You dont have javascript enabled! Please enable it! 1974.01.30 | প্রেসিডেন্ট টিটো ও বঙ্গবন্ধুর মধ্যে শীর্ষ বৈঠক | দৈনিক আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

প্রেসিডেন্ট টিটো ও বঙ্গবন্ধুর মধ্যে শীর্ষ বৈঠক

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সফররত যুগােশ্লাভ প্রেসিডেন্ট মার্শাল জোসেফ টিটো উভয় দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক সহযােগিতার বিষয় নিয়ে আলাপ-আলােচনা করেন। বাংলাদেশের প্রথম পাঁচশালা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যুগােশ্লাভ সাহায্য বিষয়ে আলােচনার উল্লেখযােগ্য বিষয় ছিল বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটো একমত হয়েছেন যে, জোটনিরপেক্ষ দেশগুলি নিজেদের স্বার্থে এমনভাবে স্বীয় সম্পদ সমন্বয় করা উচিত যাতে তেলের উচ্চ মূল্য তাদের অর্থনীতিতে আঘাত হানতে না পারে। উভয় নেতা আশঙ্কা করেছেন যে, বর্তমান তেল সংকটের সহায়তায় কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল কর্তক জোট নিরপেক্ষ দেশগুলাের ঐক্যে ফাটল ধরানাের ভয়াবহ সম্ভাবনা রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ঐক্যে ফাটল ধরানাের জন্য উক্ত স্বার্থান্বেষী মহল ইতােমধ্যেই কতিপয় সূক্ষ্ম চাল চেলেছেন। বঙ্গবন্ধু ও প্রেসিডেন্ট টিটোর মধ্যে অনুষ্ঠিত শীর্ষক বৈঠক সম্পর্কে বর্ণনা দিতে গিয়ে পররাষ্ট্র দফতরে বাংলাদেশ ও যুগােশ্লাভিয়ার মুখপাত্রদ্বয় সাংবাদিকদের জানান যে, পারস্পরিক কল্যাণে স্বীয় সম্পদ ব্যবহারের পন্থা বের করা উন্নয়নশীল দেশগুলির উচিত বলে উভয় নেতা মনে করেন। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রেসিডেন্ট টিটোর মধ্যে অনুষ্ঠিত প্রথম দফা শীর্ষ বৈঠক সকালে বঙ্গভবনে শুরু হয় এবং তা ৯০ মিনিট কাল ধরে চলে। শীর্ষ বৈঠকে বঙ্গবন্ধুকে সাহায্য করেন শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ, বাণিজ্যমন্ত্রী এ. এইচ. এম. কামারুজ্জামান, পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান প্রফেসর নুরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব জনাব রুহুল কুদ্স, পররাষ্ট্র সচিব জনাব এনায়েত করিম, অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব ও ইউরােপীয় ডেস্কের ডিরেক্টর জেনারেল জনাব রেজাউল করিম। শীর্ষ বৈঠকে প্রেসিডেন্ট টিটোকে সাহায্য করেন যুগােশ্লাভ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ। উভয় নেতা পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় বিশেষ করে উভয় দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযােগিতার বিষয় পর্যালােচনা করেন। তারা অর্থনৈতিক সহযােগিতা আরাে সম্প্রসারিত করার সম্ভাবনা নিয়ে আলাপ আলােচনা করেন। জানা গেছে যে, যেসব দেশে সহযােগিতার মাধ্যমে উভয় দেশ লাভবান হতে পারে সেসব হল কৃষি, সেচ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে তা প্রেসিডেন্ট টিটোকে অবহিত করেন। মার্শাল টিটো এই সমস্যা উত্তরণে বাংলাদেশকে তাঁর দেশের সম্ভাব্য সকল প্রকার সাহায্য দেবে বলে আশ্বাস দেন। বঙ্গবন্ধু ও প্রেসিডেন্ট টিটো খুব শীঘ্রই আরাে একটি জোটনিরপেক্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠানের বিরােধী। তবে উভয় নেতা বিশ্ব শান্তির স্বার্থে আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ কার্যকর করার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরােপ করেন। মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কে উভয় নেতা এই মর্মে ঐক্যমত হন যে, অধিকৃত আরব এলাকা থেকে সম্পূর্ণভাবে ইসরাইলী সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়া হলেই মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি সুনিশ্চিত হবে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের প্রতি অনুগত থেকে ইসরাইলকে অবশ্যই অধিকতর আরব এলাকা থেকে সৈন্য সরিয়ে নিতে হবে বলে তারা মতাে প্রকাশ করেন।১১১

রেফারেন্স: ৩০ জানুয়ারি ১৯৭৪, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত