মুক্তি সংগ্রামের সেই ঐক্য নিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান: রাষ্ট্রপতি
ঢাকা: রাষ্ট্রপতি মােহাম্মদ উল্লা বলেছেন, মুষ্টিমেয় লােকের ভােগলিপ্সা ও স্বার্থপরতার ফলে স্বাধীনতার স্বর্ণফসল থেকে দেশের অগণিত গণমানুষকে আমরা বঞ্চিত হতে দিতে পারি না। আজ সময় এসেছে মুক্তি সংগ্রামের সেই ঐক্য আর মনােবল নিয়ে প্রতিরােধ গড়ে তােলার। রােববার বিকেলে বাংলাদেশ চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ের রজত জয়ন্তীর উদ্বোধনী ভাষণে রাষ্ট্রপতি এই কথাগুলাে বলেন। তিনি বলেন, যারা জাতীয় আত্মশুদ্ধির সংগ্রামে শরিক হবে না, ভােগলালসা, স্বার্থপরতা, অন্যায়, হিংসা, দুর্নীতির অসুন্দর ও অশুভ পথ যারা পরিত্যাগ করবে না, তারা যেই হােক যত শক্তিশালীই হােক তাদের বিরুদ্ধে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে, সমাজ ও জনগণের ঘৃণা ও প্রতিরােধ করতে হবে। সরকার ও জনগণের হাতে হাত মিলিয়ে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ পুনর্গঠনের যে ডাক দিয়েছেন, দেশের শিল্পী সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীদের নবতর সংগ্রামের সেই আদর্শকে রেখায় ও লেখায় পরিশুদ্ধ করে তােলার জন্য রাষ্ট্রপতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, পরিশ্রমই জীবনের আদর্শ মহত্ত্বকে গণচিত্তে প্রতীয়মান করতে হবে। রাষ্ট্রপতি তার উদ্বোধনী ভাষণে দুঃখ করে বলেন, সুন্দরের রূপমুগ্ধ বাঙালির চিত্ত যেন তার চিরন্তন মূল্যবােধ হারাতে বসেছে। যে মূল্যবােধ তার অনাড়ম্বর জীবনে মহৎ চিন্তায় উদ্বুদ্ধ করতাে, আজ ভােগ বিলাসের মােহে মেতে খােয়াতে চলেছে। জাতীয় জীবনের পরতে পরতে আজ যত অন্যায় হিংসা ও সংঘাত আমাদের আর্থিক ও সামাজিক অস্তিত্বকে দুর্বিষহ করে তুলছে তার মূলে ভােগ-লিল্লাই ও স্বার্থপরতাই দায়ী বলে রাষ্ট্রপতি অভিযােগ করেন। রাষ্ট্রপতি জনাব মােহাম্মদ উল্লা আরাে বলেন, যে, নক্সী কাঁথার বিচিত্রতা পল্লীবধূর যে বিরহ-বেদনা এবং আশা কল্পনা রূপ পেয়েছে, মৃৎপাত্রের বিচিত্র ছন্দে ও রঙে কুশলী শিল্পীর যে অনুভুতি ধরা পড়েছে, পুতুলের অপূর্ব গঠন ভঙ্গিমায় যে ভাব ও কল্পনা নানা ব্যঞ্জনায় ফুটে উঠেছে, পাটির আর পাটের সিকায় কারিগরি নিপুণতা, জামদানী শাড়ির নক্সীকরণ, পাট ও লক্ষ্মী সরায় বলিষ্ঠ রঙ ও রেখার সমাহার, পুতির মালায় ও নানা অলংকারে বৈচিত্রময় কারুকার্য, এদেশের গ্রাম-গঞ্জ শহরে-হাটে বাজারে-মেলায় ছড়িয়ে আছে। শিল্পীদের তুলির স্পর্শে জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা ও তা অর্জনের পথ অধিক দর্শন মুক্ত করে তােলার জন্য রাষ্ট্রপতি উপস্থিত চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। এই রজত জয়ন্তী উৎসবে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, রজত জয়ন্তী উৎসব কমিটির যুগ্মআহ্বায়ক সুবীর চৌধুরী, ড. কুদরতে খােদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আবদুল মতিন চৌধুরী এবং চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সৈয়দ সফিকুল হােসেন। ড. কুদরতে খােদা বলেন, নতুন প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করা না হলে জাতির মঙ্গল সম্ভব নয়। দেশের লজ্জাজনক পরিস্থিতির জন্য ড. খােদা সরকারি কর্মচারীদেরই দায়ী করেন। তিনি বলেন, অফিস আদালতে কিছু সংখ্যক কর্মচারী সরকারি পদক্ষেপ বাস্তবায়নের অন্তরায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আবদুল মতিন চৌধুরী, চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়কে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত করে একে একটি বিভাগ হিসেবে রূপদান করা হবে বলে ঘােষণা করেন। ড. মতিন শিল্পকলার উন্নতি সাধনে ব্রতী হলে সংস্কৃতি নতুন জীবন পাবে বলে অভিমত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, শিল্পের সুন্দর সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষ পায় অপার আনন্দ, সভ্যতা বিকাশের আগেও মানুষ দেয়ালের গায়ে তার অনুভূতির চিহ্ন রেখে গিয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে এক চিত্র প্রদর্শনীরও উদ্বোধন করা হয়। এই প্রদর্শনীতে মােট ৬’শ ছবি স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে শফিউদ্দিন আহমদ, শিল্পাচার্য জয়নাল আবেদীন, কামরুল হাসান, আনােয়ারুল হক, নিতুন কুন্ডু, কাইয়ুম চৌধুরী, আমিরুল ইসলাম, দেবদাস চক্রবর্তী প্রমুখ শিল্পীর ছবিও স্থান পেয়েছে।৩৭
রেফারেন্স: ১০ মার্চ, ১৯৭৪, বাংলার বাণী
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত