You dont have javascript enabled! Please enable it!

আল্লাহর নাম নিয়েই সমাজতন্ত্র কায়েম করব: ভাসানী

ঢাকা: সর্বদলীয় ঐক্যফ্রন্টের সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বলেছেন, আমি মনে প্রাণে সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করি কিন্তু আল্লাহর তৌহিদকে বাদ দিয়ে সমাজতন্ত্র চাই না। তিনি বলেন, আল্লাহর নামে বিশ্বাস রেখেই সমাজতন্ত্র কায়েম করব।’
মওলানা ভাসানী মঙ্গলবার অপরাহে ঢাকার পল্টন ময়দানে সর্বদলীয় ঐক্যজোটের উদ্যোগে আয়ােজিত এক বিশাল জনসভায় সভাপতির ভাষণ দিচ্ছিলেন। সভায় অন্যান্যের মধ্যে জাতীয় লীগ প্রধান এবং ঐক্যজোটের এক মাসের সাধারণ সম্পাদক জনাব আতাউর রহমান খান, জাগমুই সভাপতি হাজী মােহাম্মদ দানেশ, বাংলা জাতীয় লীগ প্রধান অলি আহাদ, কৃষক শ্রমিক সমাজবাদী দলের খান সাইফুর রহমান, ভাসানী-ন্যাপ নেতা জনাব মশিউর রহমান ও ড. আলিম আল রাজী বক্তৃতা করেন। সভার প্রারম্ভে জাগমুই সাধারণ সম্পাদক জনাব সিরাজুল হােসেন খান সভার প্রস্তাব পাঠ করেন।
কর্মীসূচির ঘােষণা: জনসভায় সর্বদলীয় ঐক্যজোটের আগামী দিনের কর্মসূচি ঘােষণা করা হয়। প্রস্তাবাকারে গৃহীত উক্ত কর্মসূচিতে আগামী মে মাসে ১২ তারিখে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জনসভা এবং ২১ মে সাধারণ হরতাল পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভার অপর এক প্রস্তাবে মওলানা ভাসানী ২৯ এপ্রিল থেকে অনশন এবং ৩ দিনের জন্য দেশব্যাপী হরতালের কর্মসূচি স্থগিত রাখার জন্য তার প্রতি অনুরােধ করা হয়। সভায় অন্য প্রস্তাবসমূহের মধ্যে রয়েছে রাজবন্দিদের মুক্তির দাবী, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য ও ন্টদালাল আইনে আটক ব্যক্তিদের মুক্তির দাবী। এছাড়া সভায় বিচ্ছিন্নভাবে না থেকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলকে ঐক্যফ্রন্টে শরিক হওয়ার আহ্বান জনানাে হয়। সভার প্রারম্ভে প্রস্তাবাকারে গৃহীত কর্মসূচি পাঠ করেন জগমুইর সাধারণ সম্পাদক জনাব সিরাজুল হােসেন খান। সভাপতির ভাষণে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বলেন, কারাে প্রতি আমার কোন বিদ্বেষভাব নেই। আল্লাহর দুনিয়ায় সবাই সমান সবাই ভাই ভাই। তিনি বলেন, আমাদের যা কিছু জোটে সবই আমরা সমানভাবে ভাগ করে খাব। মওলানা ভাসানী সকলকে আল্লাহর তাওহীদে বিশ্বাস স্থাপন করতে বলেন। তাওহীদে বিশ্বাস করলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয় না বলে তিনি মতাে প্রকাশ করেন। মওলানা সাহেব বলেন, মুসলমান তার আল্লাহর বিশ্বাস করবে। হিন্দু ভাইরা তাদেও স্রষ্টায় বিশ্বাস করবে। মওলানা ভাসানী তার ভাষণে বলেন, দেশের সিভিল এ্যাডমিনিস্ট্রেশন ফেল করেছে। শেখ মুজিব তার ৪০ জন মন্ত্রী ও ৩০০ এমপি দিয়ে দেশের শান্তি ফেরাতে পারে নি। তিনি বলেন রক্ষী বাহিনী, সেনা বাহিনী, সমাজবিরােধী, চোরাচালানী, চোর, ডাকাত, হাইজ্যাকারদের ধরে জেলে দিলে কারাে কোন আপত্তি নাই। তিনি সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, আর্মি বা রক্ষী বাহিনী যদি বিরােধী দলীয় কর্মীদের উপর অত্যাচার চালায় তবে জনগণ ট্যাক্স বন্ধ করে দিয়ে ভাতে মারবে। প্রয়ােজন বােধে লড়াই করবাে। তিনি বলেন, জনগণের ট্যাক্সে সেনাবাহিনী চলে। তারা সরকারের কথা শুনবে ঠিক, কিন্তু মন্ত্রী বা এমপিদের কথায় যদি জনগণের উপর অন্যায় অত্যাচার চালায় তাহলে ভালাে হবে না। সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্যে মওলানা ভাসানী বলেন যে, আপনারা ছাত্রলীগের তালিকা অনুসারে কারা অসৎ পথে টাকা কামিয়েছে, সম্পত্তি দখল করেছে, বিদেশে টাকা পাচার করেছে তাদের ধরুন। ধরে ধরে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যান।
মওলানা ভাসানী চোরাচালানের তীব্র প্রতিবাদ জানান। তিনি অভিযােগ করেন, মেঘালয় সীমান্ত দিয়ে ভারতে মারােয়ারী ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের সব মিষ্টি আলু ভারতে নিয়ে গেছেন। তিনি বলেন এত দিন বাংলাদেশের মানুষ ভাতের অভাবে আলু খেত-এখন আলুও খেতে পারবে না। মারােয়ারীরা এদেশের ধান, পাট, কলাই, মাছ, গাড়ি ও অন্যান্য সম্পদ ভারতে নিয়ে সেদেশের জাতীয় আয় বৃদ্ধি করেছে বলেও তিনি অভিযােগ করেন। মওলানা সাহেব বলেন, চোরাচালান ভারতের মারােয়ারীদের জন্য পৌষ মাস, কিন্তু আমাদের জন্য সর্বনাশ। তিনি চোরাচালান দমনের জন্য ভারত সরকার বিশেষ করে ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি আহ্বান জানান। মওলানা সাহেব বলেন, ভারত শক্তিশালী দেশ, তার সৈন্যদল অনেক, চোরাচালান প্রতিরােধে ভারতকেই এগিয়ে আসা উচিত। শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে উদ্দেশ্য করে মওলানা সাহেব বলেন, তুমি আমার বিশিষ্ট বন্ধু জওহরলাল নেহেরুর কন্যা, তাই তোমাকে বলছি তুমি যদি বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্ব রক্ষা করতে চাও তবে চোরাচালান সম্পূর্ণরূপে বন্ধ কর। সােভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির প্রধানের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সােভিয়েত ইউনিয়ন আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র। আমরা চাই সােভিয়েত ইউনিয়ন ভারতের সাথে সব গােপন চুক্তি বাতিল করে বন্ধু ভাবে আমাদের সাথে এগিয়ে আসবে। মওলানা সাহেব প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, মুজিব, এখনও সময় আছে। তােমার লুটপাট বাহিনী দমন কর। তিনি বলেন, শেখ মুজিবের পায়ের নিচের মাটি সরে গেছে। তিনি পল্টন ময়দানে জনমত বাছাইয়ের আহ্বান জানান। মওলানা ভাসানী আরও বলেন, ‘মুজিবর বাঁচতে চাইলে হিন্দুস্থানের সাথে চুক্তি বাতিল কর’।
সর্বশেষ তিনি সিরাজ সিকদার, তােহা, কাজী জাফরসহ সকল রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে হুলিয়া প্রত্যাহারের দাবী জানান এবং রব, জলিল, মতিন, টিপু বিশ্বাসসহ সকল রাজনৈতিক কর্মীর মুক্তি দাবী করেন। তিনি সরকারকে হেদায়েতের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন।৮০

রেফারেন্স: ২৩ এপ্রিল, ১৯৭৪, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!