You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলাদেশের জাতিসংঘভুক্তির প্রশ্ন চুড়ান্ত পর্যায়

জাতিসংঘ: বাংলাদেশের সদস্যভুক্তির প্রশ্নে আজ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের মতামত নেয়া হবে বলে কূটনৈতিক মহল সূত্রে রাতে জানা গেছে। নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্ট কেনিয়ার সাবেক রাষ্ট্রদূত চার্লস গ্যাটের মায়না এখানে তার প্রেসিডেন্ট চেম্বারের এই প্রশ্ন বিবেচনার জন্য কতিপয় সদস্যকে মিলিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বলে প্রকাশ। যদি ১৫ সদস্য বিশিষ্ট নিরাপত্তা পরিষদ জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভের পক্ষে রায় দেয় তাহলে আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর ১৩৬তম সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ জাতিসংঘে যােগ দেবে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হােসেন জাতিসংঘ সেক্রেটারি জেনারেল ড. কুট ওয়ার্ল্ডহেইমের কাছে পাঠানাে এক চিঠিতে নিরাপত্তা পরিষদে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভের বিষয় পুনরায় বিবেচনা করার অনুরােধ করেছেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী পর্যবেক্ষক জনাব এম এ করিম নিউইয়র্কে ড. কামাল হােসেন এই চিঠিটি ওয়াও হাইসের কাছে হস্তান্তর করেন বলে পররাষ্ট্র দফতরের একজন মুখপাত্র ঢাকায় তথ্য প্রকাশ করেন। ড. কামাল হােসেন তার চিঠিতে জাতিসংঘে অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে বাংলাদেশের ইচ্ছার কথা পুনরায় ব্যক্ত করেছেন। কারণ তাহলে বাংলাদেশ বিশ্ব সংস্থা হাসিলে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করতে পারবে। এখানে আরও উল্লেখ করা যেতে পারে যে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভের জন্য ১৯৭২ সালের ৮ আগস্ট আবেদন পেশ করে। ঐ বছর ২৫ আগস্ট নিরাপত্তা পরিষদের মােট ১৫ সদস্যের মধ্যে ১১টি সদস্য বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভের পক্ষে ভােট দেয়। একমাত্র চীন বিরুদ্ধে ভেটো প্রয়ােগ করে এবং অন্য ৩টি দেশ ভােট দানে বিরত থাকে। জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদও ১৯৭২ সালের ৩১ ডিসেম্বর জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভের যােগ্যতার পক্ষে একটি সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব গ্রহণ করেন। যথাশীঘ্র সম্ভব জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভ করা উচিত বলে সাধারণ পরিষদ সর্বসম্মত মতাে প্রকাশ করেন। জাতিসংঘের বাইরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও ইতােমধ্যেই এই ব্যাপারে মতাে প্রকাশ করেছেন। গত বছর আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত ৪র্থ জোটনিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলনে বিশ্ব সংস্থায় বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভে সর্বসম্মতভাবে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। জাতিসংঘের সকল সংস্থা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভ করায় এটাই সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশকে গ্রহণ করেছে। পর্যবেক্ষকগণ মনে করেন যে, জাতিসংঘে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি হচ্ছে সবচেয়ে যুক্তিসম্মত ব্যাপার। কারণ ১১৮ টি জাতিসংঘ সদস্যসহ মােট ১২৪টি দেশ বাংলাদেশের প্রতি স্বীকৃতি জানিয়েছে। তাছাড়া যেসব সংস্থা বাংলাদেশকে গ্রহণ করেছে সেসব সংস্থার সদস্যগণও জাতিসংঘের সদস্য। শান্তি প্রতিষ্ঠা ও আন্তর্জাতিক সহযােগিতার জন্য বাংলাদেশের যােগ্যতা ও ঐকান্তিক ইচ্ছা বেশ কয়েকবার প্রদর্শিত হয়েছে। দিল্লিতে সম্প্রতি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর, গত বছর ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশ-ভারত যুক্ত ইশতেহার এবং উপমহাদেশের শান্তি কল্যাণে বাংলাদেশ গৃহীত পদক্ষেপের প্রতি বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ও নেতৃবৃন্দ অভিনন্দন জানিয়েছেন। বিভিন্ন দেশের সাথে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিশেষ করে তার প্রতিবেশী দেশসমূহ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশসমূহ মধ্যপ্রাচ্য দেশগুলাের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযােগিতার সাথে অবদান রাখার ব্যাপারে বাংলাদেশের বাস্তব ও ঐকান্তিক ইচ্ছার কথাই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশের বাস্তব ভূমিকার পরিপ্রেক্ষিতে পর্যবেক্ষকগণ বলেন যে, বিশ্ব সংস্থা নীতিবিধি তথা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ইচ্ছানুযায়ী জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ দেয়া হলে বাংলাদেশ শান্তি, সহযােগিতা, সমঝােতার স্বার্থে আরও অবদান রাখতে সক্ষম হবে।৬১

রেফারেন্স: ১৭ মে, ১৯৭৪, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!