You dont have javascript enabled! Please enable it! 1974.03.09 | গ্রামে গ্রামে দুর্গত মানবতার সেবায় এগিয়ে যান: বঙ্গবন্ধু | বাংলার বাণী - সংগ্রামের নোটবুক

গ্রামে গ্রামে দুর্গত মানবতার সেবায় এগিয়ে যান: বঙ্গবন্ধু

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রামে গ্রামে দুর্গত মানবতার সেবায় এগিয়ে যাওয়ার জন্য দেশের ডাক্তারদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সকালে বাংলাদেশ চিকিৎসক সমিতির তৃতীয় জাতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের এক বিশেষ অধিবেশনে প্রধান অতিথির ভাষণ দিচ্ছিলেন। বাংলাদেশ চিকিৎসক সমিতির সভাপতি জনাব মাযহার আলী কাদরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত বিশেষ অধিবেশনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন সম্মেলন অভ্যর্থনা পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. এম. এ. জি. মান্নান, সমিতির সম্পাদক ডা. আলী হাফিজ সেলিম প্রমুখ। ডাক্তারদের গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন যে, দেশের ডাক্তারদের সেবা পাওয়ার অধিকার জনগণের আছে। কারণ দরিদ্র জনগণের ট্যাক্স ও মাথার ঘাম পায়ে ফেলা অর্থ দিয়েই সরকার ডাক্তারদের লেখাপড়ার সুবন্দোবস্ত করে থাকেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, দেশের ডাক্তারদের অনেক অভাব, অভিযােগ ও সমস্যার কথা আমার জানা আছে। কিন্তু দেশে বর্তমানে যে অর্থনৈতিক সঙ্কট চলছে সেই সংকটকে সামনে রেখে মাত্র দু’বছরের মধ্যে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। দেশের শিক্ষিত জনগণের একটি অংশ হিসেবে এর বাস্তবতা আপনাদের উপলব্ধি করতে হবে। বঙ্গবন্ধু বলেন যে, সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত একটি রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থাকে গড়ে তােলার প্রক্রিয়ায় অনেক ভুলত্রুটি হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রের চেয়ে দেশের ডাক্তারদের সার্বিক মানােন্নয়নের বিষয়টি সরকার যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছে। বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত জোর দিয়ে বলেন যে, বাংলাদেশ সরকারই একমাত্র সরকার যে সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিটি ক্ষেত্রে ডাক্তারদেরই নিয়ােগ করার চেষ্টা করেছে। ডাক্তারদের সমস্যা ডাক্তাররাই বুঝবে এদিকে লক্ষ্য রেখেই এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বেতন কমিশন প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু বলেন যে, মন্ত্রী বা মেম্বার নিয়ে বেতন কমিশন গঠন করা হয়নি। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এই কমিশন গঠন করা হয়েছে। ডাক্তারদের মধ্যে থেকেও বেতন কমিশনে প্রতিনিধি নেয়া হয়েছে। তবুও যদি বেতন কমিশনের রিপাের্টকে কেন্দ্র করে ডাক্তারদের মধ্যে কোনাে অসন্তুষ্টি থেকে যায় পরবর্তী পর্যায়ে আলাপ-আলােচনার মাধ্যমে সেই সমস্যার সমাধান আমরা করতে পারবাে বলে বঙ্গবন্ধু ডাক্তারদের আশ্বাস দান করেন। এই প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু ডাক্তারদের উদ্দেশ্যে বলেন যে, তবে দাবী দাওয়ার প্রশ্নে প্রতিটি শিক্ষিত ব্যক্তিকে আমাদের বর্তমান জাতীয় আয়ের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। জাতীয় আয় যখন আমাদের কমে গেছে তখন যা আয় আছে তার মধ্যেই আমাদের ব্যয়ের লক্ষ্য স্থির করতে হবে। বঙ্গবন্ধু বলেন যে, ডাক্তারদের সমস্যার সার্বিক সমাধানের ব্যাপারে তার সহযােগিতা সর্বদাই থাকবে। তিনি দেশের বর্তমান অবস্থার কথা আলােচনা ও পর্যালােচনার পর ডাক্তারদের পরামর্শ দানেরও আহ্বান জানান।
বিদেশ যাত্রা প্রসঙ্গ: ডাক্তারদের বিদেশ যাওয়া প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু বলেন যে, সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনাে ডাক্তারকেই বিদেশ যেতে দেয়া হবে না। সরকার যখন বিদেশ পাঠানাের প্রয়ােজন মনে করবে নিশ্চয়ই পাঠাবে। বঙ্গবন্ধু বলেন, দেশের সুনাম বৃদ্ধি ও বন্ধু রাষ্ট্রের প্রয়ােজনের স্বার্থে আমাদের ডাক্তাররা নিশ্চয়ই বিদেশ যাবেন। তবে বিদেশ গিয়ে আর ফিরে আসবেন না তা চলতে দেয়া যেতে পারে না। ডাক্তারদের কয়েকটি সমস্যার জবাব দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন যে, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব একটা ভালাে নয়। বিদেশে ঔষধসহ সমস্ত জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। তবুও বিদেশ থেকে আমরা প্রয়ােজনীয় ঔষধ আনার ব্যবস্থা করছি। তবুও সেই ঔষধ ঠিকমতাে বিলিবণ্টন ও ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করা হয় না। এ ছাড়াও ঔষধপত্র চুরি হয়ে যায়। অথচ ঔষধ আমদানি থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্যায়ে আপনাদেরই মধ্য থেকে বিশেষজ্ঞ নিয়ােগ করা হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা আপনাদের পরামর্শের ওপর নির্ভর করে এসেছি। বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত জোরের সঙ্গে বলেন যে, সরকার দেশে নতুন মেডিকেল কলেজ আছে সেগুলােকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তােলা না পর্যন্ত আর কোন নতুন মেডিকেল কলেজ স্থাপনের চিন্তা করছে না।৩৩

রেফারেন্স: ৯ মার্চ, ১৯৭৪, বাংলার বাণী
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত