You dont have javascript enabled! Please enable it!

নয়াদিল্লিতে ত্রিপক্ষীয় আলােচনা অব্যাহত, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারই মূল বিষয়

নয়াদিল্লি: নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠানরত পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে ১৯৫ জন যুদ্ধবন্দি ও বাংলাদেশ থেকে অতিরিক্ত পাকিস্তানি নাগরিকদের ফিরে নেয়া এই দুটি মুখ্য বিষয় নিয়ে এখনাে আলােচনা চলছে। আজকের বৈঠক সকাল ১১ টায় শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পাকিস্তানের পররাষ্ট্র ও দেশরক্ষা মন্ত্রী জনাব আজিজ আহমদ দেরিতে এসে পৌছান বলে ১১ টা ৪০ মিনিটে বৈঠক শুরু হয়। ড. কামাল হােসেন ১১ টা ১০ মিনিটে এসে পৌঁছেছেন। এবং সরদার শরণ সিংএর সাথে আধ ঘণ্টা বৈঠকপূর্ব পরামর্শ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথম ৫০ মিনিট নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলােচনা করেন। অতঃপর প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা স্ব স্ব নেতার সাথে আলােচনায় যােগ দেন। গত ৩ দিন ধরে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক চলছে। তিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোন সাহায্যকারী ছাড়াই দুটি অধিবেশনে ৩ ঘণ্টা যাবৎ নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলােচনা করেন। এই কূটনৈতিক আলােচনা আগামীকাল বা আগামী পরশু পর্যন্ত চলতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। খবরে প্রকাশ, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আগামী বুধবার নাগাদ মস্কো থেকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পথে প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর সাথে আলােচনার জন্য নয়াদিল্লিতে অবতরণ করতে পারেন। এবং ততদিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক চলবে এটা প্রায় সুনিশ্চিত। এদিকে দিল্লি চুক্তির বাস্তবায়ন সম্পর্কে পর্যালােচনা করার জন্য বাংলাদেশ ভারত ও পাকিস্তানের প্রতিনিধি দলের ৩ জন কর্মকর্তাকে নিয়ে যে কমিটি গঠিত হয়েছিল, তারা তাদের আলােচনায় ঐকমত্যে পৌছাতে ব্যর্থ হন। বাংলাদেশ ও ভারতীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে ঐকমত্যও প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় তারা পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে আজকের বৈঠকে একটি যৌথ রিপাের্ট পেশ করবেন এবং পাকিস্তানি কর্মকর্তা আলাদাভাবে তার রিপাের্ট পেশ করবেন বলে জানা গেছে। এখানে উল্লেখযােগ্য বাংলাদেশ এই মর্মে প্রস্তাব করে যে, ৫ লাখ পাকিস্তানি নাগরিক রয়েছে এবং যারা পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করছে পাকিস্তান কর্তৃক তাদের ফিরিয়ে নেওয়া উচিত কি না, তা নির্ণয় করার জন্য বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি আন্তর্জাতিক কমিটি নিয়ােগ করা হবে। কিন্তু পাকিস্তান এই প্রস্তাবে রাজী হচ্ছে না। ১৯৫ জন যুদ্ধবন্দির ব্যাপারে বাংলাদেশ আইনগত ব্যবস্থার উপর জোর দিচ্ছে বলে। জানা গেছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, যুদ্ধবন্দিরা সর্বজন স্বীকৃতি অপরাধে। অপরাধী। কাজেই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা হওয়া উচিত। কিন্তু পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, যুদ্ধবন্দিদের বিচার হলে ভুট্টোর সরকার রাজনৈতিক অসুবিধার সম্মুখীন হবেন। পাকিস্তানি পক্ষ যুদ্ধবন্দি প্রশ্নটির নৈতিক ও আইনগত দিক এড়িয়ে যাবার কৌশল অবলম্বন। করছেন এবং উপমহাদেশের শান্তি ও সমঝােতার অজুহাত দেখিয়ে ১৯৫ জন যুদ্ধবন্দির মুক্তি চাচ্ছেন। আজ সকালে অধিবেশন প্রায় ৯০ মিনিট কাল চলে। পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সচিব মি. আগা শাহী অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের জানান যে, মূখ্য বিষয় নিয়ে এখনও আলােচনা চলছে। তিনি বিস্তারিতভাবে কিছু বলেননি। তবে এই মর্মে আশা প্রকাশ করেন যে, মূল বিষয়টির প্রতি গভীরভাবে মনােযােগী হতে তারা সক্ষম হবে। ড. কামাল হােসেন ও জনাব আজিজ আহমেদ। আজ সকালের অধিবেশনের পর আলােচনার বিষয়ে কোনাে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। সর্দার শরণ সিং শুধু সাংবাদিকদের জানান, আমরা অদ্য অপরাহ্নে আবার বৈঠকে মিলিত হচ্ছি।১৯

রেফারেন্স: ৭ এপ্রিল, ১৯৭৪, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!