You dont have javascript enabled! Please enable it!

কুমিল্লা সেনানিবাসে জোয়ানদের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু

কুমিল্লা: প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ত্যাগের মনােভাব নিয়ে দেশসেবায় আত্মনিয়ােগ করার জন্য সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আজ কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে সামরিক একাডেমির উদ্বোধন উপলক্ষে জোয়ানদের এক সমাবেশে বঙ্গবন্ধু ভাষণ দিচ্ছিলেন। তিনি সেনাবাহিনীর জোয়ানদের শান্তিকালীন অবস্থায় চোরাচালানী ও দেশের অন্যান্য সমাজবিরােধী কার্যকলাপ দমনে সরকারের সাহায্যে সেনাবাহিনীর ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সেনাবাহিনীর আওতায় মহান আত্মত্যাগ ও বীরত্বের ভূয়সী প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আপনাদের জনগণের সৈনিক, জাতীয় সেনা। আপনারা ভাড়াটে বাহিনী নন। তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের সাহসী শহীদ জোয়ানদের কথা উল্লেখ করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধে আত্মউৎসর্গকারী বীর ছেলেদের নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। শহীদ লে. বা. এম. আর. চৌধুরীর নাম অনুসারে প্রতিষ্ঠিত স্টেডিয়ামে ভাষণদানকালে জাতির পিতা তার ডাকে সাড়া দিয়ে যারা জীবন দিয়েছে তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রধানমন্ত্রী জোয়ানদের উদ্দেশ্যে বলেন, বহুদিন পাকিস্তানে আটক থাকার পর তাদের সহকর্মীরা ফিরে আজ তাদের শক্তি আরও বেড়েছে। জাতির পিতা বলেন, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা যেকোনাে মূল্যে রক্ষা করতে হবে। আগে ২০০ বছর ইংরেজদের ও ২৫ বছর পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শােষণের যাতাকলে পরাধীন ছিল। তিনি বলেন, শান্তি চাই। আমরা কারাে অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে চাই না এবং আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারেও কারাে হস্তক্ষেপ সহ্য করবাে না। তিনি বলেন গর্ব করে বলতে পারি, স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে ১২২টি দেশ স্বীকৃতি দিয়েছে। অটোয়ায় কমনওয়েলথ সম্মেলন, আলজিয়ার্সের জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে ও লাহােরে ইসলামী শীর্ষ সম্মেলেনে উল্লেখযােগ্য গুরুত্বপূর্ণ মর্যাদায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বলেন, বাংলাদেশের পাকিস্তানের স্বীকৃতি একটি বড় রকম বিজয়। ইতিহাসের এক উল্লেখযােগ্য ঘটনার দিক পরিবর্তন হয়ে পাকিস্তানের মাটিতে বাংলাদেশের পতাকা উড়ছে স্বগর্বে। আমাদের জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সােনার বাংলা আমি তােমায় ভালােবাসি’ ব্যান্ডে বেজে উঠেছে লাহােরে। তিনি ঘােষণা করেন কেউ বিশ্বের সভায় বাংলাদেশের অগ্রগতিকে ব্যাহত করতে পারবে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেন, এ কথা সত্য পাকিস্তানি বাহিনী ৩০ লাখ বাঙালিকে হত্যা করেছে। ২ লাখ মা-বােনকে বেইজ্জত করেছে। তিনি আরাে বলেন, ঐ সব অত্যাচারীদের জঘন্য অপরাধের জন্য আল্লাহই ক্ষমা করতে পারে। বঙ্গবন্ধু ১৮৫৭ সালে ব্যারাকপুরে বাঙালি সৈনিকরা যে আত্মত্যাগ করেছেন তার কথা জোয়ানদের স্মরণ করিয়ে বলেন, বাঙালি জোয়ান ঐ ঐতিহ্যের অধিকারী। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, সেনাবাহিনীর জোয়ানরা দেশপ্রেমিক ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে সত্যিকার সােনার বাংলা গড়ে তুলবেন। প্রধানমন্ত্রী সীমান্তে এবং চট্টগ্রাম বন্দরে চোরাচালান দমনে সেনাবাহিনীর কর্মতৎপরতা সুখী হন। তিনি সাধারণ মানুষের শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনে চোর, ডাকাত ও সমাজবিরােধীদের বিরুদ্ধে আরও বাস্তব ভূমিকা নিতে আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী কিছু সংখ্যক লােককে বিশ্বাসঘাতক মির্জাফর বলে উল্লেখ করে বলেন, অতীতে ঐসব লােকেরা পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসন জিইয়ে রাখার জন্য পাকিস্তানকে সাহায্য করেছেন। তিনি ঐসব বিশ্বাসঘাতকদের সামাজিক পরগাছা বলেও বর্ণনা করেন। বঙ্গবন্ধু হুঁশিয়ারি করে দিয়ে বলেন, বিদেশের টাকা খেয়ে যারা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি আঘাত হানতে সচেষ্ট তাদের এই দেশের মাটি থেকে সমূলে ধ্বংস করে দেয়া হবে। জাতির পিতা বলেন, জীবনে আমি কারাে কাছে মাথা নত করি নি। আইয়ুব-ইয়াহিয়া ফাঁসির কাষ্ঠও আমাকে দাবাতে পারেনি। আমি আমার যৌবন দেশের জনগণের সেবায় জেলে কাটিয়েছি। বঙ্গবন্ধু বলেন, আমি বিদেশ থেকে সাহায্য চাই তবে তা বাংলাদেশের সম্মান ও মর্যাদার মূল্যে নয়। তিনি জোয়ানদের প্রতি যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে গড়ে তােলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন স্বাধীনতার পর আমরা ধ্বংসস্তুপ ছাড়া আর কিছু পাইনি। খাদ্যাভাবে ৫০ লাখ লােক মারা যাবে। বিদেশিদের ধারণা। মিথ্যে হয়েছে। কমপক্ষে দেশ দুর্ভিক্ষের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। বিদেশ থেকে খাদ্য এনেই তা সম্ভব হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বলেন, বাংলাদেশ উত্তরাধিকার সূত্রে একটি ঔপনিবেশিক অর্থনীতি পেয়েছে। পাকিস্তানিরা এ দেশে কোনাে কলকারখানা গড়ে তােলেনি। তিনি ভাষণে মজুতদার ও মুনাফালােভীদের প্রতি কঠোর সতর্ক বাণী উচ্চারণ করেন।৪১

রেফারেন্স: ১১ মার্চ, ১৯৭৪, বাংলার বাণী
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!