You dont have javascript enabled! Please enable it! 1974.01.29 | সাংবাদিক সম্মেলনে জাপানি অর্থনৈতিক মিশন প্রধান | দৈনিক আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

সাংবাদিক সম্মেলনে জাপানি অর্থনৈতিক মিশন প্রধান

ঢাকা: জাপানি অর্থনৈতিক মিশনের নেতা মি. এস নাগানাে মঙ্গলবার হােটেল ইন্টারকন্টিন্যান্টালে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন যে, বাংলাদেশের নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে জনসাধারণ যদি জাপানিদের ন্যায় কঠোর পরিশ্রম করে, তা হলে বাংলাদেশের পাঁচশালা পরিকল্পনার সকল প্রকল্পই বাস্তবায়ন করা যাবে বলে তাঁর মিশনের সদস্যরা বিশ্বাস করেন। এর জন্য অবশ্য বিশ্ব সহযােগিতারও প্রয়ােজন রয়েছে। জাতীয় পরিকল্পনা কমিশন তার মিশনের নিকট পাঁচশালা পরিকল্পনার রূপরেখা পেশ করেছেন বলে তিনি জানান। তারা এ পরিকল্পনার বিভিন্ন খাতে সহায়তা দেয়ার ব্যাপারে নীতিগতভাবে আলােচনা করেছেন। মিশনের নেতা বলেন যে, শিল্পোন্নয়ন, কৃষি উন্নয়ন, চাউল গবেষণা, সার উৎপাদন এবং গ্যাস ও তেল অনুসন্ধানের বিষয় আলােচনা করেছেন। জাপানি বিশেষজ্ঞরা গ্যাস ও তেল অনুসন্ধানের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আরাে আলাপ-আলােচনা চালাবেন। মি. নাগানাে প্রকাশ করেন যে, জাপান সরকার বাংলাদেশে ভারী মেটালিক শিল্প স্থাপনে সাহায্য করবে। জাপানি প্রতিষ্ঠানসমূহ বাংলাদেশে পুঁজি বিনিয়ােগ করতে চাইলে তার জন্য তারা স্বতন্ত্রভাবে আলাপআলােচনা করবেন। প্রতিটি বিষয় স্বতন্ত্রভাবে বিবেচনা করা হবে। বঙ্গোপসাগরে তৈল অনুসন্ধানের বিষয়টিও জাপানি বিশেষজ্ঞরা আলােচনা করবেন বলে জাপানি অর্থনৈতিক মিশনের নেতা প্রকাশ করেন। জাপানি সরকারই এই মিশন প্রেরণ করেছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক রূপরেখা জরিপ এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের সব খাত সম্পর্কে তাদের সরকারের নিকট সুপারিশ পেশ করাই তার মিশনের লক্ষ্য বলে মি. নাগানাে উল্লেখ করেন। তজ্জন্য প্রতিনিধি দলের বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ রয়েছে বলে মি. নাগানাে প্রকাশ করেন। মি. নাগানাে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর জাপানি জাতীয় পুনর্গঠন সংস্থার প্রেসিডেন্ট হিসেবে যুদ্ধবিধ্বস্ত জাপানের পুনর্গঠনের বিরাট কাজে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি জাপানের শিল্পপতি ও বণিক সমিতির প্রেসিডেন্ট এবং জাপানি প্রধানমন্ত্রীর বৈদেশিক বাণিজ্যের চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। কাজেই বাংলাদেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ বলে এর বিভিন্ন সমস্যা আলােচনা করেন। এদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য সহায়তা করার উদ্দেশ্যে জাপান সরকারের নিকট সুপারিশ করার জন্য তাঁর নেতৃত্বে অর্থনৈতিক কমিশন প্রেরণ করা হয়েছে। তার সঙ্গে জাপান শক্তি উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানসহ জাপানের বড় বড় শিল্প গ্রুপের নেতারা মিশনের সদস্য হিসেবে এসেছেন, এর থেকে এই মিশনের সফরের গুরুত্ব উপলব্ধি করা যায় বলে মিশনের নেতা উল্লেখ করেন।
সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রসঙ্গ: জাপান বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে সাহায্য করবে কিনা জানতে চাওয়া হলে মিশনের নেতা বলেন যে, অবাধ অর্থনীতি বা সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি যা চালু থাকুক না কেন, প্রত্যেক দেশের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা। জাপান বাংলাদেশের জনসাধারণের মান উন্নয়নের জন্য এখানকার সরকারের আহ্বানে এই উদ্দেশ্যে সাহায্য ও সহযােগিতা করে যাবে। মিশনের নেতা বলেন যে, তারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর অনুরােধে প্রস্তাবিত যমুনা ব্রীজের স্থান পরিদর্শন করেন। মি. নাগানাে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য এখানকার জনগণকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন যে, জাপানিরা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতার সংগ্রাম গভীরভাবে লক্ষ্য করেছেন। বস্তুত আত্মত্যাগের মাধ্যমেই এই স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। জাপান ও বাংলাদেশের পতাকায় মিল থাকায় জাপানি জনসাধারণ বাংলাদেশের জনসাধারণের মনােভাবকে খুবই শ্রদ্ধা করে। বাংলাদেশকে সাহায্য দেয়ার ব্যাপারে উভয় দেশের বিশেষজ্ঞরা পরে আলােচনা চালাবেন বলে মি. নাগানাে উল্লেখ করেন। জাপান বাংলাদেশ থেকে সিল্ক আমদানি করতে পারেন বলে মি. নাগানাে উল্লেখ করেন। এই জন্য রাজশাহী সিল্ক শিল্পের উন্নয়ন করার জন্য তিনি পরামর্শ দেন। মিশনের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু, শিল্প, অর্থ, যােগাযােগ ও বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে উন্নয়ন পরিকল্পনার ব্যাপারে আলােচনা করেন। পরিকল্পনা কমিশনের সঙ্গে তারা কয়েকবার আলােচনায় মিলিত হন। তাঁরা সন্ধ্যায় বিমান যােগে ঢাকা ত্যাগের পূর্বে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এক সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎকারে মিলিত হন। মি. নাগানাে বলেন যে, তারা যে সরকারি নেতা ও অফিসারদের সঙ্গে আলাপআলােচনা ও সাক্ষাৎ করেছেন তা নয়, তারা দেশের বিভিন্ন অংশে গিয়ে সেখানকার জনসাধারণ ও সমাজকর্মীদের সঙ্গে মেলামেশা করেছেন। সকল স্থানেই জনসাধারণ তাদের আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করেছেন। এতে তারা অত্যন্ত অভিভূত হয়েছেন বলে মি. নাগানাে প্রকাশ করেন। বিভিন্ন স্থানের আওয়ামী লীগের যুব কর্মীরা তাদের শদ্ধা জানিয়েছেন বলে তিনি প্রকাশ করেন।১১০

রেফারেন্স: ২৯ জানুয়ারি ১৯৭৪, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত