রাষ্ট্রপতির ৫০ নম্বর আদেশ বাতিলের সুপারিশ
জাতীয় সংসদ: শুক্রবার জাতীয় সংসদে নিবর্তনমূলক আটকের কতিপয় গুরুতর অপরাধের দ্রুততর বিচার ও কার্যক্রম শাস্তি বিধানের ব্যবস্থা সম্বলিত বিশেষ ক্ষমতা বিল ১৯৭৪ এবং আঞ্চলিক জলসীমা ও নৌ চলাচল অঞ্চল ঘােষণার নিমিত্ত আঞ্চলিক জলসীমা ও নৌ-চলাচল অঞ্চল বিল ১৯৭৪ সহ মােট ৬ টি বিল পেশ করা হয়। বিশেষ ক্ষমতা বিলে উল্লেখিত অপরাধসমূহের মধ্যে রয়েছে, রাষ্ট্র বিরােধী অপরাধ, ডাকাতি, নাশকতামূলক কার্যকলাপ, মজুতদারী, কালােবাজারী, অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্যের বেআইনি মালিকানা এবং আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্যের সাহায্য অপরাধ সংগঠন প্রভৃতি। আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী মি. মনােরঞ্জন ধর কর্তৃক পেশকৃত এই বিল কতিপয় গুরুতর ধরনের অপরাধের ব্যাখ্যা এবং নিবর্তনমূলক আটকের ব্যাপারে সরকারকে ক্ষমতা প্রদানে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বিলে ১৯৫২ সালের নিরাপত্তা আইন, ১৯৫৮ সালের জননিরাপত্তা অর্ডিন্যান্স এবং বাংলাদেশ তফসিলী অপরাধ (স্পেশাল ট্রাইবুনাল) আদেশ অর্থাৎ রাষ্ট্রপতির ৫০নং আদেশ বাতিল করার সুপারিশ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত নতুন আইনের সাথে সামঞ্জস্যহীন না হলে নিরাপত্তা আইন এবং জননিরাপত্তা অর্ডিন্যান্স বলে গৃহীত ব্যবস্থা এবং প্রস্তাবিত আইন কার্যকর হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির ৫০ নং আদেশের আওতায় আনীত সকল বিচারাধীন মামলা অক্ষুন্ন রাখারও প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বিলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, দেশরক্ষা, বিদেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, রাষ্ট্র অথবা জনসাধারণের নিরাপত্তা, বিভিন্ন শ্রেণির লােকদের মধ্যে সখ্যতা, আইন-শৃঙ্খলা, রাষ্ট্রের আর্থিক স্বার্থ প্রভৃতি বিষয়ে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী এবং জনসাধারণের মধ্যে সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী কোন লােককে এরূপ কাজ করা থেকে বিরত করার জন্য আটক রাখা এবং বাংলাদেশের নাগরিক না এমন লােককে একই উদ্দেশ্যে দেশ থেকে বহিষ্কার করার ক্ষমতা সরকারকে প্রদানের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। তাতে আরও বলা হয় যে প্রস্তাবিত আইনের জন্য যখন প্রয়ােজন হবে, তখন সরকার উপদেষ্টা বাের্ড গঠন করতে পারবে। তাছাড়া বিশেষ কতিপয় দলিলপত্র নিষিদ্ধ করা, কতিপয় বিষয় প্রকাশের উপরে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরােপ, নাশকতামূলক সংগঠনাদি নিরােধ, কতিপয় ধরনের সমিতি অথবা ইউনিয়ন গঠনে বিধিনিষেধ, কোন কোন স্থান কিংবা এলাকাকে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘােষণার অধিকারও সরকারকে প্রদানের সুপারিশ করা হয়। পত্রপত্রিকাসহ এইরূপ কোনাে দলিলে ক্ষতিকারক কিছু থাকলে তা বিক্রয়, বিতরণ কিংবা পুনর্বার প্রকাশনা নিষিদ্ধ করা যাবে এবং তার সকল কপি সরকার বাজেয়াপ্ত করবে। বাংলাদেশের নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশের সাথে বিদেশি রাষ্ট্রসমূহের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে অথবা জনশৃঙ্খলার কারণে সরকার যদি মনে করে তাহলে এতদ সংক্রান্ত কোন বিষয় এবং বিষয়াদি স্কুটিনির জন্য মুদ্রাকর, প্রকাশক অথবা সম্পাদককে তা কর্তৃপক্ষের নিকট পেশ করার নির্দেশ দিতে পারবে। বিষয়টি পেশ করার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কর্তৃপক্ষ তার প্রকাশনার অনুমতি বাতিল করতে পারবেন অথবা নিষিদ্ধ করতে পারবেন। একজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অথবা একজন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কোন লােককে নিবর্তনমূলক আটকের আদেশ দিতে পারবেন এবং এরূপ অবস্থায় আটকের কারণ ও অন্যান্য তথ্য তাকে অবিলম্বে সরকারের নিকট পেশ করতে হবে। সরকার অনুমােদন না করলে এরূপ আটকাদেশ ত্রিশ দিনের অধিক বহাল থাকবে না। অপর পক্ষে আটকের ১২০ দিনের মধ্যে এইরূপ সকল বিষয় উপরােক্ত উপদেষ্টা বাের্ডের সামনে পেশ করতে হবে। আটকের কারণ এবং আটককৃত ব্যক্তির বক্তব্য শ্রবণকারী এই উপদেষ্টা বাের্ড সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন অথবা হওয়ার। উপযুক্ত বিবেচিত দুই ব্যক্তি এবং একজন পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা সমন্বয়ে গঠিত হবে। আটকের ১৭০ দিনের মধ্যে বাের্ড তার রিপাের্ট সরকারের নিকট পেশ করবেন। বাের্ডের সুপারিশ মােতাবেক সরকার সংশ্লিষ্ট লােককে যথােপযুক্ত মেয়াদের জন্য আটক রাখতে পারবেন অথবা বাের্ড ভিন্ন মতাে প্রকাশ করলে তাকে তৎক্ষণাৎ মুক্তি দিতে পারবেন।
আঞ্চলিক জলসীমা ও নৌ চলাচল অঞ্চল বিল: বিলটি পেশ করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. কামাল হােসেন। তাতে বলা হয় যে, সরকার গেজেট বিজ্ঞপ্তি দ্বারা স্থল ভাগের বাহিরের সমুদ্রসীমা এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ জলসীমা ঘােষণা করতে পারবে। অনুমােদন না থাকলে কোন বিদেশি জাহাজ এই সীমানা অতিক্রম করতে পারবে না এবং অনুমােদনপ্রাপ্ত বিদেশি জাহাজকে এই। সীমানা অতিক্রমের সময় বাংলাদেশের আইন-কানুন মেনে চলতে হবে। প্রয়ােজন হলে অতিক্রমের ক্ষমতা প্রাপ্ত জাহাজের চলাচল সরকার বন্ধ করে দিতে পারবে। সরকারের পূর্ব অনুমতি ছাড়া কোনাে বিদেশি জাহাজ আঞ্চলিক জলসীমা অতিক্রম করতে পারবে না।
অন্য ৪টি বিল: তাছাড়া সংসদে অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশ সরকারি ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কর্মচারীদের বেতন নিয়ন্ত্রণ আদেশ ১৯৭২ সংশােধনকল্পে বাংলাদেশ সরকারি ও আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কর্মচারীদের বেতন নিয়ন্ত্রণ সংশােধন বিল ১৯৭৪ পেশ করেন। আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী মি. মনােরঞ্জন ধর সংসদ সদস্য (বেতন ও ভাতা) আদেশ ১৯৭৩ সংশােধনকল্পে ‘সংসদ সদস্য (বেতন ও ভাতা) (সংশােধন) বিল ১৯৭৪ পেশ করেন। অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্মচারীদের বেতন নিয়ন্ত্রণ আদেশ ১৯৭২ সংশােধনকল্পে বাংলাদেশ রাষ্ট্রয়ত্ত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্মচারীদের বেতন নিয়ন্ত্রণ সংশােধন বিল ১৯৭৪ পেশ করেন। তথ্য ও বেতার প্রতিমন্ত্রী জনাব তাহের উদ্দিন ঠাকুর বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজ স্থাপনকল্পে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিল ১৯৭৪ পেশ করেন।১
রেফারেন্স: ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪, দৈনিক ইত্তেফাক
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত