You dont have javascript enabled! Please enable it!

কলাম
দৈনিক ইত্তেফাক
২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯
রাজনৈতিক মঞ্চ
মোসাফির

প্রেসিডেন্ট আইয়ুব শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে এক বেতার ভাষণে কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করিয়াছেন। উহার মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ঘোষণা এই যে, তিনি আর প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিবেন না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জনসনের পথ তিনি অনুসরণ করিলেন প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের এই ঘোষণাকে এই মুহূর্তে অভিনন্দিত করা না গেলেও ইহাকে আমরা একটি বাস্তব পদক্ষেপ এবং জনমতের প্রতি আংশিক শ্রদ্ধা প্রদর্শনের নজির হিসাবেই গ্রহণ করিব। কিন্তু মি: জনসন যেমনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করিবার ঘোষণা প্রচারপূর্বক বাস্তবতা ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন দ্বারাও তাঁহার আমলের সৃষ্ট ভিয়েতনামসহ প্রধান প্রধান সমস্যাগুলির সমাধান করিয়া যাইতে পারেন নাই, বরং সেই সকল সমস্যা আজো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে রাহুগ্রস্ত করিয়া রাখিয়াছে; তেমনি আমরা মনে করি, প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করিবার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরেও তাঁহার দশ বছরের শাসনামলের বহু অপকীর্তি যেভাবে জাতীয় জীবনকে বিষাক্ত করিয়া রাখিয়াছে, শুধুমাত্র তাঁহার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী না হইবার সিদ্ধান্তে উহার সমাধান হইবে না। তাঁহার আমলে সৃষ্ট সমস্যাবলী এবং হৃদয়বিদারক ঘটনাবলীর উল্লেখ না করিয়া সমস্যার সমাধান কিভাবে হইতে পারে তাহার পথ বাৎলানো সম্ভব নয়।
আজ সুদীর্ঘ দশ বছর পরে প্রেসিডেন্টের শুক্রবার বেতার ভাষণে এই সহজ সত্যটি মৌখিক স্বীকৃতি লাভ করিয়াছে। কিন্তু এই সহজ সত্যটি তুলিয়া ধরিতে গিয়া এদেশের বহু রাজনৈতিক নেতা ও কর্মী …. দৈনিক ‘ইত্তেফাক’ অকথ্য নির্যাতনের শিকার হইয়াছে। সুতরাং প্রেসিডেন্ট আইয়ুব যদি আন্তরিকভাবে এদেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরাইয়া আনিতে চান, তাহা হইলে যেমন তাঁহার আমলের সৃষ্ট সমস্যাদির অবসান ঘটাইতে হইবে, তেমনি আজ যাঁহারা অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আত্মাহুতি দিয়াছেন, সেই শহীদদের প্রতি এবং নির্যাতিত সকল শ্রেণীর মানুষের প্রতি সুবিচারের ব্যবস্থা করিতে হইবে। দেশব্যাপী, বিশেষ করিয়া পূর্ব পাকিস্তানে যে গণ-আন্দোলনের ঢেউ উঠিয়াছে, তাহা কোন ব্যক্তিবিশেষের বা দলবিশেষের কৃতিত্ব নয়, তাহা মূলত: আইয়ুব শাসনামলে সৃষ্ট সমস্যাদি ও দমননীতির বিরুদ্ধে; এবং ছাত্র-জনতা ও রাজনীতিকদের ঐক্যের সুফল। তাই শুধু ‘নির্বাচনে পদপ্রার্থী হইব না’ এই কথা বলিয়াই তিনি গণমনে আস্থা কিম্বা শুভেচ্ছার ভাব সৃষ্টি করিতে পারিবেন না। পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি যে অনাচার ও অবিচার করা হইয়াছে তাহার যথার্থ প্রতিকার করিতে হইবে। আমরা বলিয়াছি, সকল তিক্ততা সত্ত্বেও আমরা আলাপ-আলোচনা ও নিয়মতান্ত্রিক পথে সকল সমস্যা সমাধানের পক্ষপাতী। কিন্তু আলাপ-আলোচনা এক কথা, আর আপোষ ভিন্ন কথা। গণ-অধিকারের প্রশ্নে কোন আপোষ নাই। প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের বিরুদ্ধে আমাদের কোন ব্যক্তিগত বিদ্বেষ নাই। জনসাধারণের জন্যই ছাত্র-জনতা, রাজনীতিকরা সংগ্রাম করিয়াছেন, নির্যাতন ভোগ করিয়াছেন ও করিতেছেন; জনসাধারণের স্বার্থকেই সবার উর্ধ্বে স্থান দিতে হইবে। কিন্তু আইয়ুবের শাসনামলের সৃষ্ট সমস্যায় পূর্ব পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ যেভাবে ভুগিয়াছে, তাহা ভুলিতে বেশ কিছুদিন লাগিবে’।

সুত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু: পঞ্চম খণ্ড ॥ ষাটের দশক ॥ চতুর্থ পর্ব ॥ ১৯৬৯

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!