সাংবাদিক সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রীর তথ্য প্রকাশ
ঢাকা: বন, মৎস্য এবং পশু পালন দফতরের প্রতিমন্ত্রী জনাব রিয়াজউদ্দিন আহমদ বলেছেন, আগামী পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় দেশের বন, মৎস্য এবং পশুসম্পদের উন্নয়ন ও রক্ষাকল্পে সরকার ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আগামী ৫ বছরের মধ্যে মৎস্য ও হাঁস-মুরগী এবং আগামী ১০ বছরের মধ্যে বনসম্পদে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। প্রতিমন্ত্রী জনাব রিয়াজউদ্দিন আহমেদ সকালে স্বীয় কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পূর্বে অতীতের কোন সরকারের আমলেই বন, মৎস্য এবং পশুসম্পদের উন্নয়ন ও রক্ষাকল্পে প্রাধান্য দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, স্বাধীনতা লাভের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বন, মৎস্য এবং পশুসম্পদের উন্নয়ন রক্ষাকল্পে একটি পৃথক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এমনকি পরবর্তীকালে তা নিজের হাতেই এ দফতরের দায়িত্ব রাখেন। তিনি বলেন, বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তিনি শুধু দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
বনসম্পদ: প্রতিমন্ত্রী জনাব রিয়াজউদ্দিন আহমেদ বনসম্পদের প্রয়ােজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বলেন, দেশে শতকরা ২৫ ভাগ বনসম্পদ যেখানে প্রয়ােজন সেখানে মাত্র শতকরা ১ ভাগ বন সম্পদ রয়েছে। তিনি জানান সরকার দেশের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকালে অন্ততপক্ষে শতকরা ২৫ ভাগ বন সৃষ্টি করার কর্মসূচি গ্রহণ করছেন। তিনি বলেন, উপরােক্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের কয়েকটি স্থানে সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ২২ হাজার একর জমিতে নতুন বন সৃষ্টি করা হবে। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে আরাে ৫ হাজার একর জমিতে বন সৃষ্টি করার পরিকল্পনা সরকার গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, বনসম্পদের উন্নয়নের জন্য ৫৯ টি নার্সারী হলে অল্পমূল্যে জনসাধারণের মধ্যে চারা বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে কাঁঠাল, আম, তেঁতুল এবং পেয়ারার চারা রয়েছে যা বাড়ির আশেপাশে এবং রাস্তার দুপাশে লাগানাে যাবে। জনাব রিয়াজউদ্দিন আহমেদ বলেন, বনসম্পদ রক্ষাকল্পে সরকার প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে বনসম্পদ কাটা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তিনি জানান এর ফলে কিছু কিছু জায়গায় উপকারও পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, স্থানীয়ভাবে এবং বিভাগীয় পর্যায়ে বনসম্পদের উন্নয়ন ও রক্ষাকল্পে পরামর্শদাতা কমিটি রয়েছে। তিনি বলেন, বনসম্পদ এলাকায় বেদখলকারীদের উচ্ছেদ অভিযান সাফল্যের সাথে এগিয়ে চলছে।
মৎসসম্পদ: প্রতিমন্ত্রী জনাব রিয়াজউদ্দিন আহমেদ দেশের মৎস্যসম্পদ উন্নয়নের প্রয়ােজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বলেন, অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করেও বিদেশে মৎস্য রপ্তানি করে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান চলতি বছরে ভারতে সাড়ে ৩ কোটি টাকার মৎস্য রপ্তানির যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল তার মধ্যে এ পর্যন্ত দেড় কোটি টাকার মৎস্য রপ্তানি শেষ হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী অবশিষ্ট ২ কোটি টাকার মৎস্য রপ্তানি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই হবে বলে তিনি জানান। তিনি জানান অন্যান্য দেশেও মৎস্য রপ্তানি করা হবে। মৎস্য সম্পদের উন্নয়নের জন্য সরকারি কর্মসূচির কথা ব্যাখ্যা করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ৪ কোটি টাকা খরচের মাধ্যমে সরকারি পুকুরগুলাে সংস্কার করে এগুলােতে বৈজ্ঞানিক প্রথায় মৎস্য চাষ করা হবে। এর ফলে প্রতি বছর একর প্রতি একটন মৎস্য পাওয়া যাবে বলে। তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বিশ্ব ব্যাংক ১৬.৫ মিলিয়ন ডলার সাহায্য দানের কথা সরকারি ভাবে বিবেচনা করেছেন। সিলেটের হাওর এবং যশােরের পাইওর এলাকায় মৎস্য চাষ করা হবে বলে তিনি জানান। তিনি জানান, বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জেলার নদী নালা খাল বিলে চলতি বছর বিনা মূল্যে ২ লাখ তেলাপিয়া মাছের পােনা ছাড়তে হবে। প্রতিমন্ত্রী জানান সমুদ্র থেকে মাছ ধরার জন্য আগামী পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকালে ৩৪টি মাছ ব্রার ট্রলার আমদানি করা হবে। এই প্রসঙ্গে তিনি জানান, স্বাধীনতার পর সােভিয়েত ইউনিয়ন হতে ১০টি এবং প্রতিমন্ত্রী বলেন, ৩৫০ টন মাছ রাখার ক্ষমতাসম্পন্ন চট্টগ্রামে একটি হিমাগার তৈরি করা হবে যা আগামী জুলাই মাসেই শুরু হচ্ছে। তিনি আরাে বলেন, এছাড়া বিভিন্ন জেলায় ছােট ছােট হিমাগার তৈরি করা হচ্ছে। তিনি আরাে বলেন, এছাড়া বিভিন্ন জেলায় ছােট ছােট হিমাগার তৈরি করা হচ্ছে। প্রতিমন্ত্রী জানান, ভারতে মাছ রপ্তানির জন্য ৮টি রেফ্রিজারেটর ট্রাকের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যার ৫টি ইতােমধ্যেই এসে গেছে এবং বাকী ৩টি আসার পথেই রয়েছে। এছাড়া বিদেশে মাছ রপ্তানির জন্য ৮টি রেফ্রিজারেটর জাহাজ আমদানি করা হচ্ছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, মৎস্য উন্নয়নে প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য চট্টগ্রাম মৎস্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৬৩ জনকে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে।
পশুসম্পদ: প্রতিমন্ত্রী পশুসম্পদের উন্নয়ন কর্মসূচি ব্যাখ্যাকালে বলেন, সরকার এ ব্যাপারে প্রয়ােজনীয় কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, পশু চিড়িয়াখানায় ৪৭০টি পশু রয়েছে। এর পরিমাণ বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চলছে। গবাদি পশু উন্নয়নের জন্য প্রত্যেকটি থানায় একটি করে উন্নয়ন কেন্দ্র এবং প্রতি ইউনিয়নে ২ জন করে পশু চিকিৎসা সহকারী থাকবে। তিনি জানান, পশ্চিম জার্মানির সহায়তায় সাভার ডেইরী ফার্মের উন্নতি করা হচ্ছে এবং সিলেটের ডেইরী ফার্মে সাভারের পর্যায়ে উন্নীত করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। তিনি জানান, আগামী ১২ মে থেকে মােরগ বিনিময় প্রকল্প চালু হচ্ছে এতে একটি বিদেশি মােরগের সাথে একটি দেশি মােরগের বিনিময় করা হবে বলে তিনি জানান। তিনি জানান ঐ দিন ফতুল্লায় এই কর্মসূচির উদ্বোধন করা হবে। তিনি জানান আগামী ৫ বছরের মধ্যে প্রত্যেক জেলায় ১০ হাজার মােরগের বাচ্চা এবং প্রত্যেক থানায় ৫শত মােরগের বাচ্চার খাবার প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, অস্ট্রেলিয়া ৩০ হাজার মােরগের বাচ্চা দিচ্ছে যার মধ্যে ৩ হাজার পৌছেছে।২৫
রেফারেন্স: ৮ মে, ১৯৭৪, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত