You dont have javascript enabled! Please enable it!

টিটোর ঐতিহাসিক সংবর্ধনা

ঢাকা: যুগােশ্লাভিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান সেনানী জোটনিরপেক্ষ দেশসমূহের অন্যতম শীর্ষ স্থানীয় নেতা, বাঙালি জাতির দুঃসময়ের অকৃত্রিম বন্ধু যুগােশ্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল জোসেফ ব্রজ টিটো পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে নয়াদিল্লি হতে বিকেল ৩-৩০ মিনিটে রাজধানী ঢাকা নগরীতে পৌছেন। বিকেল ৩-৩০ মিনিটে তেজগাঁও বিমান বন্দরে মহান রাষ্ট্রীয় অতিথি মার্শাল টিটোকে বহনকারী বিশেষ বিমানটি অবতরণ করলে চারিদিকে আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়। প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটোর সাথে রয়েছেন মাদাম টিটো এবং একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন। প্রতিনিধিদল। বিশেষ বিমান হতে অবতরণ করার সাথে সাথেই সাড়ে সাত কোটি মানুষের দুঃসময়ের বন্ধু প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটোকে এক জাঁকজমকপূর্ণ আন্তরিক প্রাণঢালা সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। রাষ্ট্রপতি জনাব মােহাম্মদ উল্লা এবং প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির পক্ষে তেজগাঁও বিমান বন্দরে প্রথমেই মহান রাষ্ট্রীয় অতিথি প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটোকে স্বাগত জানান। রাষ্ট্রপতির স্ত্রী বেগম মােহাম্মদ উল্লা মাদাম ইয়ােভাস্কা ব্রজ টিটোকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। পদাতিক, নৌ এবং বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে সুসজ্জিত তিনটি দল মাননীয় অতিথি প্রেসিডেন্ট টিটোকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। এ সময়ে বাংলাদেশের। জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সােনার বাংলা আমি তােমায় ভালােবাসি’ সামরিক বাহিনীর ব্যান্ড বাজানাে হয়। পরে যুগােশ্লাভিয়ার জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। উল্লেখযােগ্য যে, এর পূর্ব থেকেই মাননীয় অতিথিকে আন্তরিক স্বাগত জানানাের জন্য তােপধ্বনি শুরু হয় এবং দু’দেশের। জাতীয় সঙ্গীত শেষ না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। মাননীয় অতিথি ‘গার্ড অব অনার’ গ্রহণের পর অত্যন্ত ধীর এবং গম্ভীরভাবে মঞ্চ থেকে নামেন। তারপর তিনি তার সম্মানে প্রদত্ত পদাদিক, নৌ এবং বিমান বাহিনীর যে তিনটি সুসজ্জিত দল ‘গার্ড অব অনার প্রদান করেন ধীর পদক্ষেপে অত্যন্ত গাম্ভীর্যতার সাথে তাদের পরিদর্শন করেন। এরপর প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটো পরিচিতি সারিতে উপস্থিত হন। সেখানে মাননীয় রাষ্ট্রীয় অতিথিকে স্বাগত জানানাের উদ্দেশ্যে দণ্ডায়মান ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পীকার জনাব আবদুল মালেক উকিল, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রীসভার ক্যাবিনেট ও স্টেটমন্ত্রীগণ, আওয়ামী লীগ, ন্যাপ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি ও আওয়ামী যুবলীগের নেতৃবৃন্দ, বৈদেশিক দূতাবাসগুলাের প্রধানগণ, জাতীয় সংসদের সদস্য ও সদস্যবৃন্দ, সামরিক ও বেসামরিক উচ্চপদস্থ কর্মচারী এবং নগরের বহু গণ্যমান্য ব্যক্তি। মাননীয় রাষ্ট্রীয় অতিথি প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটো এক এক করে প্রত্যেকের সাথে করমর্দন করেন। প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটোকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটোকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন রাষ্ট্রপতি জনাব মােহাম্মদ উল্লা এবং প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এখানে দুটি শিশু মাননীয় অতিথিকে ফুলের তােড়া উপহার দেন। পরিচয় পর্ব শেষে মাননীয় রাষ্ট্রীয় অতিথি প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটোকে সাথে নিয়ে রাষ্ট্রপতি জনাব মােহাম্মদ উল্লা সােজা বঙ্গভবনে চলে যান। মাদাম টিটোর সাথে ছিলেন বেগম মােহাম্মদ উল্লা এবং শিক্ষা দফতরের প্রতিমন্ত্রী অধ্যক্ষা বদরুন্নেছা আহমদ। সারা বিমানবন্দরে যুগােশ্লাভ এবং বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা দিয়ে সুন্দরভাবে সাজানাে হয়েছিল। বিমানবন্দর হতে বঙ্গভবন পর্যন্ত দীর্ঘ রাস্তায় বিপুল সংখ্যক মনােরম তােরণ নির্মাণ করা হয়েছিল। তােরণগুলাের গায়ে লেখা ছিল জয় বে‘প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটো জোট নিরপেক্ষতার মহান নেতা’ প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটো জিন্দাবাদ ‘যুগােশ্লাভ-বাংলাদেশ মৈত্রী জিন্দাবাদ’ প্রভৃতি। বিমান বন্দর হতে বঙ্গভবন পর্যন্ত দীর্ঘ রাস্তা। দু’দেশের পতাকা দ্বারা সুসজ্জিত ছিল। নগরের অসংখ্য মানুষ রাস্তা দিয়ে দু’পাশে দাঁড়িয়ে মাননীয় রাষ্ট্রীয় অতিথি প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটোকে নানা রকম ভাষায় জয়ধ্বনি দিয়ে আন্তরিক সংবর্ধনা জ্ঞাপন করেন। মাননীয় অতিথিকে স্বাগত জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে সমবেত জনগণের মধ্যে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী রাস্তার দু’পার্শ্বে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মাননীয় অতিথি প্রেসিডেন্ট মার্শাল জোসেফ ব্রজ টিটোর সাথে এসেছেন পররাষ্ট্র, বহির্বাণিজ, প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র ও নিরাপত্তা বিষয়ক বিশেষজ্ঞসহ ২৮ জন কর্মকর্তা, ২০ জন ব্যক্তিগত সহচর ও প্রচার মাধ্যমের ৭ জন কর্মকর্তা সহ ২৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি সাংবাদিক প্রতিনিধিদল।১০৯

রেফারেন্স: ২৯ জানুয়ারি ১৯৭৪, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!