You dont have javascript enabled! Please enable it! 1974.03.24 | আসুন আমরা সবাই হিংসার পথ পরিহার করি: কামারুজ্জামান | বাংলার বাণী - সংগ্রামের নোটবুক

আসুন আমরা সবাই হিংসার পথ পরিহার করি: কামারুজ্জামান

ঢাকা: ‘আসুন আমরা সবাই হিংসার পথ পরিহার করি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব কামারুজ্জামান পল্টনের জনসভায় দেশের প্রগতিশীল ও সাম্রাজবাদী শক্তিগুলাের প্রতি এই উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। সমগ্র দেশব্যাপী প্রতিরােধ দিবস পালন উপলক্ষে পল্টনে আয়ােজিত এক বিশাল জনসভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব গাজী গােলাম মােস্তফা। ঢাকা শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার মানুষ অবিরাম বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে দলে দলে মিছিল সহকারে পল্টনের জনসভায় উপস্থিত হন এবং বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের বক্তৃতা শ্রবণ করেন। আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জনাব আবদুর রাজ্জাক জনসভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে সংগঠনের সাম্রাজ্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ ও পুজিবাদ বিরােধী আন্দোলনের প্রত্যক্ষ কর্মসূচি ঘােষণা করেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি জনাব কামারুজ্জামান হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন যে, যেসব দল ও মতাে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে, অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে হিংসার রাজনীতি কায়েম করছে মেহনতি মানুষের সংগ্রামী প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগ অতীতে তাদের ক্ষমা করেননি, আগামীতেও করবে না। তিনি বলেন, সম্প্রতি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল গণতন্ত্রের নামে অস্ত্রের ব্যবহার করে যে আক্রমণ চালিয়েছে কোন গণতান্ত্রিক সরকার তা মেনে নিতে পারে না। প্রসঙ্গক্রমে জনাব কামারুজ্জামান বলেন যে, যেকোন বিরােধী দলের গঠনমূলক বক্তব্য ও পদক্ষেপ থাকা উচিত। যেসব দল গঠনমূলক বক্তব্য নিয়ে এগিয়ে আসবে তাদের আমরা অবশ্যই সাদরে গ্রহণ করবাে। কিন্তু অস্ত্রের হুমকির বিরুদ্ধে, বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ অবশ্যই রুখে দাঁড়াবে।
হিংসা আদর্শ প্রতিষ্ঠার পথ নয়: জনাব কামারুজ্জামান বলেন যে, শত্রুদের চিরতরে নিশ্চিহ্ন করতে হলে সাড়ে সাত কোটি মানুষকে গণচেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, হিংসার পথে কোন আদর্শ প্রতিষ্ঠা করা যায় না। হিংসার পথে জনগণের সার্বিক কল্যাণ সাধিত হতে পারে না। তিনি হিংসার আদর্শে উদ্বুদ্ধ ব্যক্তিদের হিংসার পথ পরিহার করে অস্ত্র পরিত্যাগ করার উদাত্ত আহ্বান জানান। তিনি দেশের প্রগতিশীল শক্তিগুলােকে সঠিক কর্মসূচি নিয়ে জনগণের কাছে যাবারও আহ্বান জানান।
অন্যায় অবিচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম: জনাব কামারুজ্জামান পুনরায় ঘােষণা করেন যে, আওয়ামী লীগ এ দেশের বুক থেকে অর্থনৈতিক শােষণ, সকল প্রকার অন্যায় অবিচার ও দুর্নীতির অবসান ঘটানাের আদর্শ কায়েমে কন্টাকাকীর্ণ পথে যে কোন ত্যাগের বিনিময়ে অবিচল থাকবে। আওয়ামী লীগ এ দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য তাদের কর্মসূচি বাস্তবায়নে এগিয়ে যাবে।
সমাজতান্ত্রিক শক্তির একতা চাই: আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন যে, তার সংগঠনের গন্তব্যস্থল সমাজতন্ত্র। এর জন্য প্রয়ােজন প্রতিটি সমাজতন্ত্রমনা ব্যক্তি ও শক্তির একতা। সমস্ত প্রগতিশীল শক্তির ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের মাধ্যমেই কেবলমাত্র সমাজতন্ত্রের শত্রুদের প্রতিহত করা সম্ভব। তিনি বলেন যে, স্বাধীনতা রক্ষা ও স্বাধীনতার সুফলকে প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে পৌছে দেয়ার প্রশ্নেও আমাদের অত্যন্ত সচেতন হতে হবে।
শােষিত ও বঞ্চিত মানুষের সংগঠন: জনাব কামারুজ্জামান বলেছেন, দেশ আজ দুটো শ্রেণিতে বিভক্ত। একদল শােষক, আরেক দল শােষিত। সুতরাং আজকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে শােষিত ও বঞ্চিত মানুষের সংগঠনে পরিণত করতে হবে। যাতে করে দেশে সুযােগসন্ধানী, লাইসেন্স এবং পারমিট শিকারীদের স্থান না থাকে। তিনি আরাে বলেছেন, সমাজতন্ত্র কায়েম করা আওয়ামী লীগের একমাত্র লক্ষ্য। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এ কথা পূর্বেই ঘােষণা করেছেন। সমাজতন্ত্র কায়েমের পথে আওয়ামী লীগ জাতিকে নেতৃত্ব দিবে। সুতরাং সমাজতন্ত্র কায়েমের প্রশ্নে সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী সকল শক্তির ঐক্য অত্যাবশ্যক। আওয়ামী লীগ প্রধান আরাে বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার জন্যে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি আরাে বলেছেন যে, সব অশুভ শক্তি দেশের অভ্যন্তরে গুপ্তহত্যা এবং পাটের গুদামে অগ্নিসংযােগ করছে। তাদের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। দল প্রধান আরাে বলেছেন, দলের মধ্যে সৎ ও আদর্শবান কর্মীর প্রয়ােজন। কেননা সৎ এবং আদর্শবান কর্মী ব্যতীত মহৎ কিছু অর্জন করা সম্ভব নয়। তিনি আরাে বলেছেন, বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি জনতার স্বার্থে চোরাকারবারী, মজুতদারী, মুনাফাখাের ও লাইসেন্স-পারমিট দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এদেরকে সমাজদেহ থেকে চিরতরে উৎখাত করতে হবে।৯৫

রেফারেন্স: ২৪ মার্চ, ১৯৭৪, বাংলার বাণী
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত