You dont have javascript enabled! Please enable it! 1974.03.07 | কর্মীদের প্রতি আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের ডাক | বাংলার বাণী - সংগ্রামের নোটবুক

কর্মীদের প্রতি আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের ডাক

ঢাকা: স্বাধীনতার স্বাদ অর্থবহ করার উদ্দেশ্যে অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যে দেশ থেকে সকল প্রকার। শােষণ অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রতিটি আওয়ামী লীগ কর্মীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়ােজিত এক আলােচনা সভায় নেতৃবৃন্দ এই আহ্বান জানান। বৃহস্পতিবার ৭ মার্চ উপলক্ষে এই আলােচনা সভার আয়ােজন করা হয়েছিল। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব এ এইচ এম কামারুজ্জামান আলােচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন। প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক ইউসুফ আলী। আলােচনায় অন্যান্যের মধ্যে অংশ নেন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জনাব মহিউদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক জনাব জিল্লুর রহমান, পাটমন্ত্রী জনাব শামসুল হক, খাদ্য প্রতিমন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী জনাব কে এম ওবায়দুর রহমান এবং বেগম সাজেদা চৌধুরী। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বলেন যে, প্রতি বছর সাতই মার্চ আসবে আমাদের কাছে দাবী নিয়ে, আমরা জনগণের জন্যে কতটুকু কি করতে পেরেছি তা বিশ্লেষণের উদ্দেশ্য নিয়ে। জনগণকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, তার কতটুকু পালন করতে পেরেছি।
অধ্যাপক ইউসুফ আলী: প্রধান অতিথির ভাষণে অধ্যাপক ইউসুফ আলী ৭ মার্চকে বাঙালির জীবনে একটি ঐতিহাসিক অধ্যায় বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন যে, ১৯৪৮ সালে বাঙালিরা প্রথম পাকিস্তানিদের কাছ থেকে বিশ্ব ঘাতকতার যে আঘাত পেয়েছিল, তা থেকেই ক্রমান্বয়ে স্তরে স্তরে স্বাধীনতার পথকে প্রশস্ত করেছে। বাঙালিদের নিজেদের স্বকীয়তা অর্জনের সেই বিস্ফোরণ ঘটেছিল বায়ান্ন সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে। অধ্যাপক ইউসুফ আলী বলেন যে, শােষণ, অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রামে যদি আমরা সফলতা অর্জন করতে না পারি, তবে দেশের প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে স্বাধীনতার সত্যিকার স্বাদ পৌছে দেয়া সম্ভব হবে না।
জিল্লুর রহমান: জনাব জিল্লুর রহমান ৭ মার্চে জাতির জনকের নির্দেশ পেয়ে সমগ্র জাতি যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বর্তমানেও ঠিক তেমনি তার দেশ গড়ার ডাকে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্যে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
শামসুল হক: পাটমন্ত্রী জনাব শামসুল হক দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যে সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কথা গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন যে, কোন দেশের রাজনৈতিক স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যায় যদি সেই দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি না আসে। তিনি বলেন যে, সমাজতান্ত্রিক রূপরেখার মধ্যেই অর্থনৈতিক মুক্তি নিহত রয়েছে।
ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম: ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম বলেন যে, সমাজতন্ত্র কখনও স্লোগান দিয়ে কায়েম করা যায় না। এর জন্যে কঠিন সংগ্রামের প্রয়ােজন।
বেগম সাজেদা চৌধুরী: বেগম সাজেদা চৌধুরী বলেন যে, জনগণকে আমরা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তা কতটুকু পালন করতে পেরেছি তা আমাদের আজ পর্যালােচনা করে দেখতে হবে।
এ. এইচ, এম, কামারুজ্জামান: সভাপতির ভাষণে জনাব এ, এইচ, এম, কামারুজ্জামান দেশের সকল কুচক্রীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানাের জন্যে সকল সমাজতান্ত্রিক মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন যে, সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই হচ্ছে এ দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির একমাত্র পথ। তাই এ কারণে সমাজতান্ত্রিক শিবিরে যত মানুষ আছে তাদের সকলকে একত্রিত করতে হবে। তিনি বলেন যে, ক্ষমতাসীনদল হিসেবে যদি আমরা মুক্তির পথ সত্যিকারভাবে দিতে না পারি, তবে তা আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা। তিনি বলেন যে, যারা সংগঠনের ভেতরে থেকে বা বাইরে দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির পথে অন্তরায় সৃষ্টি করছে, তাদের মাটি থেকে নিশ্চিহ্ন করতে হবে। আওয়ামী লীগ কর্মীদের সত্যিকারভাবে শপথ নিতে হবে দেশের মানুষের মুক্তির জন্য।২৬

রেফারেন্স: ৭ মার্চ, ১৯৭৪, বাংলার বাণী
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত