জোটনিরপেক্ষতার ক্ষেত্রে সম্মিলিত অবদান রাখবাে: টিটো
ঢাকা: যুগােশ্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট জোসেফ টিটো দৃঢ়তার সাথে অভিমত ব্যক্ত করেন যে, মৈত্রী ও বন্ধুত্বের সুদৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ বাংলাদেশ এবং যুগােশ্লাভিয়া জোটনিরপেক্ষ ক্ষেত্রে এক যােগে কাজ করে যাবে। বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে মনােরম পরিবেশে আয়ােজিত নাগরিক সংবর্ধনায় ভাষণ দানকালে প্রেসিডেন্ট টিটো একথা বলেন। এই অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি জনাব মােহাম্মদ উল্লা, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় সংসদের স্পীকার জনাব আবদুল মালেক উকিল, মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ, প্রতিমন্ত্রীবৃন্দ, জাতীয় সংসদের সদস্যগণ, কূটনৈতিক মিশনের প্রধানগণ, উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক অফিসারবৃন্দ এবং বিশিষ্ট নাগরিকগণ উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সমভিব্যহারে প্রেসিডেন্ট টিটো ও মাদাম টিটো বঙ্গভবনে নয়নাভিড়াম সবুজ প্রাঙ্গণে নির্মিত সুসজ্জিত মঞ্চে আগমন করলে সামরিক বাহিনীর ব্যান্ডে। যুগােশ্লাভিয়া ও বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানাে হয়। ইতােপূর্বে লাল আঁচল হলুদ শাড়ি। পরিহিত একদল তরুণী মাননীয় অতিথিকে বাঙালি ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে অভ্যর্থনা করেন। মাননীয় অতিথি ও মাদাম টিটো মঞ্চে আসন গ্রহণ করলে, তাঁদের পুষ্প মাল্য ভূষিত করা হয়। ঢাকার নাগরিকবৃন্দের পক্ষ থেকে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন দফতরের মন্ত্রী জনাব মতিউর রহমানের সংবর্ধনা ভাষণের জবাবে প্রেসিডেন্ট টিটো অত্যন্ত সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন যে, এই দু-রাষ্ট্র জোটনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী। তিনি বলেন, এই বিশ্বাসে বিশ্বাসী এই দু’রাষ্ট্রকে একে অন্যের সাথে ঘনিষ্ঠ করে তুলেছে। স্বাধীনতার জন্য বাংলাদেশের জনগণের সীমাহীন ত্যাগের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে প্রেসিডেন্ট টিটো আশা প্রকাশ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপ্রেরণাময় নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণ যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে শীঘ্রই সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে সক্ষম হবে। মার্শাল টিটো বলেন, উভয় রাষ্ট্র সহধর্মী অভিজ্ঞতায় সিক্ত এবং একই ধরনের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। তিনি আরও বলেন যে, বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় যুগােশ্লাভিয়ার জনগণ অত্যন্ত ঔৎসুক্যের সাথে লক্ষ্য করেছিল। পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক নির্ভর থেকে মুক্তি লাভের জন্য যখন বাংলাদেশের জনগণ সংগ্রাম করছিল, যখন বাংলার জনগণ বিশ্বের নিকৃষ্টতম গণহত্যার শিকারে পরিণত হয়েছিল, তখন বিশ্ব বিবেক একদম চুপ হয়ে ছিল। মার্শাল টিটো বলেন যে, বাংলাদেশের জনগণ। জাতীয় পুনর্গঠনের জন্য পূর্ণোদ্দমে কাজ চালিয়ে যাবে।
মাদাম টিটোর কর্মব্যস্ততা: সফররত যুগােশ্লভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটোর স্ত্রী মাদাম জোকানকা ব্রোজ বৃহস্পতিবার চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। এবং শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের অংকিত জলােচ্ছাসের বিধ্বস্ত দেশে দক্ষিণাঞ্চলে মর্মান্তিক দৃশ্যবলী প্রতিফলিত চিত্র ‘গকি’ দেখে মুগ্ধ হন। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ শফিকুল হােসেন মাদাম টিটোকে অভ্যর্থনা জানান। মাদাম টিটো, কলেজের বিভিন্ন বিভাগ এবং তরুণ শিল্পী শাহাবুদ্দিনের একক চিত্র প্রদর্শনী দেখেন। মাদাম টিটোকে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও শিল্পী শাহাবুদ্দিনের অংকিত ২ টি চিত্র উপহার দেয়া হয়।
যাদুঘর পরিদর্শন: মাদাম টিটো ঢাকা যাদুঘর পরিদর্শন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ও যাদুঘরের বাের্ড অব ট্রাজির চেয়ারম্যান ড. আবদুল মতিন চৌধুরী এবং যাদুঘরের পরিচালক ড. এনামুল হক তাকে অভ্যর্থনা জানান। মাদাম ব্রোজ গভীর আগ্রহের সাথে বিভিন্ন ঐতিহাসিক জিনিস দেখেন। মাদাম টিটো যাদুঘরে সংরক্ষিত একটি প্রাচীন ‘কাবিননামা দেখে আনন্দিত হন। কাবিননামাটিতে লেখা ছিল স্বামী প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ করতে পারবে না এবং ৬ মাসের বেশি স্ত্রীর নিকট থেকে দূরে থাকতে পারবে না।১১৪
রেফারেন্স: ৩১ জানুয়ারি ১৯৭৪, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত