উপমহাদেশে স্থায়ী শান্তিই বাংলাদেশের কাম্য, দিল্লিতে বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ ঘােষণা
নয়াদিল্লি: প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক বলিষ্ঠ ঘােষণার কথা বলেন যে, দিল্লি চুক্তি স্বাক্ষরের পর উপমহাদেশের জন্য তিনি কেমন ভবিষ্যৎ কল্পনা করছেন এই মর্মে এক প্রশ্নে জবাবে বঙ্গবন্ধু উক্ত মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মস্কোতে চিকিৎসার পর স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের শেষে এক সফরে দিল্লি পৌছে বিমান বন্দরে সাংবাদিকদের সাথে ঘরােয়াভাবে আলাপ করছিলেন। বঙ্গবন্ধু তার বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হাসি মুখে বলেন যে, এখানে আবার আসতে পেরে তিনি খুশি হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু দুই বছর পূর্বে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দিল্লি এসে পৌঁছানাের স্মৃতিগুলাে স্মরণ করেন। ঐতিহাসিক ত্রিপক্ষীয় চুক্তির উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু বলেন ভারতীয় উপমহাদেশে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা সর্বতােভাবে চেষ্টা করে যাব। পাকিস্তানও এখন থেকে সে চেষ্টা করবে বলে আশা প্রকাশ করেন। বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ যে সব উদ্যোগ নিয়েছে ভারত সে সব উদ্যোগের সঙ্গে পরিপূর্ণভাবে শরিক হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সােভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান লিওনিদ ব্রেজনেভ ও প্রধানমন্ত্রী আলেক্সি কোসিগিন এর সাথে আলােচনা কালে অত্যন্ত কার্যকরী ও ফলপ্রসূ বলে বর্ণনা করেন।
প্রাণঢালা সংবর্ধনা: প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দিল্লি বিমান বন্দরে প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানানাে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী ও তার মন্ত্রিসভার সকল সদস্য বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানানাের জন্য বিমান বন্দরে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী ঘিয়ে রঙের ছাপা সিল্কের শাড়ি পরে সুন্দর সবুজ রঙের ছাতা হাতে ভি আই পি কক্ষের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু সােভিয়েত ইউনিয়নের বিশেষ ‘এরােফ্লোট বিমান থেকে নেমে এলে মিসেস গান্ধী তাকে প্রথম অভ্যর্থনা জানান। বঙ্গবন্ধু সর্দার শরণ সিং, মি. ডি পি ধর, মি. ফকরুদ্দিন আলী আহমদ ও ভারতীয় মন্ত্রী পরিষদে অন্য সদস্যবর্গের সাথে করমর্দন করেন এবং আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল হােসেনকে আলিঙ্গন করেন। দিল্লির মেয়র মি. কেদার নাথ মাহনী বঙ্গবন্ধুকে মাল্য ভূষিত করেন। ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় পােশাকে সজ্জিত ছােট ছােট ছেলেমেয়েরা বঙ্গবন্ধু ও বেগম মুজিবকে ফুলের তােড়া উপহার দেয়। বঙ্গবন্ধু ও বেগম মুজিব ছােট ছেলেমেয়েদের আদর করেন। অতঃপর বঙ্গবন্ধুকে সেনাবাহিনীর গার্ড অব অনার ও অভিবাদন গ্রহণের জন্য মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু যখন অভিবাদন গ্রহণ করছিলেন তখন উভয় দেশের জাতীয় সংগীত বাজানাে হয়। গার্ড অব অনারের পর বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের নাগরিকবৃন্দ সহ অপেক্ষমাণ জনতার দিকে এগিয়ে যান এবং শারীরিক ক্লান্তি সত্ত্বেও তাদের সাথে করমর্দন করেন। বিমান বন্দরে অনুষ্ঠান শেষে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী মিসেস গান্ধী একটি গাড়িতে আরােহণ করেন ও রাষ্ট্রপতি ভবনে গমন করেন। বিমান বন্দর থেকে রাষ্ট্রপতি ভবন পর্যন্ত সুদীর্ঘ ১০ মাইল পথ বহু সুদৃশ্য তােরণ দিয়ে সাজানাে হয় এবং বঙ্গবন্ধুকে স্বাগতম জানিয়ে অসংখ্য ব্যানার টানানাে হয়।৩২
রেফারেন্স: ১০ এপ্রিল, ১৯৭৪, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত