দৈনিক পয়গাম
১২ই ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯
লাহোর বিমান বন্দরে প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের উক্তি : আওয়ামী লীগ নেতা
শেখ মুজিবকে প্যারোলে মুক্তিদানের সম্ভাবনা নাই
লাহোর, ১১ই ফেব্রুয়ারী।- প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আইয়ুব খান অদ্য এখানে বলেন যে, জরুরী আইন প্রত্যাহার সম্পর্কে এখনও কোন তারিখ ধার্য হয় নাই৷
অদ্য বিকালে পূর্ব পাকিস্তান হইতে এখানে আগমনের পর বিমান বন্দরে প্রেসিডেন্ট সাংবাদিকদের নিকট উপরোক্ত তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি আজ রাত্রে এখানে অবস্থান করিবেন।
তিনি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিধায় প্রস্তাবিত গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্য শেখ মুজিবুর রহমানকে প্যারোলে মুক্তি দানের সম্ভাবনা অস্বীকার করেন। প্রেসিডেন্ট বলেন যে, আগরতলা মামলায় বেসামরিক নাগরিকদের সহিত সামরিক কর্মচারীরাও জড়িত। ইহা দেশের নিরাপত্তা ও সামরিক বাহিনীর শৃঙ্খলার সহিত জড়িত। সুতরাং খুব হালকাভাবে নেওয়ার মত বিষয় ইহা নয়।
গণতান্ত্রিক সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়কের সহিত প্রাথমিক বৈঠকের পর তিনি বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রস্তাবিত গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠানের ব্যাপারে কোন অসুবিধা দেখিতে পাইতেছেন কিনা সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে প্রেসিডেন্ট বলেন, মানুষের মনোভাব সম্পর্কে কোন ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না। কিন্তু সদিচ্ছা থাকিলে কোন সমস্যার সমাধানেই অসুবিধা হয় না।
প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, আমি নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ ব্যতীত অপর কোন ব্যক্তির সহিত মিলিত হই নাই। কাজেই আমি অন্যদের মনোভাব জানি না। সমস্যাদির সমাধানে সদিচ্ছা থাকিলে কোনরূপ অসুবিধা হওয়া উচিত নয়। কিন্তু মানুষের আচরণে যে কি ঘটিতে পারে তাহা আপনারাও জানেন না।
‘ডাকে’র তিনটি পূর্বশর্ত সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে প্রেসিডেন্ট সাংবাদিকদের পাল্টা প্রশ্ন করিয়া বলেন, বলিতে পারেন এই পর্যন্ত কোন ব্যক্তির কয়টি নাগরিক অধিকার অস্বীকার করা হইয়াছে?
জরুরী আইন প্রত্যাহার সম্পর্কে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় আইন উজির ইতিমধ্যে সরকারের মনোভাব ব্যক্ত করিয়াছেন।
আটক লোকদের মুক্তির প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট সাংবাদিকদের বলেন যে, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে অনেক লোককে মুক্তি দেওয়া হইয়াছে। শুধুমাত্র যে সমস্ত লোককে বিপজ্জনক বলিয়া ধারণা করা হইতেছে এবং যাহাদের মুক্তিতে পরিস্থিতির অবনতি ঘটার সম্ভাবনা রহিয়াছে তাহাদেরই মুক্তি দেওয়া হয় নাই। অন্যথায় তাহাদের মুক্তি না দেওয়ার কোন কারণ নাই।
চলতি গোলযোগের সময় গ্রেফতারকৃত ছাত্রদের সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট বলেন যে, তাঁহার মতে ছাত্রদের বিরুদ্ধে যদি কোন নির্দিষ্ট মামলা না থাকে তাহা হইলে তাহাদের মুক্তি দেওয়া উচিত। ইহা করা হইবে বলিয়াও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রেসিডেন্ট সাংবাদিকদের আরও জানান যে, পশ্চিম পাকিস্তান পরিষদ বর্তমানে নূতন বিশ্ববিদ্যালয় বিলের উপর আলোচনা করিতেছে। পূর্ব পাকিস্তান পরিষদেরও শীঘ্র ইহা করা উচিত।
লাহোর বিমান বন্দরে পশ্চিম পাকিস্তানের গভর্ণর জনাব মোহাম্মদ মুসা প্রেসিডেন্টকে অভ্যর্থনা জানান। উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক অফিসার এবং শহরের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিশিষ্ট নাগরিক বিমান বন্দরে উপস্থিত ছিলেন।
প্রেসিডেন্ট বিমান বন্দর হইতে গভর্ণর ভবনে গমন করেন। অদ্য রাত্রি তিনি গভর্ণর ভবনে অবস্থান করিবেন। আগামীকল্য বিকালে তিনি রাওয়ালপিণ্ডি গমন করিবেন। -পিপিআই
সুত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু: পঞ্চম খণ্ড ॥ ষাটের দশক ॥ চতুর্থ পর্ব ॥ ১৯৬৯