You dont have javascript enabled! Please enable it!

সীমান্ত ফাঁড়ির কাজ-কারবার সম্পর্কে তদন্তের নির্দেশ

বেনাপােল: প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজ যশাের জেলার বেনাপােল সীমান্ত এলাকায় এক আকস্মিক সফরে আগমন করেন। সীমান্তের চেকপােস্ট পরিদর্শন কালে বঙ্গবন্ধু ‘নােম্যানস ল্যান্ডের’ উন্মুক্ত আকাশের নিচে প্রায় ২২ লাখ টাকা মূল্যের বিপুল পরিমাণ কাপড়চোপড় পড়ে থাকতে দেখেন। গত ডিসেম্বর মাস থেকে এই বিপুল পরিমাণ কাপড় সীমান্ত এলাকায় অযত্নে পড়ে রয়েছে। এই কাপড়ের মধ্যে অধিকাংশই শাড়ি আর লুঙ্গি। ভারত থেকে বাংলাদেশ ট্রেডিং কর্পোরেশনের আমদানিকৃত বিপুল পরিমাণ কাপড় অযত্নে নষ্ট হচ্ছে। এরূপ গােপন সূত্রে খবর পেয়ে বঙ্গবন্ধু সীমান্ত এলাকা সফরে যান। বঙ্গবন্ধু ঘটনাস্থলে ত্বরিত তদন্তের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক সেক্রেটারি ড. এ সাত্তারের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটি গঠন করা হয়। অপর দুইজন সদস্যের মধ্যে রয়েছে, টিসিবি’র একজন ডিরেক্টর এবং খুলনা শুল্ক বিভাগের একজন ডেপুটি ডিরেক্টর। ২৫ জানুয়ারির মধ্যে এ কমিটি তাদের তদন্ত রিপাের্ট পেশ করবেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে জনাব সাত্তারও এখানে আগমন করেন। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি এখানেই অবস্থান করবেন। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর সাথে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী জনাব আবদুল মােমেন তালুকদার এবং তথ্য প্রতিমন্ত্রী জনাব তাহের উদ্দিন ঠাকুরও সীমান্ত সফরে আগমন করেন। টিসিবির কাপড়-চোপড় ছাড়াও বেসরকারি অন্যান্য পার্টির ভারত থেকে আমদানিকৃত কাপড়ও অযত্নে সীমান্ত এলাকায় পড়ে রয়েছে। এর মূল্য কয়েক লাখ টাকা হবে। বঙ্গবন্ধু এলাকা ঘুরে ফিরে দেখেন এবং ব্যক্তিগতভাবে বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি বিভাগীয় কর্মচারীদের কর্তব্যে অবহেলার জন্য অত্যন্ত অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এসব পণ্যদ্রব্যের ক্লিয়ারেন্সের ব্যাপারে বিলম্বই প্রধানত অনুরূপ অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। বঙ্গবন্ধু অবিলম্বে মালগুলাের ক্লিয়ারেন্স দেয়ার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন। এছাড়াও যশােরের ডেপুটি কমিশনারকে কাপড়গুলাে রাখার জন্য চেকপােস্টের পাশে একটি শেড নির্মাণেরও নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে শুল্ক কর্মচারীগণ দাবী করেছেন, তারা যতক্ষণ পর্যন্ত না ক্লিয়ারিং এজেন্ট অথবা আমদানিকৃত পার্টির কাছ থেকে শুল্ক সম্পর্কিত আবেদনপত্র না পাবেন ততক্ষণ পর্যন্ত তারা মালের চালান দিতে পারেন না। অপরদিকে বাংলাদেশ ট্রেডিং কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, শিপার ও তাদের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল সে অনুযায়ী তারা খুলনা গােডাউনের কাছে চালান হস্তান্তরিত করেছে। ফলে উভয় পক্ষের দায়িত্বে অবহেলার পরিণতি হিসেবেই চালানকৃত পণ্য সামগ্রী মাল বহনকারী কন্ট্রাক্টররা ‘নােম্যানস ল্যান্ডে’ ফেলে রাখেন। উল্লেখযােগ্য যে, খুলনার শুল্ক কর্তৃপক্ষ গত বছর মার্চ মাসে টিসিবির কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন যে, এখন থেকে এ ধরনের সমস্ত হিসাব নিকাশ বেনাপােল তল্লাসী ঘাঁটিতেই করা হবে। কিন্তু কর্তব্য অবহেলার জন্য এ ধরনের বিশৃঙ্খলা ঘটেছে। গত সন্ধ্যায় স্থানীয় সাংবাদিকগণ এ ধরনের ঘটনার কথা জানতে পেরে ডেপুটি কমিশনারের সঙ্গে যােগাযােগ করলে এ ব্যাপারে তিনি তার অজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেন। বেনাপােল সীমান্তে বঙ্গবন্ধুর আগমনের পর পরই স্থানীয় জনগণ তা জানতে পারে। এবং সঙ্গে সঙ্গে বিপুল জনতা বঙ্গবন্ধুকে একনজর দেখার জন্য ভীড় জমাতে থাকে। উপস্থিত জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্লোগান দিতে থাকলে বঙ্গবন্ধু হাত উত্তোলন করে তার জবাব দেন।৮৬

রেফারেন্স: ২৩ জানুয়ারি ১৯৭৪, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!