বাংলাদেশ-পাকিস্তান পারস্পরিক স্বীকৃতি
ঢাকা: শুক্রবার পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিনা শর্তে স্বীকৃতি দিয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টোর স্বীকৃতির কথা ঘােষণার পর প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানকে বাংলাদেশের স্বীকৃতি দানের কথা ঘােষণা করে। পাকিস্তানের স্বীকৃতিদানের অব্যবহিত পরই ইরান ও তুরস্ক বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করেন। পাকিস্তানের স্বীকৃতির খবর জানার জন্য রাজধানীর সকল মহলে গতকাল সারাদিন ব্যাপক ঔৎসুক্য পরিলক্ষিত হয়। সংবাদপত্র অফিসে এই সম্পর্কে খোঁজখবর জানার জন্য অবিরাম টেলিফোন আসতে থাকে। স্বীকৃতির খবর প্রচারিত হওয়ার পর শহরের বিভিন্ন এলাকায় খণ্ড খণ্ড মিছিল বের হয়। লাহােরে ইসলামী সম্মেলনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের প্রশ্নে গত কয়েক দিনের ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতায় পাকিস্তান ও বাংলাদেশ পরস্পরকে স্বীকৃতি প্রদান করল। পাকিস্তান থেকে স্বীকৃতি পাওয়ার পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অপেক্ষামাণ সাংবাদিকদের বলেন, আমরাও আনুষ্ঠানিকভাবে ঘােষণা করলাম যে, বাংলাদেশ পাকিস্তানকে স্বীকতি করল। এই স্বীকতি শর্তহীন কিনা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, অবশ্যই বাংলাদেশকে যে সকল রাষ্ট্র স্বীকৃতি দিয়েছে পাকিস্তান তাদের মধ্যে ১১৭তম। ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের চুড়ান্ত ও কার্যকরী স্বাধীনতা অর্জিত হওয়া সত্ত্বেও এ যাবৎ পাকিস্তান তা স্বীকার করে নেয়নি। প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের বিভিন্ন বন্ধু রাষ্ট্র এই দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন বন্ধু রাষ্ট্র কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তােলার চেষ্টা করেন। কিন্তু এই পর্যন্ত কেউ সফলকাম হতে পারেনি। বাংলাদেশ শুরু হতেই স্বীয়নীতি অনড় ও অটল থাকে এবং সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানের সাথে বৈঠকে বসতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ইসলাম সম্মেলনে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বৈঠকে বাংলাদেশের যােগদানের ব্যাপারে গুরুত্ব আরােপ করেন। এই মিশনটি ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করে এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. কামাল হােসেনের সাথে বৈঠকে মিলিত হয়।
কূটনৈতিক সূত্রে প্রকাশ, প্রতিনিধিদলটি একটি বিশেষ প্রস্তাব নিয়ে আসে এবং বঙ্গবন্ধুর সাথে এ ব্যাপারে আলােচনা করে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের অতি প্রচারিত নীতির কথা সদস্যদের অবহিত করেন এবং জানান যে, যদি বিনা শর্তে পাকিস্তান বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব মেনে নেয় তবে বাংলাদেশ সম্মেলনে যােগদান করবেন। বিস্তারিত আলােচনার পর ইসলামী সম্মেলনের সেক্রেটারি জেনারেলসহ ৪ জন সদস্য কুয়েতের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর নিকট থেকে একটি বিশেষ বার্তা নিয়ে শুক্রবার ভাের প্রায় সােয়া ৬ টায় বিশেষ বিমান যােগে লাহাের যাত্রা করেন। সন্ধ্যা প্রায় ৬ টার সময় বাংলাদেশ সরকারিভাবে জানতে পারে যে, পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। গতরাতে কুয়েতের শুভেচ্ছা মিশনের নেতা বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করেন। পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে সম্মেলনে যােগদানের আমন্ত্রণপত্র দান করলে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সাদরে গৃহীত হয়। প্রধানমন্ত্রী পরে তার মন্ত্রী সভার এক বৈঠক আহ্বান করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. কামাল। হােসেন পরে সাংবাদিকদের জানান যে, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ২২ সদস্যের একটি দল আজ শনিবার ইসলামী সম্মেলনে যােগদানের উদ্দেশ্যে লাহাের যাত্রা করবেন। তাদের মধ্যে ১২ জন থাকবেন প্রতিনিধি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি পাকিস্তান কর্তৃক বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদানের ফলে উপমহাদেশের অন্যান্য সমস্যা সমাধানের পথ উন্মুক্ত হয়েছে। তিনি বলেন সমাধানের পথ পাওয়া গেছে, আমরা তাকে কাজে লাগাবাে। উপমহাদেশের কোনাে সমস্যা এই সম্মেলনে আলােচিত হবে কিনা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এই বিষয় আলােচনার কোন সম্ভাবনা নাই বলে তিনি মতাে প্রকাশ করেন। ড. কামাল বলেন, বাংলাদেশ সর্বদাই উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশের মধ্যে শান্তি আনয়ন এবং সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের পক্ষপাতি। তিনি বলেন, দিল্লি চুক্তিতে তা পরিস্কারভাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে। লাহােরের সম্মেলনের পরও বঙ্গবন্ধু অবস্থানের কোনাে সম্ভাবনা আছে কিনা শীর্ষক এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা আশা করি পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করলে শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে ছােট ছােট মিছিল বের হয় এবং দুই দেশের সম্পর্কে একাত্মতা প্রকাশ করা হয়। আওয়ামী যুবলীগের একটি মিছিল গণভবনে পৌছে এবং বিভিন্ন ধ্বনি সহকারে বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাদের পূর্ণ আস্থা প্রকাশ করে। বঙ্গবন্ধু বাহিরে এসে তাদের আনন্দে অংশীদার হন এবং বলেন জয় বাংলা। পূর্বাহ্বে অর্থাৎ স্বীকৃতি পাওয়ার অনতিকাল পরেই জনৈক সাংবাদিক যখন তাকে জিজ্ঞাসা করে তিনি কেমন অনুভব করতেছেন। তখন বঙ্গবন্ধু বলেন, আমার এ মুহূর্তে কোন কিছু মনে হয় না। আমি দৃঢ় স্থির পাথরের মত। পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা অভিযান। ঢাকা : ক্লোজোমস সার্ভ সােসাইটি নামে ঢাকা শহর পরিচ্ছন্নতার অভিযানে বিভিন্ন সামাজিক সংস্থার পাঁচশত যুবক স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করবে। সুষ্ঠুভাবে বাসগৃহ নর্দমা কালভার্টস ও দেওয়ালে পরিচ্ছন্ন অভিযান চালানাের উদ্দেশ্যে স্বেচ্ছাসেবকদের সুবিধার্থ ঢাকা পৌরসভার উদ্যোগে শহরকে ৪টি কেন্দ্রে বিভক্ত করা হয়। ঢাকা পৌরসভার প্রশাসক গত মঙ্গলবার বাসসকে জানান যে এই অভিযানের উদ্দেশ্য হলাে শহরের পরিচ্ছন্নতা রক্ষার ব্যাপারে নগরবাসীকে সচেতন করা। এই পরিচ্ছন্ন অভিযানকে সফল করার জন্য পৌরসভার কর্মচারীদের সঙ্গে বয়স্কাউট ও তরুণ সংঘের ৫০০ যুবক সম্মিলিতভাবে কাজ করবেন। গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে গবাদি পশুর বিচরণ রােধকল্পে ৪৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৩টি গােচারণ ক্ষেত্র স্থাপন করা হবে। ট্রাফিক আইল্যান্ড ও পার্কসমূহের সৌন্দর্য রক্ষার জন্য অদূর ভবিষতে আরও অনুরূপ ৩টি গােচারণ ক্ষেত্র স্থাপন করা
হবে। ৭৬
রেফারেন্স: ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪, দৈনিক বাংলা
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত