You dont have javascript enabled! Please enable it! 1974.06.17 | ৩০ জুন প্রথম জেহাদ: ভাসানী-ন্যাপের কর্মীসভায় মওলানা ভাসানী | দৈনিক পূর্বদেশ - সংগ্রামের নোটবুক

৩০ জুন প্রথম জেহাদ: ভাসানী-ন্যাপের কর্মীসভায় মওলানা ভাসানী

ঢাকা: ন্যাপ প্রধান মওলানা ভাসানী সরকারের বিরুদ্ধে দেশে মারাত্মক খাদ্য সংকট সৃষ্টি, শাসনতন্ত্রে ঘােষিত গণতান্ত্রিক অধিকার ও বাক স্বাধীনতা হরণের অভিযােগ করেছেন। তিনি বলেন, ৩০ জুন থেকে প্রথম জেহাদের মাধ্যমে নতুন যুগ, নতুন অধ্যায় শুরু হবে। যেকোন মূল্যে, যে কোন বিনিময়ে সেদিন পল্টনে সভা হবে। সর্বদলীয় ঐক্যফ্রন্ট আহূত ৩০ জুনের জনসভাকে সাফল্যমণ্ডিত করার লক্ষ্যে সােমবার ইসলামিক একাডেমিতে আয়ােজিত ন্যাপের ঢাকা শহর শাখার এক কর্মীসভায় মওলানা ভাসানী ভাষণ দিচ্ছিলেন। আগামী ৩০ জুনের সভাকে ‘প্রথম জেহাদ’ বলে অভিহিত করে বয়ােবৃদ্ধ জননেতা বলেন, রােগে মরতে চাই না। পল্টনের জনসভায় অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করে যদি মৃত্যুবরণ করতে পারি তবে তা আমার সৌভাগ্য, আপনারা দোয়া করবেন। দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্যে শেষ বিন্দু রক্ত থাকা পর্যন্ত সংগ্রাম চালানাের জন্য তিনি ন্যাপ কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। মানুষের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থানের নিরাপত্তা বিধান এবং কৃষি, শিল্প, ব্যবসায় ইত্যাদির প্রসার ও উন্নতি সরকারের দায়িত্ব হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকার তা করতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে মওলানা অভিযােগ করেন। দেশে ভয়াবহ খাদ্য সংকট মােকাবিলার জন্যে ইতােপূর্বে সর্বদলীয় সম্মেলনের জন্য আমার প্রস্তাবও সরকার রাখেনি। এ প্রসঙ্গে মওলানা বলেন, সরকার যদি সব সমাধান করতে পারতাে তবে ৯৩ বছর বয়সে আজকে আমাকে আন্দোলন করতে হত না। মওলানা ভাসানী বলেন, ‘পশ্চিমাদের সাথে আমাদের লড়াই ছিল গণতন্ত্রের লড়াই। সংখ্যানুপাতে অধিকার আদায় ছিল মূল ভিত্তি। লাখ লাখ মানুষের ত্যাগ, তিতিক্ষা, মৃত্যুর বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে আজ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দুই-ই বিপর্যস্ত।’ মওলানা ভাসানী বলেন, এককালে ২২ টাকা মণ দরে চালের বিরুদ্ধে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সভা করেছি। আজ ২০০ টাকা মণ দরে চাল কিনতে না পেরে দেশের মানুষ যেখানে গলায় দড়ি দিয়ে মরছে সেখানে খাদ্যের দাবীতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গকে বাধা দেয়ার কোন অধিকার সরকারের নেই।
পাচার প্রসঙ্গে: সারা বাংলাদেশে বিশেষত উত্তরবঙ্গে এ বছর দৃষ্টান্তমূলক খাদ্য উৎপাদিত হয়েছে উল্লেখ করে ন্যাপ প্রধান বলেন, আমি বিশ্বাস করি যদি ভারতের মাড়ােয়ারীদের কারসাজিতে সীমান্তের ওপারে পাচার না হত তবে দেশে এ ধরনের খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষ হতাে না। বর্তমানে ইলিশ মাছ ১৫ টাকার উর্ধ্বে বিক্রি হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি পদ্মা মেঘনা যমুনার মাছ সীমান্তের ওপারে পাচার বন্ধ করে দেয়া যায় তবে ৭ দিনের মধ্যে ইলিশ মাছের দাম ২ টাকায় নেমে আসবে। বর্তমানে রৌমারী সীমান্ত দিয়ে মাড়ােয়াড়ীরা লবণের বিনিময়ে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য নিয়ে যাচ্ছে বলে মওলানা ভাসানী অভিযােগ করেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এভাবে চালের পাচার অব্যাহত থাকলে ভাদ্র কার্তিকে চালের দাম আরাে বাড়বে।
গিরিকে সংবর্ধনা দিতাম: মওলানা ভাসানী বলেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের প্রেসিডেন্ট আমাদের দেশে এসেছেন কিন্তু আমাদের ডাকা হয়নি। ডাকা হলে আমরা তাকে সম্বর্ধনা জানাতাম। কিন্তু তাকে এ কথা জানিয়ে দিতাম (১) বাংলাদেশ থেকে ভারতের সৈন্যরা যে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার অস্ত্রশস্ত্র সহ গাড়ি, লরী, জিপ ও অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ নিয়ে গেছে তা অতিসত্বর ফিরিয়ে দিতে হবে। (২) বেরুবাড়ি বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ রেডক্লিফ দিয়ে গেছে, নেহরু দিয়ে গেছে, শাস্ত্রী দিয়ে গেছে, ভারতের প্রখ্যাত আইনজ্ঞরা দিয়ে গেছে সেই বেরুবাড়িকে ফিরিয়ে দিতে হবে। এ ছাড়া মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মুর্শিদাবাদ ও করিমগঞ্জও দিতে হবে, (৩) দেশের একার পক্ষে সম্ভব নয়, ভারত সরকারকে মাড়ােয়াড়ীদের কঠোর হস্তে দমন ন্টকরে সীমান্তের চোরাচালান বন্ধ করতে হবে। (৪) তােমরা, মুজিব ও কতিপয় মানুষের বন্ধুত্ব চাও, না সাড়ে ৭ কোটি জনগণের বন্ধুত্ব চাও?৫৭

রেফারেন্স: ১৭ জুন, ১৯৭৪, দৈনিক পূর্বদেশ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত