You dont have javascript enabled! Please enable it! 1974.05.03 | শিক্ষাব্যবস্থা গণমুখী করতে সরকার বদ্ধপরিকর: সৈয়দ নজরুল ইসলাম | দৈনিক আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

শিক্ষাব্যবস্থা গণমুখী করতে সরকার বদ্ধপরিকর: সৈয়দ নজরুল ইসলাম

ঢাকা: শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেছেন, সরকার ঔপনিবেশিক আমলে শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন করে বিজ্ঞানভিত্তিক, গণমুখী, বাস্তবধর্মী এবং সমাজতান্ত্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে বদ্ধপরিকর। তিনি আরও বলেন, শিক্ষাবিদ এবং চিন্তাবিদদের নিয়ে গঠিত বর্তমান শিক্ষা কমিশন শীঘ্রই গণমুখী শিক্ষানীতির রিপাের্ট প্রণয়ন করবে যার উপর ভিত্তি করে কালােপযােগী, প্রয়ােজনানুগ, আধুনিক ও সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা সম্ভব হবে। শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির প্রথম জাতীয় ও ত্রয়ােদশ প্রতিনিধি সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। সমিতির সভাপতি এবং সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান জনাব কামরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিপুল সংখ্যক শিক্ষক প্রতিনিধি যােগদান করেন। তাছাড়া ভারতসহ বিভিন্ন বন্ধু দেশ থেকে শিক্ষক সমিতির প্রতিনিধিবর্গ সম্মেলনে যােগদান করেছেন। শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম এদেশে ঔপনিবেশিক শাসন আমলে যে শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলিত ছিল বর্তমানে স্বাধীন গণতান্ত্রিক আদর্শানুসারে বাংলাদেশে তা মােটেই কার্যকরী হতে পারে না। তিনি বলেন, শিক্ষার মূল উদেশ্য হচ্ছে মানবিক গুণাবলীর পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন এবং শিক্ষার্থীদের আদর্শ করে গড়ে তােলা এবং জাতিকে অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। তিনি বলেন, পরিবর্তিত শিক্ষাব্যবস্থার উদ্দেশ্য হবে আপামর জনসাধারণকে শিক্ষার আলােকে আলােকিত করা এবং সবার জন্য সমান। সুযােগ নিশ্চিত করা। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কেবল পুঁথিগত বিদ্যা শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য পূরণ করতে সক্ষম হবে না। তিনি আরও বলেন, গােটা জাতি যখন আত্মনির্ভরশীল হওয়ার পক্ষে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেখানে ছাত্র এবং শিক্ষক সমাজকে উৎপাদনশীল কাজে অংশগ্রহণ করে জাতীয় উৎপাদন কাজে নিজেদের নিয়ােজিত রাখতে হবে। তাহলে সামাজিক পরনির্ভরশীলতার অবসান হবে এবং শ্রমশক্তির পূর্ণ সদ্ব্যবহার হবে বলে তিনি মনে করেন। সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষাব্যবস্থার সাথে মাটি ও জীবনের মূল প্রবাহের সংযােগ সাধন করতে হবে। তিনি বলেন, কায়িক শ্রমে বিমুখ শিক্ষিত সমাজ সাধারণ মানুষ থেকে অনেক দূরে। তিনি বলেন, এই অসঙ্গতি দূর করতে হবে। তিনি আরও বলেন যে শিক্ষার সাথে শ্রমের যােগ নেই-সাধারণ মানুষের যােগ নেই তা কখনই সম্পূর্ণ হতে পারে না এবং সার্থক হতে পারে না। শিক্ষকসমাজের প্রতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষকসমাজের ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবহ দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা স্মরণ রেখে স্বাধীন বাংলাদেশে যেখানে জনসংখ্যাকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে হবে সেখান থেকে আজকে আমাদের শিক্ষাবিদদের সর্বাঙ্গীণ ও সুষ্ঠু শিক্ষাদানের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের মনে মূল্যবােধ ও জাতীয় চেতনা সৃষ্টি করে তাদের দেশপ্রেমিক নাগরিক করে গড়ে তােলার দায়িত্ব পালন করতে হবে। তিনি বলেন, শিক্ষাঙ্গনে পবিত্রতা ও প্রকৃত শিক্ষার পরিবেশ রক্ষা করাও শিক্ষক ও ছাত্রদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার উপর নির্ভর করে। সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষকদের সার্বিক মঙ্গলের কথা সরকার সব সময়ই চিন্তা করছে। তিনি বলেন, শিক্ষার মান উন্নয়ন তথা শিক্ষক সমাজের সম্মানজনক ভাবে বেঁচে থাকার বিষয়টি তাদের সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করার প্রশ্নটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করছে। তিনি বলেন সেজন্য শিক্ষকদের ন্যায়সঙ্গত দাবী দাওয়া ও সুখ-সুবিধার প্রশ্নে সরকার একান্ত সহানুভূতিশীল।
ছাত্র সংসদ কার্যালয় পরিদর্শন: উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম ঢাকা মহাবিদ্যালয় ছাত্র সংসদের কার্যালয় পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি ছাত্র সংসদের সহসভাপতি লিয়াকত আলী খান, সাধারণ সম্পাদক সেলিম হাসানসহ সম্পাদক সৈয়দ দেলােয়ার হােসেন, নাট্য সম্পাদক ইউনুস আহমদ এবং সমাজকল্যাণ সম্পাদক মােহাম্মদ আবুল হােসেন সিদ্দিকীর সাথে সমস্যা নিয়ে আলােচনা করেন। উক্ত আলােচনায় ছাত্রলীগ নগর শাখার সভাপতি সৈয়দ নুরুল ইসলামসহ ছাত্রলীগ কলেজ শাখার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন: বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সম্মেলনে উপস্থিত কমিটির চেয়ারম্যান জনাব মাে. কামরুজ্জামান কর্তৃক সম্মেলনে পঠিত একটি অভিনন্দন পত্রে বলা হয়, মহামান্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলায় স্বাধীনতা সংগ্রামের বলিষ্ঠ সেনা নায়ক বিশ্বে নিপীড়িত জনগণের বন্ধু এবং বিশ্ব শান্তি আন্দোলনের অগ্রদূত। উক্ত মানপত্রে বলা হয় এই দেশে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কোনাে চক্রান্তকে শিক্ষকসমাজ সহ্য করবে না বরং যেকোন মূল্যে তার প্রতিকার করবে। মানপত্রে বলা হয় যে, সমাজতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির মূল লক্ষ্য। তাই বঙ্গবন্ধু এবং তার সরকার সমাজতন্ত্র নির্মাণের লক্ষ্য নিয়ে যে সব কর্মসূচি গ্রহণ করেছে এবং করা হয়েছে তার সাথে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির একাত্মতা ঘােষণা করেন। অভিনন্দনপত্রে প্রাথমিক শিক্ষকদের আর্থিক দায়িত্ব গ্রহণের পদক্ষেপ এবং বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক ও কর্মচারীদের বিভিন্ন সুযােগ-সুবিধা প্রদানে বঙ্গবন্ধু ও তার সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। উক্ত অভিনন্দনপত্রে সম্প্রতি দেশে দুষ্কৃতিকারী, মুনাফাখাের, চোরাকারবারী প্রভৃতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু যে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন দেশের সার্বিক মঙ্গলের স্বার্থে শিক্ষক সমিতি তার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জ্ঞাপন করছেন। এতে দৃঢ় বিশ্বাস প্রকাশ করে বলা হয় বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশবাসী ও শিক্ষকসমাজ সমস্ত প্রতিকূল অবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করে প্রগতি সুখ ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবেই।
সম্মেলনে ভাষণদানকালে শিক্ষক সমিতির সভাপতি জনাব মাে. কামরুজ্জামান বলেন, মুষ্টিমেয় শিক্ষক শিক্ষকসমাজের মধ্যে বিভ্রন্তি সৃষ্টির জন্য অন্য একটি সম্মেলন করছে। তিনি বলেন, এরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণােদিত হয়েই এই সম্মেলন করছে।৭

রেফারেন্স: ৩ মে, ১৯৭৪, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত