You dont have javascript enabled! Please enable it!

ভারতে পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বঙ্গবন্ধু আজ দিল্লি যাচ্ছেন

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারতে ৫ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরের জন্য আজ রােববার সকালে বিশেষ বিমান যােগে নয়াদিল্লির উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর আমন্ত্রণ ক্রমে বঙ্গবন্ধু ভারতে সরকারি সফরে যাচ্ছেন। নয়াদিল্লিতে অবস্থানকালে বঙ্গবন্ধু শ্রীমতি গান্ধীর সাথে দুদেশের পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে কয়েক দফা গুরুত্বপূর্ণ আলােচনায় মিলিত হবেন বলে জানা গেছে। এ সফরে বঙ্গবন্ধুর সাথে যাচ্ছেন বাণিজ্য ও বৈদেশিক বাণিজ্যমন্ত্রী খােন্দকার মােশতাক আহমদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হােসেন এবং পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল ইসলাম। প্রধানমন্ত্রীর সাথে উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাসহ ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল নয়াদিল্লি যাচ্ছেন। উল্লেখ্য যে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য অধ্যাপক রেহমান সােবহানের নেতৃত্বে ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধিদল বঙ্গবন্ধুর এ সফর সংক্রান্ত ব্যাপারে আগে থেকেই ভারতের রাজধানীতে অবস্থান করছেন। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারতে অবস্থানকালে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সাথে ৫-দফা আলােচনা বৈঠকে মিলিত হবেন। দুইনেতা মােট সাড়ে ১০ ঘণ্টা আলােচনা করবেন। আশা করা হচ্ছে দুই প্রধানমন্ত্রী বৈঠককালে উপমহাদেশে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে একটি যুক্ত কর্মকৌশল উদ্ভাবন করবেন। বার্তা সংস্থার খবরে প্রকাশ, ১১ সদস্যের যে অগ্রবর্তী দলটি গত ৭ মে নয়াদিল্লি গিয়ে পৌঁছেছে তারা শীর্ষ বৈঠকের প্রস্তুতির জন্যে ইতােমধ্যে ভারতীয় কর্মকর্তাদের সাথে কয়েক দফা বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। ইতােপূর্বে দুই প্রধানমন্ত্রীর শীর্ষ বৈঠক সিমলায় অনুষ্ঠিত হবে বলে স্থির হয়েছিল। কিন্তু ভারতে রেল ধর্মঘটের কারণে শীর্ষ বৈঠকের স্থান পরে নয়াদিল্লিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আগামী ১৬ মে ঢাকা প্রত্যাবর্তন করবেন।
সফরের গুরুত্ব: রাজনৈতিক মহল প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এ ভারত সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন। ওয়াকেফহাল মহলের মতে উভয় দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সাথে বিস্তারিত আলােচনা করে বিষয় দুটির সমাধান বের করার চেষ্টা করবেন। বিষয় দুটির একটি হচ্ছে ফারাক্কা বাঁধের ফলে উদ্ভূত গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন সমস্যা এবং অপরটি হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ব্যাপক চোরাচালান নিরােধের উপায় উদ্ভাবন। ওয়াকিফহাল মহল মনে করেন, বঙ্গবন্ধুর সাথে এ সফরে অন্যান্যের মধ্যে বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী সাবেক বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানিসম্পদ মন্ত্রী খােন্দকার মােশতাক আহমদ অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এটা সহজেই অনুমান করা যায় যে, ফারাক্কা প্রশ্ন অর্থাৎ গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন সমস্যার সমাধান দুই প্রধানমন্ত্রীর আলােচনায় বিশেষ গুরুত্ব লাভ করবে। স্মরণ থাকতে পারে যে, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানিসম্পদ দফতরের মন্ত্রী থাকাকালে খােন্দকার মােশতাক আহমদ নয়াদিল্লি সফর করে গঙ্গার পানি বণ্টন প্রশ্নে ভারতের তৎকালীন সেচ ও পানিসম্পদ মন্ত্রী ড. কে এল রাও এর সাথে বিস্তারিত আলােচনা করেছিলেন। খােন্দকার মােশতাক সে সময় এ ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং এর সঙ্গে আলােচনা করেন। কিন্তু কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে তারা ব্যর্থ হন। তারা তখন স্থির করেন যে, দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীদ্বয় সরাসরি আলােচনা করে গঙ্গার পানি বণ্টন সমস্যার চূড়ান্ত মীমাংসা সূত্র উদ্ভাবন করবেন।
নয়াদিল্লিতে বিপুল সংবর্ধনার প্রস্তুতি: নয়াদিল্লিতে বঙ্গবন্ধুকে বিপুল সংবর্ধনা জ্ঞাপনের আয়ােজন নেয়া হয়েছে বলে এখানে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী দিল্লি বিমান বন্দরে বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানাবেন। বঙ্গবন্ধুর বিশেষ বিমানটি দিল্লি বিমান বন্দরে অবতরণের সাথে সাথে ২১ বার তােপধ্বনি করা হবে। বিমানবন্দরে ভারতের তিনটি সামরিক বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গার্ড অব অনার প্রদান করবে। নয়াদিল্লিতে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে অবস্থান করবেন।৩৯

রেফারেন্স: ১২ মে, ১৯৭৪, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!