প্রকৃত ব্যবসায়ীদের প্রতি শেখ মণি
নারায়ণগঞ্জ: বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মােকাবিলা করার জন্যে দেশপ্রেমের মনােভাব নিয়ে। ব্যবসা ও শিল্প ক্ষেত্রে ভুয়া ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের উৎখাত করার জন্য প্রকৃত শিল্প মালিক ও ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসতে হবে। আজ নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে নারায়ণগঞ্জ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শিল্প মালিকদের সমাবেশে আওয়ামী যুবলীগ প্রধান শেখ ফজলুল হক মণি প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, যদি ক্ষুদ্র শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সরকার সাহায্য ও সহযােগিতা না করেন তবে বৃহৎ পুঁজি এদের গ্রাস করে দিবে। যার ফলে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এক মারাত্মক সংকট সৃষ্টি হবে। শেখ মণি বলেন, দেশে উৎপাদন বৃদ্ধি না করে শুধু মুদ্রাস্ফীতি এবং উঠতি পুঁজি বাড়তে থাকলে জাতীয় জীবনে হতাশা নেমে আসবে। তাই বঙ্গবন্ধুর অনুসারীরা সত্যিকার অর্থে এর অবসান চান। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাঁচামালের কথা উল্লেখ করে জনাব মণি বলেন, বিশ্বের। ১৩২টি রাষ্ট্রের মধ্যে ১০০টি রাষ্ট্রেই শিল্প ক্ষেত্রে কাঁচামালের অভাব রয়েছে। সে জন্য আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এবং সে বৃদ্ধির চাপ আজ আমাদের বহন করতে হচ্ছে। দেশে বর্তমান দ্রব্যমূল্যের যে বণ্টন ব্যবস্থা রয়েছে তা জাতির জন্যে নৈরাজ্যকর ও ভবিষ্যৎ জাতির জন্য মারাত্মক আকার ধারণ করবে। সে জন্য যারা জাতিকে উন্নত ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তাদের স্বার্থে এই ত্রুটিপূর্ণ বণ্টন ব্যবস্থার অবসানের প্রয়ােজনের উপর তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন কলকারখানায় যারা উৎপাদন ব্যাহত করছেন যারা পাটের গুদামে আগুন দিয়ে এবং ব্যাংক ডাকাতি করে জাতীয় সম্পদের অপচয় ঘটাচ্ছেন তারা দেশ ও সমাজের শত্রু। এদের সমাজ হতে উৎখাত করার জন্য তিনি জনগণকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। যারা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠিত করে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামােকে উন্নতি করতে চান তাদের শিল্প প্রতিষ্ঠিত করার কাজে সরকারের বাধা দেওয়া হতে বিরত থাকার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। জনাব মণি বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত পণ্য দ্রব্যে নির্দিষ্ট নিয়মের মাধ্যমে বাড়লেও বাজারে তার স্থিতিশীলতা নেই বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকগণ যদি ‘কস্ট অব প্রডাকশন’ এবং শতকরা নির্দিষ্ট হারে লাভ রেখে বাজারে বিক্রি করেন তবে সে সমস্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য সরকার সাহায্য ও সহযােগিতা করতে পারেন আর যদি উক্ত কার্য হতে কেউ ব্যর্থ হন তবে তার জবাব জনগণের নিকট দিতে হবে। ক্ষুদ্র ব্যবসা ও শিল্প ক্ষেত্রের বিভিন্ন দাবী সম্বন্ধে আলােকপাত করে বলেন, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মােকাবেলা করার জন্য প্রকৃত ব্যবসায়ীদের বিবেক যে ভাবে জাগ্রত হয়েছে, সে জন্য তিনি তাদের ধন্যবাদ জানান এবং তাদের ন্যায্য দাবী আদায় করার নিয়মতান্ত্রিক পথে অগ্রসর হবার জন্য ক্ষুদ্র শিল্প ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান। সভায় সভাপতিত্ব করেন সংসদ সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব এ কে এম শামসুজ্জোহা। নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান জনাব আলী আহমেদ (চুনকা) তার ভাষণে বঙ্গবন্ধুর সােনার বাংলা গড়ার কাজে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি ক্ষুদ্র শিল্প ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করার জন্য সরকারের নিকট দাবী জানান। নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব নাজিমুদ্দিন মাহমুদ তার ভাষণে ভুয়া লাইসেন্সধারীদের জনগণের নিকট চিহ্নিত করে তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার জন্য সরকারের নিকট দাবী জানান। নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব শামসুল ইসলাম ভুইয়া তার ভাষণে নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক দিক দিয়ে পূর্বের ঐতিহ্য ফিরিয়ে দিয়ে ব্যবসা ও শিল্প ক্ষেত্রে উন্নতি সাধন করার জন্য বঙ্গবন্ধুর নিকট দাবী জানান। নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট যুবলীগ নেতা জনাব এন এম চৌধুরী বাচ্চু তার ভাষণে ক্ষুদ্র শিল্প ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সমস্যার কথা উল্লেখ করে বলেন, এ সমস্ত সমস্যা দূর করতে না পারলে ক্ষুদ্র পুজি দেশের স্বার্থে তাদের সমস্যা দূর অচিরেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে তাই করার জন্য সরকারের প্রতি দাবী জানান। বাংলাদেশ হােসিয়ারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জনাব মাশুকুল ইসলাম তার ভাষণে ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত নতুন হােসিয়ারী শিল্পকে সরকারি প্রকৃত তদন্তের মাধ্যমে স্বীকৃতি দিয়েও সুতা সরবরাহ বন্ধ করার অভিযােগ করে বলেন, যেখানে সরকার পাঁচসালা পরিকল্পনায় দেশের বস্ত্র সংকট দূর করার পরিকল্পনা নিয়েছেন সেখানে নব্য প্রতিষ্ঠিত প্রকৃত শিল্প প্রতিষ্ঠানকে সরকার বন্ধ করে বস্ত্র সংকট আরও তীব্রতর করে তুলেছেন। তাই তিনি নব্য প্রতিষ্ঠিত প্রকৃত শিল্প প্রতিষ্ঠানকে প্রয়ােজনীয় কাঁচামাল ও সুতা সরবরাহ করার জন্য সরকারের নিকট দাবী জানান। হােসিয়ারী সমিতির সাবেক সভাপতি জনাব সিদ্দিকুর রহমান তার ভাষণে এ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সমস্যার কথা উল্লেখ করে বলেন, এ প্রতিষ্ঠানকে ভবিষ্যতে বাঁচিয়ে রাখার জন্য অনতিবিলম্বে হােসিয়ারী সুই ও অন্যান্য মিশিনারী দ্রব্য এ সমিতির মাধ্যমে আমদানি করার দাবী জানান। সম্ভাব্য কাঁচামাল সরবরাহ, ত্রুটিপূর্ণ বণ্টন ব্যবস্থা পরিহার করার দাবী জানানাে হয়। সভায় অন্য এক প্রস্তাবে ভুয়া ব্যবসায়ী ও শিল্প প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করা এবং নতুন প্রতিষ্ঠিত হােসিয়ারী শিল্পকে সুতা সরবরাহ করার দাবী জানানাে হয়।৬৩
রেফারেন্স: ১৬ মার্চ, ১৯৭৪, বাংলার বাণী
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত