মুদ্রামান ঠিক রাখতে হলে উৎপাদন বাড়াতে হবে: তাজউদ্দীন আহমদ
ঢাকা: অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ বলেন, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল বাংলাদেশের মুদ্রামান। হ্রাস করার যে সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ তাতে একমত নয়। তিনি বলেন, সরকার দেশের মুদ্রামান উন্নতি করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকার দেশি বিদেশি অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ আহ্বান করেছে এবং তাদের সুপারিশগুলাে যাচাই করে একটা সুনিশ্চিত বিপ্লবাত্মক পন্থা গ্রহণ করা যাবে বলে তিনি আভাস দেন। অর্থমন্ত্রী এরূপ আশা প্রকাশ করেন যে, সে কর্মপন্থা কার্যকরী হলে দেশের দ্রব্যমূল্য এবং কর্মসংস্থানের দিক দিয়ে টাকার মূল্য বৃদ্ধি পাবে। অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেন যে, দ্রব্যমূল্যের অস্থিরতার জন্যে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিচ্ছে এবং তৎক্ষণাৎ তিনি বলেন, অন্তত দেশের অনুন্নত অর্থনীতি এবং বাজারে পণ্যের অভাবের দরুন এটা অনিবার্য। মুদ্রাস্ফীতির জন্যে ঘাটতি বিনিয়ােগকে দায়ী করে জনাব তাজউদ্দীন বলেন, মুদ্রাস্ফীতি সবসময়ই ঘাটতি বিনিয়ােগের সঙ্গী। তবে উন্নয়নশীল দেশে যেহেতু ব্যক্তিগত পুঁজি থাকে লুকায়িত এবং আন্তর্জাতিক সূত্র থেকে থাকে সীমিত সেজন্য ঘাটতি বিনিয়ােগ অবধারিত। এ সম্পর্কে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও তৃতীয় বিশ্বের অন্যান্য দেশের উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব দেশও ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির স্বীকার করে তবে বাংলাদেশের সাথে এসব দেশের পার্থক্য এই যে, এখানে পণ্য সরবরাহ ও কর্মসংস্থানের উপায় রয়েছে। ফলে এসব দেশের অবস্থা বাংলাদেশের মতাে এত নাজুক নয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সব ক্ষেত্রে ক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন হচ্ছে না। উপরন্তু চোরাচালানের দরুন বাজারের পণ্য উধাও হয়ে যাচ্ছে। অর্থমন্ত্রী মুদ্রামান হ্রাস করার বদলে উৎপাদন বৃদ্ধি জোরদার করে রপ্তানি বাড়িয়ে এবং বাজারে পণ্য সরবরাহ জোরদার করে টাকার ক্রয়ক্ষমতার পক্ষপাতি বলে উল্লেখ করেন। জনাব তাজউদ্দীন দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল করতে বণ্টন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্যে প্রশাসনিক সংস্কারের ওপর জোর দেন। কারণ স্বরূপ তিনি বলেন, সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের পৃষ্ঠপােষকতায় একদল ভুয়া ব্যবসায়ী অজস্র টাকা আয় করেছেন। এবং এভাবে কেবলমাত্র কতিপয় লােকের হাতে এত কালাে টাকা জমা হয়েছে যে, তারা উচ্চমূল্যে প্রয়ােজনাতিরিক্ত দ্রব্য কিনছে এবং যার ফলে সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত হালাল আর ক্রয়ক্ষমতা হারাচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।৪৩
রেফারেন্স: ১১ মার্চ, ১৯৭৪, বাংলার বাণী
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত