You dont have javascript enabled! Please enable it! 1974.06.03 | রাষ্ট্রপতির প্রশ্নে সরকার ও বিরােধী পক্ষের তুমুল বিতর্ক | দৈনিক পূর্বদেশ - সংগ্রামের নোটবুক

রাষ্ট্রপতির প্রশ্নে সরকার ও বিরােধী পক্ষের তুমুল বিতর্ক

সংসদ ভবন: সােমবার বিকাল ৩ টায় জাতীয় সংসদ ভবনে ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশন শুরু হলে রাষ্ট্রপতির প্রশ্নে সরকার ও বিরােধী পক্ষের মধ্যে তুমুল বাক বিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। প্রশ্নটি উত্থাপন করেন বিরােধী পক্ষের সদস্য জনাব কামরুল ইসলাম মাে. সালাহউদ্দিন। তিনি মাননীয় স্পীকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, রাষ্ট্রপতি জনাব মােহাম্মদ উল্লা বর্তমানে ভুটানে রাষ্ট্রীয় সফরে রয়েছেন। রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতিতে শাসনতন্ত্র অনুসারে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির কাজ সম্পাদন করার কথা জনাব আবদুল মালেক উকিলের, তাহলে স্পীকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন কিনা জনাব সালাহ উদ্দিন তা জানতে চান। জনাব সালাহ উদ্দিনের এই প্রশ্ন নিয়ে পরিষদে তুমুল বিতর্কের সূত্রপাত হয়। আইন ও পার্লামেন্ট বিষয়ক মন্ত্রী শ্রী মনােরঞ্জন ধর তখন এর জবাব দেন। তিনি বলেন, শাসনতন্ত্র অনুসারে স্পীকার পরিষদ চালাতে পারেন। কিন্তু জনাব সালাহ উদ্দিন তা মানতে রাজি হন না। তিনি স্পষ্ট করে জানতে চান মাননীয় স্পীকার এখন কোন দায়িত্ব সম্পাদন করছেন। তিনি যদি স্পীকারের দায়িত্ব সম্পাদন করেন তবে রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতিতে তার দায়িত্ব পালন করবেন কে? সরকার দলীয় সদস্য এবং খাদ্য। প্রতিমন্ত্রী আমিরুল ইসলামও জনাব সালাউদ্দিনের প্রস্তাব সমর্থন করেন। তিনি শাসনতন্ত্রের ধারা পড়ে শুনিয়ে বলেন, সমস্যাটি এড়িয়ে যাবার মতাে বিষয় নয়। জনাব ইসলাম এ ব্যাপারে একটি ব্যাখ্যা দাবী করেন। মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব মিজানুর রহমান চৌধুরী এখন আরাে স্পষ্ট ভাষায় জনাব স্পীকারের নিকট জানতে চান, রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতিতে তার কার্যক্রম সম্পাদন করেছেন কে? যদি স্পীকার তার দায়িত্বভার গ্রহণ করে থাকেন তখন তিনি স্পীকার হিসেবে সংসদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন কিনা? রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জনাব নুরুল ইসলাম চৌধুরী এ সম্পর্কে ব্যাখ্যা দাবী করেন। যােগাযােগ প্রতিমন্ত্রী জনাব নুরুল ইসলাম মঞ্জুরও এ সম্পর্কে আলােচনায় অংশ নেন। জনাব আসাদুজ্জামান খান দাঁড়িয়ে স্পীকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, এ প্রশ্নটি নিয়ে যে শাসনতান্ত্রিক জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে তার একটি সঠিক ও শাসনতান্ত্রিক ব্যাখ্যা প্রদানের প্রয়ােজন রয়েছে। এ কারণে তিনি অধিবেশন মুলতবী ঘােষণার দাবী জানান। মাননীয় স্পীকার জনাব আবদুল মালেক উকিল তখন বিকেল ৫টা পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবী ঘােষণা করেন। ৫টা পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবী থাকলেও পুনরায় অধিবেশন শুরু হতে ৫:৫০ বেজে যায়। মুলতবীর পরে প্রবীণ সংসদ সদস্য জনাব আতাউর রহমান খান বক্তৃতায় অংশ নেন। তিনি বলেন সেহেতু রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতিতে স্পীকার দায়িত্বভার পালন করেন যেহেতু তিনি সংসদের অধিবেশন পরিচালনা করতে পারেন না। তিনি সংসদে যে সব কাজ হয়েছে তার মধ্যে পবিত্র কোরআন, গীতা ও ত্রিপিটক পাঠ ছাড়া সবই বিধি বহির্ভূত কাজ। তিনি শপথ পাঠ না। করার কারণে একজন সদস্যকে বের করে যেতে বলার ঘটনাকে ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেন। মাননীয় স্পীকার জনাব আতাউর রহমান খানের বক্তব্যের জবাবে বলেন, তিনি কেবল স্পীকার, রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করার কাজ তার নয়। তিনি নিজে ক্ষমতা নিতে পারেন না বলে সংসদে জানান। জনাব স্পীকার বলেন, কেবলমাত্র সরকার আহ্বান করলেই তিনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব অস্থায়ীভাবে গ্রহণ করতে পারেন। তখন সরকার দলীয় সদস্য জনাব আসাদুজ্জামান খান। বিষয়টির শাসনতান্ত্রিক ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য উঠে দাঁড়ান। তিনি শাসনতন্ত্রের ৫৪ অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যা প্রদান করে বলেন, শাসনতন্ত্রে এ কথা বলা হয়নি যে, রাষ্ট্রপতি দেশে অনুপস্থিত থাকলেই স্পীকার তার দায়িত্বভার গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি যখন তার দায়িত্ব পালনে। অক্ষমতা প্রকাশ করেন ঠিক তখনই কেবল অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিতে পারেন। বেসরকারি সদস্য জনাব সালাহ উদ্দিন তখন জানতে চান, রাষ্ট্রপতি ভুটান থেকে কি করে তার দায়িত্বভার সম্পাদন করবেন। জনাব স্পীকার তখন আইনমন্ত্রীকে তার জবাব দিতে বলেন। আইনমন্ত্রী শ্রী মনােরঞ্জন ধর তখন আসাদুজ্জামানের বক্তব্য সমর্থন করে বলেন, রাষ্ট্রপতি তার দায়িত্বের অক্ষমতা প্রকাশ করলেই কেবল স্পীকার অস্থায়ীভাবে রাষ্ট্রপতি হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে পারেন। আইনমন্ত্রীর এই বক্তব্য হাউস মেনে নেন। কিন্তু বিরােধী দলীয় সদস্যরা তা মানতে রাজী নন। ফলে তারা পরিষদ কক্ষ ত্যাগ করেন।৯

রেফারেন্স: ৩ জুন, ১৯৭৪, দৈনিক পূর্বদেশ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত