You dont have javascript enabled! Please enable it! 1974.02.17 | তােমরা আমার ডাকের জন্য প্রস্তুত থাক: বঙ্গবন্ধু | দৈনিক বাংলা - সংগ্রামের নোটবুক

তােমরা আমার ডাকের জন্য প্রস্তুত থাক: বঙ্গবন্ধু

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রবিবার ছাত্র সমাজকে তার চরম ডাকের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি মনে করেন ২৫ বছরের রক্তাক্ত বিপ্লবের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের পর দেশে যখন একটি শােষণহীন সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা কাজ চালিয়েছে তখন ঘরে বাইরে স্বাধীনতা নস্যাতের ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। রবিবার বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পুনর্মিলনী উৎসবে ভাষণদান প্রসঙ্গে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু বলেন, তােমরা আমার একটা কথা সবসময় মনে রেখাে। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির সাথে আপস হয় না। তিনি বলেন, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদের মাধ্যমেই দেশকে গড়ে তুলতে হবে। শােষণহীন সমাজ আর বণ্টন করতে হবে এদেশের সম্পদ যাতে দুঃখী মানুষ সুখী থাকতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি স্বাধীনতা ঠিক থাকে, তবে তােমরা সবকিছু করতে পারবে। বিদেশি চক্র তৎপর হয়ে আছে, চরম আঘাত করতে পাওে তােমরা মানসিকভাবে প্রস্তুত থাক। দেশে এখন পর্যন্ত সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয় নাই বলে যারা সমালােচনা করে, তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, দুই বছরের মধ্যে সােনার খনি হয় না। তা আনয়ন করার পথ অত্যন্ত কঠিন। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত আছে। তােমাদের তা মােকাবিলা করতে হবে। তিনি বলেন, স্বৈরাচারীরা বাংলাদেশকে কলােনীতে পরিণত করেছিল এবং তারই ফলে যা কিছু প্রয়ােজন সব বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। যারা সােনার সিংহাসন চায় তারা পাবে না। তারা যা পাবে তা আমি জানি। যখন আমার কাছে চাও, তখন আমিওতাে চাই। আমার চাওয়া তােমরা উৎপাদন বৃদ্ধি করাে। বঙ্গবন্ধু বলেন, কোন দেশে এই ধরনের বিপ্লবের পর পাঁচ বছরের মধ্যে কাউকেও মাথা তুলতে দেয়া হয় না। তিনি বলেন, উৎপাদন বৃদ্ধি না করে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা এনে বেতন বাড়িয়ে দেয়ার কোনাে যৌক্তিকতা নেই। যার ফলে সারা দেশে আজ মুদ্রাস্ফীতি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয়করণের সব সম্পদের মালিক সাড়ে সাত কোটি জনগণ। পাট রপ্তানি জাতীয়করণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি পরিকল্পিত উপায়ে সরকারি পর্যায়ে পাট রপ্তানি বানচাল করার উদ্দেশ্যে তারা অপপ্রচার চালিয়েছে। তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, পাট রপ্তানিকে জাতীয়করণ করা হয়েছে। তা থাকবে, অন্তত যতদিন আমি আছি বাংলাদেশের মানুষ ভােগ করবে, কয়েকজন মানুষকে তা ভােগ করতে দিতে পারি না। ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের বক্তৃতার উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, ভালাে মন্দ দুনিয়ার সব জায়গায় আছে। এবং যেখানে ভালাে আছে সেখানে মন্দও আছে। অশান্তি আছে বলে শান্তি খুঁজে পাওয়া যায়। সব দেশে এই ধরনের বিপ্লবের পর একটা শ্রেণির জন্ম হয়। কিন্তু কালের চক্রে তা নিঃশেষ হয়ে যায়। তিনি বলেন, দুর্নীতি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। সরকার একা তা বন্ধ করতে পারে না। ছাত্রলীগ তাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে চায় শুনে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। কিন্তু তিনি বলেন, যারা সংগ্রাম করতে চাও, তাদের উচিত হবে, আয়নায় চেহারাটা দেখে নেওয়া। তা না হলে ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধু বলেন, দেশকে গড়ে তুলতে হলে নতুন প্রতীক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজে লাগতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সব ছাত্র খারাপ এই কথা সত্য না। চট্টগ্রাম উপাচার্য যদি ছাত্রদেরকে পরীক্ষা দিতে বলেন, তবে তিনি অন্যায় করেন নাই। ছাত্রদের তার কথা শােনা উচিত। ছাত্রদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এখন তােমাদের শিক্ষার সময়। তােমাদের কাছে আমাদের অনেক আশা, তােমরা শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান করাে। কিন্তু আল্লাহর ওয়াস্তে একটু লেখা পড়া করাে মানুষ হও। ছােট ছােট আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের মানুষকে সংঘবদ্ধ করতে হবে। তা না হলে দুস্কৃতি বন্ধ করা যাবে না বলে তিনি মতাে প্রকাশ করেন। পূর্বাহ্নে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি জনাব মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, এত বড় সংগঠন নিয়ে তারা সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ছাত্রসমাজ আজ নকলবাজ, মদ্যপায়ী ও হাইজাকার বলে পরিচিত। আজ যে, হতাশার সৃষ্টি হয়েছে, তা দূরীকরণের জন্য তিনি বঙ্গবন্ধুকে পথ নির্দেশ করতে অনুরােধ জানান। সাধারণ সম্পাদক জনাব শফিউল আলম প্রধান বলেন, ছাত্রসমাজের একটি অংশ আজ দুর্নীতির শিকারে পরিণত হয়েছে। তিনি শিক্ষা কমিশনের রিপাের্ট প্রকাশের দাবী জানান। তিনি বলেন, যারা বাংলাদেশের ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মার উপর দাঁড়িয়ে বাড়ি গাড়ি করেছে, ছাত্রলীগ তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। ১৯৫১ সাল থেকে যারা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ অলংকিত করেছেন, তাদেরকে মঞ্চে বসানাে হয় এবং তারা সবাই সংগঠনের উন্নতি কামনা করে শুভেচ্ছা প্রদান করেন। গতকালের অনুষ্ঠানে তাদের মধ্যে যারা উপস্থিত ছিলেন তারা হলেন জনাব কামারুজ্জামান, জনাব এম এ ওয়াদুদ, জনাব আবদুল মােমিন তালুকদার, শাহ মােয়াজ্জেম হােসেন, জনাব কে এম ওবায়দুর রহমান, জনাব আবদুর রউফ, জনাব তােফয়েল আহমদ এবং শেখ শহীদুল ইসলাম। যারা উপস্থিত থাকতে পারেননি তারা হলেন জনাব রফিকুল্লাহ চৌধুরী, শেখ ফজলুল হক মণি, জনাব সিরাজুল আলম খান, জনাব মাজহারুল হক জনাব আবদুর রাজ্জাক, জনাব ফেরদৌস আহমদ কোরেশী ও জনাব নুরে আলম সিদ্দিকী।৫৯

রেফারেন্স: ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪, দৈনিক বাংলা
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত