You dont have javascript enabled! Please enable it!

তেজগাঁয়ে বঙ্গবন্ধুকে বীরােচিত সংবর্ধনা

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ-ভারত আলােচনা বৈঠক সম্পূর্ণ সফল এবং ফলপ্রসূ বলে বর্ণনা করেছেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, আলােচনায় ফলাফলে আমার দিক থেকে আমি সন্তুষ্ট। বঙ্গবন্ধু বৃহস্পতিবার ৫দিনব্যাপী ভারত সফরশেষে ঢাকা প্রত্যবর্তনের পর বিমানবন্দরে ভি আই পি লাউঞ্জে সাংবাদিকদের সাথে আলােচনা করছিলেন। বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের জানান, তারা সকল দ্বিপাক্ষিক এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াদি নিয়ে আলােচনা করেছেন। দুই দেশের দৃষ্টিভঙ্গিকে তিনি অভিন্ন বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন দু’দেশই জোটনিরপেক্ষ এবং স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বাস করে। প্রসঙ্গত উল্লেখযােগ্য যে, বঙ্গবন্ধু এ মাসের ১২ তারিখে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি গান্ধীর আমন্ত্রণে সরকারিভাবে ৫ দিনব্যাপী ভারত সফরে যান। এ সময়ে তারা ৫ দফা বৈঠকে মিলিত হন এবং বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়াদি নিয়ে আলােচনা করেন এবং একটি যুক্ত ইশতেহারে স্বাক্ষর দান করেন। বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু ঢাকা প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে দুপুরের পর থেকেই তেজগাঁও বিমান বন্দরের আশেপাশে শত শত লােক তাদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে স্বাগত জানানাের জন্য সমবেত হন। সন্ধ্যা ৬ টা ৪০ মিনিটে বঙ্গবন্ধুর বিশেষ বিমান বলাকাকে আকাশে দেখার সাথে সাথে সমবেত জনতা উল্লাসে ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু জিন্দাবাদ’ প্রভৃতি ধ্বনিতে বিমানবন্দরের আকাশ বাতাস মুখরিত করে ফেলেন। সামরিক বাহিনীর বিশেষ বিমান বলাকা বিমানবন্দরে অবতরণের পর মন্ত্রিসভার প্রবীণ সদস্য ও অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম তাকে সর্বাগ্রে স্বাগত জানান। বঙ্গবন্ধু তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে দুই হাত তুলে বিমানের বাইরে বেরিয়ে এলে বিমানবন্দরে ও এর বাইরে সমবেত জনতা আনন্দে হাততালি দিয়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধু দুই হাত তুলে জনতার উল্লাসের জবাব দেন। এরপর মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যদের সাথে তিনি আন্তরিকভাবে মিলিত হন এবং বিভিন্ন দূতাবাসের কূটনৈতিক প্রধান এবং আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সাথে মিলিত হন। বঙ্গবন্ধু যখন বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে আসেন তখন সমবেত হাজার হাজার জনতা এবং আওয়ামী লীগ কর্মী। শ্লোগানে স্লোগানে চারদিক আচ্ছন্ন করে ফেলে। বঙ্গবন্ধুর সাথে একই বিমানে করে বাণিজ্যমন্ত্রী খােন্দকার মােশতাক আহমদও ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেন। এর আগে বিমান বন্দরে ভি আই পি লাউঞ্জে বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের সাথে আলাপ প্রসঙ্গে বলেন, দু’দেশের ঘােষণাপত্র সম্পূর্ণ সন্তোষজনক হয়েছে। তিনি বলেন, এতে আপনারা গ্রহণযােগ্য ফলাফলই লক্ষ্য করবেন। দু’দেশের মধ্যে এ জাতীয় আরাে আলােচনা হবে কিনা সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা উভয়ই সৎ প্রতিবেশী এবং ভারত আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী রাষ্ট্র। যখন প্রয়ােজন দু’দেশের মধ্যে আলােচনা হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ সব সময় আলােচনায় বিশ্বাস করে এবং মনে করে আলােচনার মাধ্যমেই সব সমস্যা সমাধান সম্ভব। তিনি বলেন, কেবল ভারত নয় সবার ক্ষেত্রেই এই নীতি প্রযােজ্য। বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের কাছে ভারত সরকার এবং ভারতবাসীর আতিথেয়তার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী এবং ভারতের জনগণ সব সময় বাংলাদেশের অগ্রগতি কামনা করে। বঙ্গবন্ধু প্রসঙ্গত বাংলাদেশ এবং বিভিন্ন উন্নয়নগামী দেশের সাধারণ সমস্যাবলী নিয়ে আলােচনা করেন। তিনি বলেন, তেল ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়ােজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য বৃদ্ধির ফলে সব দেশই সমস্যায় পড়েছে। কিন্তু তিনি দৃঢ় আশা প্রকাশ করেন যে, যদি জনগণ ভালােবাসা, সততা এবং একাগ্রতা নিয়ে কাজ করে যায় তবে সব সমস্যারই সমাধান করতে সক্ষম হবে।৫৮

রেফারেন্স: ১৬ মে, ১৯৭৪, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!