You dont have javascript enabled! Please enable it! 1969.02.18 | অদ্য শেখ মুজিবের রাওয়ালপিণ্ডি যাত্রা | দৈনিক ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

দৈনিক ইত্তেফাক
১৮ই ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯
অদ্য শেখ মুজিবের রাওয়ালপিণ্ডি যাত্রা
(ষ্টাফ রিপোর্টার)

গভীর রাত্রে ঢাকায় প্রাপ্ত খবরে জানা গিয়াছে যে, সরকার আওয়ামী লীগ- প্রধান শেখ মুজিবর রহমানকে মুক্ত নাগরিক হিসাবেই পিণ্ডির আলোচনা সভায় শরিক করিতে সম্মত হইয়াছেন। সরকারের এই সর্বশেষ বার্তা লইয়া সংশ্লিষ্ট মহল ক্যান্টনমেন্টে শেখ সাহেবের সহিত আলোচনার জন্য রাত্রি ১টায় রওয়ানা হইয়া গিয়াছেন। এবং বিশ্বস্তসূত্রে জানা গিয়াছে যে, শেখ সাহেব অদ্যই (মঙ্গলবার) ঢাকা হইতে পিণ্ডি রওয়ানা হইবেন এবং প্রেসিডেন্টের সহিত গোল টেবিল বৈঠকে শরীক হইয়া সমগ্র ‘আগরতলা’ মামলাটি প্রত্যাহারের ব্যাপারে চাপ দিবেন। বিশ্বস্তসূত্রে জানা গিয়াছে যে, মামলাটি প্রত্যাহার করা হইবে এবং সে ব্যাপারে আইন বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে রত রহিয়াছেন।
এদিকে ‘পিণ্ডি হইতে ঢাকায় প্রাপ্ত খবরে আরও জানা গিয়াছে যে, ‘পিণ্ডির আলোচনা সভায় যোগদানের জন্য প্রেসিডেন্ট আইয়ুব গতকল্য পিপলস পার্টি প্রধান জেড, এ, ভুট্টো, চীনপন্থী ন্যাপ স্বতন্ত্র নেতা বিচারপতি মাহবুব মুর্শেদ, এয়ার মার্শাল আসগর খান ও লেঃ জেনারেল আজম খানকে তারযোগে আমন্ত্রণ জানাইয়াছেন। ‘পিণ্ডির খবরে আরও বলা হইয়াছে যে, তাঁহারা সকলেই প্রেসিডেন্টের এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করিয়াছেন। এদিকে সুপ্রীমকোর্টের সিনিয়র এডভোকেট মিঃ এ, কে, ব্রোহী ইতিমধ্যেই লাহোর রওয়ানা হইয়া গিয়াছেন এবং বিষয়টি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট মহলের সহিত আলোচনা চালাইতেছেন। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযোগ্য যে, জরুরী অবস্থা প্রত্যাহারের পর ‘আগরতলা মামলাটি’ চালু রাখার শাসনতান্ত্রিক বৈধতা তুলিয়া মিঃ ব্রোহী সরকারের প্রতি একটি ‘ডিমাণ্ড অব জাষ্টিস’ নোটিস জারি করিয়াছিলেন এবং প্রথম পর্যায়ে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সমক্ষে ও পরে প্রয়োজন হইলে হাইকোর্টে এ প্রশ্নে একটি রীট মামলা দায়েরের প্রস্তুতি গ্রহণ করিতেছিলেন। কিন্তু বিশেষ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি এস, এ, রহমান বিশেষ ট্রাইব্যুনালের অধিবেশন ১০ই মার্চ পর্যন্ত মুলতবী রাখায় মিঃ ব্রোহী লাহোর রওয়ানা হইয়া যান।
বিচারপতি এস, এ, রহমান এবং আগরতলা মামলায় সরকার পক্ষের প্রধান কৌসুলী জনাব মঞ্জুর কাদির গতকল্য যথাক্রমে লাহোর ও পিণ্ডি রওয়ানা হইয়া গিয়াছেন।
আরও উল্লেখযোগ্য যে, প্রথম পর্যায়ে শেখ সাহেবের মুক্তি ও পরে সমগ্র আগরতলা মামলাটি প্রত্যাহারের ব্যাপারে সম্মত হওয়ার যে প্রস্তুতি ইতিপূর্বে আওয়ামী লীগের ছিল, ক্যান্টনমেন্ট এলাকার গুলীবর্ষণ ও সার্জেন্ট জহুরুল হকের ইন্তেকালজনিত ঘটনাকে কেন্দ্র করিয়া সে অবস্থার গুরুতর পরিবর্তন ঘটে।
সেই অনুযায়ী শেখ সাহেব ব্যাপারটি দুই পর্যায়ে সমাধা না করিয়া একই সঙ্গে তাঁহার নিজের মুক্তি ও সমগ্র মামলাটি প্রত্যাহারের দাবী জানান এবং এ প্রশ্নে ‘পিণ্ডি মহলে আলোচনা চলিতে থাকে। এবং রবিবারে লাহোর হইতে প্রত্যাবর্তনের পর ঐ রাত্রে ও গতকল্য অপরাহ্নে আওয়ামী লীগ সম্পাদক জনাব তাজুদ্দীন দুই দফা শেখ সাহেবের সহিত সাক্ষাৎ করেন। গতরাত্রে সরকারের সর্বশেষ প্রস্তাব প্রাপ্তির পর সংশ্লিষ্ট মহল শেখ সাহেবের সহিত আলোচনার জন্য কুর্মিটোলা রওয়ানা হইয়া যান।

সুত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু: পঞ্চম খণ্ড ॥ ষাটের দশক ॥ চতুর্থ পর্ব ॥ ১৯৬৯