You dont have javascript enabled! Please enable it! 1969.02.12 | শেখ মুজিবের মুক্তির প্রশ্নে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব : ঢাকা ও লাহোর বিমানবন্দরে গণমনের বিভিন্ন প্রশ্নে স্বীয় অভিমত জ্ঞাপন | দৈনিক ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

দৈনিক ইত্তেফাক
১২ই ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯
শেখ মুজিবের মুক্তির প্রশ্নে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব :
ঢাকা ও লাহোর বিমানবন্দরে গণমনের বিভিন্ন প্রশ্নে স্বীয় অভিমত জ্ঞাপন
(ষ্টাফ রিপোর্টার)

ঢাকায়: গতকাল (শুক্রবার) প্রেসিডেন্ট আইয়ুব ৫ দিনব্যাপী ঢাকা সফর শেষে লাহোর যাত্রাকালে ঢাকা বিমান বন্দরে সাংবাদিকদের সহিত আলোচনাকালে বলেন যে, বর্তমানে বিচারাধীন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সহিত দেশের নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত। তাই ইহাকে হালকাভাবে গ্রহণ করা চলে না। তিনি বলেন যে, “এই ষড়যন্ত্র মামলায় বেসামরিক লোকজন ছাড়াও সামরিক ব্যক্তিরাও জড়িত আছেন। এই ব্যাপারে সহানুভূতি থাকিতে পারে, কিন্তু আপনারাই হালকাভাবে বলুন ইহাকে কী হালকাভাবে গ্রহণ করা চলে।”
জনৈক সাংবাদিক সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শনের মাধ্যমে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করিয়া প্রেসিডেন্ট রাজনৈতিক সদিচ্ছার পরিচয় দান করিতে প্রস্তুত কিনা, এই মর্মে এক প্রশ্ন করিলে তিনি উপরোক্ত মন্তব্যগুলি ব্যক্ত করেন। তিনি অবশ্য সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন যে, রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানের উদ্দেশ্যে তিনি বিরোধী দলীয় নেতৃবৃন্দের সহিত আলোচনা বৈঠকের যে প্রস্তাব দিয়াছেন উহা বহাল রহিয়াছে। কিন্তু বিরোধী দলীয় নেতৃবৃন্দের নিকট হইতে উহার জবাবের প্রতীক্ষা করিতেছেন। প্রস্তাবিত আলোচনা বৈঠকে ডাক-এর বাহিরের অন্যান্য নেতাকে আমন্ত্রণ করা হইয়াছে কিনা, এই মর্মে প্রশ্ন করা হইলে প্রেসিডেন্ট বলেন যে, যে- কোন রাজনৈতিক দলের যে-কোন প্রতিনিধিকে স্বাগত জ্ঞাপন করা হইবে।
বিশেষ করিয়া মওলানা ভাসানীকে উক্ত গোলটেবিল বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হইয়াছে কিনা, এই মর্মে জিজ্ঞাসিত হইয়া প্রেসিডেন্ট বলেন, মওলানার সহিত সাক্ষাৎ হইলে আমি খুশীই হইব। কিন্তু এ ব্যাপারে তাঁহার নিজেরও কিছুটা আগ্রহ থাকিতে হইবে। কবে নাগাদ ‘জরুরী অবস্থা’ প্রত্যাহার করা হইবে তৎসম্পর্কে এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন: আইন মন্ত্রী এ ব্যাপারে তো আভাষ দিয়াছেনই। প্রস্তাবিত গোলটেবিল বৈঠক ও নির্বাচন সম্পর্কিত দুইটি বিল প্রত্যাহার করার প্রেক্ষিতে আগামী সাধারণ নির্বাচন পিছানোর কোন সম্ভাবনা আছে কিনা, এই মর্মে জিজ্ঞাসিত হইয়া প্রেসিডেন্ট বলেন যে, তিনি তাহা মনে করেন না। তিনি বলেন যে, বিরোধী দলের সংগে কোন সমঝোতা হইলে প্রশ্নটি বিবেচনা করা যাইতে পারে। অন্যথায় শাসনতন্ত্রের বিধান অনুযায়ী নির্বাচন সম্পন্ন হইবে।
প্রেসিডেন্টের বিদায় সম্বর্ধনাকালে পূর্ব পাকিস্তানের গবর্ণর জনাব আবদুল মোনেম খান জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের স্পীকারগণ কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মন্ত্রিগণ জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সরকারদলীয় সদস্যগণ এবং পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক অফিসারগণ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করা যাইতে পারে যে, প্রেসিডেন্ট আইয়ুব গত ৬ই ফেব্রুয়ারী ঢাকা আগমন করেন এবং তিনি ঢাকায় প্রেসিডেণ্টভবনে পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কনভেনশন) ওয়ার্কিং কমিটি ও কাউন্সিল অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। তিনি মুসলিম লীগ কাউন্সিলের অধিবেশনে দলের সভাপতি পদে পুনর্নির্বাচিত হইয়াছেন। তিনি ঢাকায় কেন্দ্রীয় গণতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিষদের (ডাক) আহবায়ক নবাবজাদা নসরুল্লাহ খানকে প্রস্তাবিত গোলটেবিল সম্পর্কিত প্রশাসনিক আলোচনার জন্য সাক্ষাৎদান করেন। তিনি ঢাকায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার এক বৈঠকেও সভাপতিত্ব করেন। গত সোমবার রাত্রে তিনি প্রাদেশিক গবর্ণর কর্তৃক প্রদত্ত এক নৈশভোজে যোগদান করেন।
লাহোরে: লাহোর, ১১ই ফেব্রুয়ারি- প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আইয়ুব খান অদ্য ঢাকা হইতে এখানে আগমনের পর বিমান বন্দরে সাংবাদিকদের নিকট বলেন যে, জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার প্রশ্নে এখনও কোন সুনির্দিষ্ট তারিখ নিরূপন করা হয় নাই। কেন্দ্রীয় আইন সচিব এ সম্পর্কে ইতিমধ্যে সরকারী নীতি ব্যাখ্যা করিয়াছেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার গুরুত্বের প্রেক্ষিতে প্রস্তাবিত গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণের সুবিধার্থে শেখ মুজিবুর রহমানকে প্যারোলে মুক্তিদানের সম্ভাবনাও অস্বীকার করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগরতলা মামলায় সামরিক কর্মচারী ও বেসামরিক ব্যক্তিরা জড়িত রহিয়াছেন। প্রশ্নটি দেশের নিরাপত্তা আর সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তিনি আরও বলেন যে, ইহা লঘুভাবে বিবেচনার বস্তু নহে। আটক ব্যক্তিদের মুক্তিদানের প্রশ্নে তিনি বলেন যে, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের বহুসংখ্যক বন্দীকে মুক্তি প্রদান করা হইতেছে।

সুত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু: পঞ্চম খণ্ড ॥ ষাটের দশক ॥ চতুর্থ পর্ব ॥ ১৯৬৯