You dont have javascript enabled! Please enable it!

নিরাপত্তা পরিষদে সর্বসম্মত প্রস্তাব, চীন প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক গড়ে তুলতে প্রস্তুত

জাতিসংঘ: বিশ্ব সংস্থার সদস্য হিসেবে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ জানিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ আজ সর্বসম্মতিক্রমে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন। অন্তর্ভুক্তি সংক্রান্ত নিরাপত্তা পরিষদ স্ট্যান্ডিং কমিটির এই প্রস্তাবটি ১৫ সদস্য বিশিষ্ট পরিষদে বিনা ভােটে গৃহীত হয়। এবার একজন সদস্য বিশ্ব সংস্থায় বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির বিরােধিতা করেনি। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন শুরুর পর পরই বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির এই প্রস্তাবটি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমােদন করা হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
সর্বত্র অভিনন্দন: প্রস্তাবটি বিনা বাধায় গৃহীত হওয়ায় নিরাপত্তা পরিষদের এ মাসের সভাপতি মৌরিতানিয়ার রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের প্রতি অভিনন্দন জানিয়েছেন।
চীনা চার্জ দ্য এফেয়ার্স: চীনা চার্জ দ্য এফেয়ার্স তাঁর ভাষণে বলেন, উপমহাদেশের পরিস্থিতির সুস্পষ্ট উন্নতি লক্ষ্য করে তাঁর সরকার তার প্রতি অভিনন্দন জানিয়েছে। তিনি উপমহাদেশের সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রস্তাব বাস্তবায়নের কথাও উল্লেখ করেন। চীনা প্রতিনিধি বলেন, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ভিত্তিতে ও জনগণের মধ্যকার ঐতিহ্যবাহী মৈত্রী সম্পর্ককে আরাে জোরদার করার উদ্দেশ্যে তাঁর সরকার উপমহাদেশের রাষ্ট্রগুলাের সাথে প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক গড়ে তুলতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, চীন সরকার সব সময়ই কর্তৃত্ববাদ ও সম্প্রসারণবাদের বিরুদ্ধে দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের সংগ্রামকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে এসেছে। পরিশেষে তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, উপমহাদেশের রাষ্ট্রগুলি বৈদেশিক হস্তক্ষেপের অবসান ঘটাবার জন্য আরাে দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে এবং সমতা ও সার্বভৌমত্বের নীতির ভিত্তিতে একে অপরের সাথে মিলে-মিশে। বসবাস করবে।
ইন্দোনেশিয়া: ইন্দোনেশীয় প্রতিনিধি বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাবকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, বিশ্বসংস্থায় বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি বিশ্বশান্তিকে জোরদার করার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। ভারত, ভুটান, পাকিস্তান ও আলজিরিয়ার পক্ষ থেকেও নিরাপত্তা পরিষদের এই প্রস্তাবের প্রতি অভিনন্দন জানানাে হয়।
জ্যাকব মালিক: সােভিয়েত দূত মি. জ্যাকব মালিক জাতিসংঘে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে তাঁর সরকারের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন এবং বলেন যে, ইচ্ছাকৃতভাবে কৃত্রিম বাধা সৃষ্টি করেও বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি ঠেকাতে পারেনি। তিনি আরও বলেন, শিগগিরই বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা বিশ্বসংস্থায় তাদের স্থান দখল করবেন এবং এর কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করবেন। পরিষদ কক্ষে উপস্থিত বাংলাদেশের অস্থায়ী পররাষ্ট্র সচিব জনাব ফকরুদ্দীন আহম্মেদ ও স্থায়ী পর্যবেক্ষক জনাব এস এ করিমকে মি. মালিক অভিনন্দন জানান। মি. মালিক বলেন, এ বছর বিশ্ব রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নেতৃবর্গ উপমহাদেশে শান্তির নিশ্চয়তা বিধানের উদ্দেশ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছেন। প্রসঙ্গত তিনি সিমলা ও দিল্লি চুক্তির কথা উল্লেখ করেন।
মালিক বলেন যে, গত ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ যখন সদস্যপদের জন্য আবেদন করে তখনই তাকে সদস্যপদ দেয়া যুক্তিসঙ্গত ছিল। কারণ শতাধিক দেশ তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। জন্মের পর থেকে রাশিয়া এই নবীন রাষ্ট্রকে সাহায্য করার যে সব ব্যবস্থা নিয়েছে তিনি তা বর্ণনা করেন। মালিক বলেন যে, এই সাহায্য নিঃস্বার্থ এবং জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেলও তা লক্ষ্য করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র: মার্কিন প্রতিনিধি উইলিয়াম ই শাফল বক্তৃতা প্রসঙ্গে বিভিন্ন অমীমাংসিত প্রশ্নের ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রনায়কসুলভ ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭২ সালের এপ্রিলেই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। নিরাপত্তা পরিষদের অনুমােদন দানে অস্বাভাবিক বিলম্বের জন্য তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।২৮

রেফারেন্স: ১০ জুন, ১৯৭৪, দৈনিক পূর্বদেশ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!