আওয়ামী লীগের তিনদিন ব্যাপী কাউন্সিল অধিবেশন সমাপ্ত
ঢাকা: বাণিজ্যমন্ত্রী জনাব এ এইচ এম কামারুজ্জামান সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক পদে জনাব জিল্লুর রহমান পুনরায় নির্বাচিত হন। দলের দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনের সমাপ্তি দিবসে আওয়ামী লীগের নয়া কর্মকর্তাগণ নির্বাচিত হন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তিনদিন ব্যাপী এই দ্বি-বার্ষিক জাতীয় সম্মেলনে নতুন সভাপতি নির্বাচিত হবার পর জনাব কামারুজ্জামান শােষণমুক্ত সমাজ গঠনে দলীয় কর্মচারীদেরকে তাদের গুরুদায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। উল্লেখ্য যে, বিদায়ী সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গত শুক্রবার সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে ঘােষণা করেন যে, তিনি আর আওয়ামী লীগের সভাপতি থাকবেন না। বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের কথা উল্লেখ করে বলেন যে, একই ব্যক্তি একই সাথে সরকারের মন্ত্রিসভায় এবং দলীয় সভাপতির পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারেন না। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অন্যান্য নব নির্বাচিত কর্মকর্তারা হলেন: সিনিয়র সহ-সভাপতি জনাব মহিউদ্দিন আহমদ, সহসভাপতি জনাব আসহাবুল হক এবং জনাব রফিকউদ্দিন ভুইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব আবদুর রাজ্জাক, প্রচার সম্পাদক সরদার আমজাদ হােসেন, দফতর সম্পাদক-জনাব আনােয়ার চৌধুরী, কৃষি সম্পাদক-জনাব রহমত আলী, শ্রম সম্পাদক-কাজী মােজাম্মেল হক, সমাজকল্যাণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক সম্পাদক-জনাব মুস্তফা সারােয়ার, মহিলা সম্পাদিকা-মিসেস সাজেদা চৌধুরী এবং কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়েছেন জনাব হামিদুর রহমান। আওয়ামী লীগের গঠণতন্ত্র অনুসারে নব নির্বাচিত সভাপতি আগামী ২১ দিনের মধ্যে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদে আরাে ২১ জন সদস্য মনােনীত করবেন। পূর্বাহ্নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রাতঃকালীন অধিবেশন রুদ্ধদার কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে দেশের সামাজিক এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে দীর্ঘ ভাষণ দেন শিল্প মন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ। বৈকালিক অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু নতুন কার্যকরী পরিষদের নাম ঘােষণাকালে উপস্থিত কাউন্সিলরগণ হাত তুলে তাদের সম্মতি জানান। নির্বাচনের পর বঙ্গবন্ধু নতুন কর্মকর্তাগণ মঞ্চে এলে উপস্থিত কাউন্সিলারদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। তারপর বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগ সভাপতির আসন ত্যাগ করে জনাব কামারুজ্জামানকে উপবেশন করতে বলেন। নতুন অধিবেশন হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে আসন গ্রহণের পর জনাব কামারুজ্জামান এক স্বল্পস্থায়ী বক্তৃতা দেন। উল্লেখ্য যে, সােভিয়েত ইউনিয়ন, ভারত, রুমানিয়া, পােল্যান্ড, যুগােস্লাভিয়া এবং বুলগেরিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন বন্ধু রাষ্ট্র থেকে প্রায় ২৫ জন প্রতিনিধি আওয়ামী লীগের এই সম্মেলনে যােগ দেন। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ শনিবার বিদেশি প্রতিনিধিবর্গ বঙ্গবন্ধুর গতিশীল নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তৃতা করেন। তিনদিন ব্যাপী এই সম্মেলনে মােট ১ হাজার ৫৬৬ জন কাউন্সিলার এবং সমসংখ্যক ডেলিগেট যােগদান করেন।৭২
রেফারেন্স: ২০ জানুয়ারি ১৯৭৪, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত