You dont have javascript enabled! Please enable it! 1974.04.11 | বিমান বন্দরে বঙ্গবন্ধুর হৃদয়স্পর্শী সংবর্ধনা | দৈনিক আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

বিমান বন্দরে বঙ্গবন্ধুর হৃদয়স্পর্শী সংবর্ধনা

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চিকিৎসার জন্য ২২ দিন ব্যাপী বিদেশে অবস্থানের পর বৃহস্পতিবার স্বদেশে ফিরে এলে ঢাকা বিমান বন্দরে তাঁকে হৃদয়স্পর্শী সংবর্ধনা জানানাে হয়। বঙ্গবন্ধু মঙ্গলবার মস্কো থেকে দেশে ফিরার পথে এক দিনের জন্য নয়াদিল্লি অবস্থান করেন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর সাথে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলাপ আলােচনা করেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিশেষ সােভিয়েত বিমানটি বৃহস্পতিবার দুপুর ২ টা ১৫ মিনিটে ঢাকা বিমান বন্দরে অবতরণ করে। চিরাচরিত পােশাক পাজামা ও মুজিব কোট পরিহিত বঙ্গবন্ধুকে বিমান বন্দরে বিপুলভাবে মাল্য ভূষিত করা হয়। রাষ্ট্রপতি জনাব মােহাম্মদ উল্লা সর্বপ্রথম বঙ্গবন্ধুকে মাল্য ভূষিত করেন। বঙ্গবন্ধুকে সংবর্ধনা জানানাের জন্য বিমানবন্দরে অন্যান্যের মধ্যে জাতীয় সংসদে স্পীকার জনাব আবদুল মালেক উকিল, শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীনসহ মন্ত্রিসভার সদস্যগণ, প্রতিমন্ত্রীবৃন্দ, আওয়ামী লীগ সভাপতি জনাব এ. এইচ. এম. কামারুজ্জামান সহ সশস্ত্র বাহিনী ও প্রধান বিদেশি কূটনৈতিক মিশনের প্রধানগণ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগ, কমিউনিস্ট পার্টি, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী ও ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু বেগম মুজিব, বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হােসেনের নেতৃত্বে দিল্লির ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে যােগদানকারী প্রতিনিধিদল সকলেই একই বিমানে ঢাকায় ফিরে আসেন। বঙ্গবন্ধুর বিমানটি ঢাকার আকাশে দেখা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিমান বন্দরে অপেক্ষমাণ বিরাট জনতা জয় বঙ্গবন্ধু, জয় বাংলা, বঙ্গবন্ধু যেখানে, আমরা আছি সেখানে প্রভৃতি স্লোগান বিমানবন্দরে মুখরিত করে তােলে। বঙ্গবন্ধু বিমানের দরজায় এসে দাঁড়াবার সাথে সাথে বিশাল জনতা হর্ষধ্বনিতে ফেটে পড়ে। বঙ্গবন্ধু জনতার উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে তার জবাব দেন। বঙ্গবন্ধু ও তার পেছনে ড. কামাল হােসেন সংবর্ধনা জানানাের জন্য বিমানবন্দরে উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে করমর্দন করেন। বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর ত্যাগের পূর্বে সাংবাদিকদের বলেন, স্বদেশে ফিরে এসে আমি আনন্দিত। বঙ্গবন্ধু বলেন, রুশ ডাক্তারগণ তাকে ঔষধপত্র দিয়েছেন এবং বিশ্রাম গ্রহণের উপদেশ দিয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের সাথে পরে মিলিত হবেন বলে জানান। জাতির জনককে নিয়ে গাড়িতে তার ধানমণ্ডীর বাড়ির দিকে রওয়ানা হলে প্লাকার্ড ও ব্যানার বহনকারী জনতা হর্ষধ্বনিতে ভেঙে পড়ে। বিভিন্ন অভিনন্দন সূচক শ্লোগাণ দেয়। বঙ্গবন্ধু গত ১২ মার্চ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সােভিয়েত নেতৃবৃন্দের আমন্ত্রণক্রমে চিকিৎসার জন্য বিশেষ রুশ বিমানে মস্কো রওনা হয়ে যান। বঙ্গবন্ধু ব্রংকাইটিসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। রুশ বিশেষজ্ঞগণ তাকে পরীক্ষার পর যথাযথ চিকিৎসা করেন এবং ৩ সপ্তাহ বিশ্রাম করার পরামর্শ দেন। বঙ্গবন্ধু ঢাকার উদ্দেশ্যে মস্কো ত্যাগের প্রাক্কালে সােভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান লিওনিদ ব্রেজনেভ ও প্রধানমন্ত্রী আলেক্সি কোসিগিনের সাথে ঘরােয়াভাবে আলােচনা করেন। বঙ্গবন্ধু একদিন অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর সাথে সকল বিষয়ে বিস্তারিত আলােচনা করেন। তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি মি. ভি ভি গিরির সাথেও সাক্ষাৎ করেন।৩৬

রেফারেন্স: ১১ এপ্রিল, ১৯৭৪, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত