকরা ২০ ভাগ বৃদ্ধি ও টিসিবির বার্ষিক মােট ব্যবসার উপর শতকরা ৫ ভাগ কর আরােপের বােঝা শেষ পর্যন্ত জনগণের উপরেই বর্তাবে। এছাড়া বাড়ির ভাড়াটিয়াদের স্বার্থ সংরক্ষণ না করে বাড়ি ভাড়ার উপর যে কর ধার্য করা হয়েছে তাও ভাড়াটিয়াদের বহন করতে হবে। কাজেই এই প্রস্তাবিত বাজেটের অন্য দিকগুলাে সম্পর্কে মন্তব্য না করেও একথা নিঃসন্দেহে বলা যাবে যে, সংকটে বিপর্যস্ত মানুষ এর ফলে আরাে গভীর সংকটের কবলে পড়বে। তিনি বলেন, গত ৮ জুন আমাদের পার্টির কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলী এক বিবৃতিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যে, সাধারণ মানুষের জীবনে। দুর্গতি বৃদ্ধি না পায় এবং করের বােঝা প্রত্যক্ষভাবে ধনীদের উপর যেন পড়ে তা লক্ষ্য রেখে বাজেট প্রণয়ন করা প্রয়ােজন। কিন্তু সরকার এ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বাজেট প্রণয়ন করেননি। প্রস্তাবিত বাজেটে সাধারণ মানুষের উপর করের বােঝা বাড়ানাে হয়েছে। অপরদিকে ধনীদের উপর করের বােঝা কার্যত মােটেই করে নাই। খাদ্যশস্যের মাত্রা অতিরিক্ত বৃদ্ধি, জোতদার ও ধনী কৃষকদের অকল্পনীয় মুনাফা লুণ্ঠনের সুযােগ করে দিয়েছে। কিন্তু এদের উপর মাত্র ৫ লক্ষ টাকা আয়কর বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। বাৎসরিক ৬০ হাজার টাকার ঊর্ধ্বে যাদের আয় তাদের উপর এক পয়সা কর বৃদ্ধির প্রস্তাবও করা হয়নি। অথচ মাসে ৮৩৩ টাকার উপর যাদের আয় এইসব মধ্যবিত্তের উপর শতকরা ৫ থেকে ১২ দশমিক ৫০ ভাগ প্রত্যক্ষ আয়কর বসানাে হয়েছে। এর উপর মন্তব্য নিষ্প্রয়ােজন। উৎপাদন, বণ্টন প্রভৃতি ক্ষেত্রে অবস্থার উন্নতির কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যবস্থা না করে সরকার কার্যত সংকটের বােঝা জনসাধারণের কাঁধে চাপিয়ে দেয়ার যে রাস্তা গ্রহণ করেছেন তাতে জাতীয় জীবনে সংকটই শুধু বৃদ্ধি পাবে।৭৩

রেফারেন্স: ২০ জুন, ১৯৭৪, দৈনিক পূর্বদেশ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত