সংশােধনী, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির ভাষণের উপর ধন্যবাদ প্রস্তাব
সংসদ ভবন: জাতীয় অধিবেশনে গত ১৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির ভাষণ সম্পর্কে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির সমীপে নিয়ে উদ্ধৃতি ধন্যবাদ বার্তাটি প্রেরণ করার একটি প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে। প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন শ্রী মনােরঞ্জন ধর এবং তা সমর্থন করেন চীফ হুইপ শাহ মােয়াজ্জেম হােসেন। রাষ্ট্রপতির ভাষণ সম্পর্কে ধন্যবাদ প্রস্তাবের উপর জাতীয় সংসদের বিরােধী এবং স্বতন্ত্র সদস্যদের নেতা জনাব আতাউর রহমান খান সর্বমােট ১৫টি সংশােধনী প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। এছাড়া স্বতন্ত্র সদস্য শ্রী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ৩টি সংশােধনী প্রস্তাব, স্বতন্ত্র সদস্য জনাব আবদুল্লাহ সরকার ৭টি সংশােধনী প্রস্তাব, ন্যাপ (ভাসানী) দলীয় সদস্য সৈয়দ কামরুল ইসলাম, মােহাম্মদ সালেহ উদ্দিন সরকার ৪টি সংশােধনী প্রস্তাব জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) জনাব ময়নুদ্দিন আহমদ ৪টি সংশােধনীর প্রস্তাব এবং জনাব আবদুস সাত্তার ৪টি সংশােধনী প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
জাতীয় সংসদে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির ভাষণ সম্পর্কে ধন্যবাদ প্রস্তাবের উত্থাপক আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী শ্রী মনােরঞ্জন ধর বলেন, জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণে জাতির আশা আকাঙ্ক্ষার সম্পূর্ণ প্রতিফলন হয়েছে। তিনি রাষ্ট্রপতির ভাষণকে বাস্তব ও বস্তুনিষ্ঠ হিসেবে বলেন, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে বাস্তবের বাইরে কোন কথা বলেননি। তিনি আরও বলেন, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা এবং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন তা বাস্তবিকই বস্তুনিষ্ঠ। তিনি বলেন, কৃষি যে আমাদের দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড তা অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির ভাষণে বিশেষ গুরুত্ব লাভ করেছে। তিনি আরাে বলেন, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি যে বলেছেন, শিল্প উন্নয়ন ছাড়া দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয় তা যথার্থ। দেশের আইনমন্ত্রী অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির ভাষণের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিকের কথা উল্লেখ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি দেশের যােগাযােগ ব্যবস্থা, স্থানীয় সংস্থার নির্বাচন, শিক্ষা, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, হিংসাত্মক ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ, পররাষ্ট্রনীতি, ভারত-সােভিয়েত ইউনিয়ন সহ অন্যান্য দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অটোয়া ও আলজিয়ার্স সফর, মানবিক সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ ঘােষণা, ইসরাইলী আক্রমণের বিরুদ্ধে আরবদের পক্ষে বাংলাদেশের দৃঢ় সমর্থন দান প্রভৃতি বিষয়ে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে অত্যন্ত বাস্তব, যুক্তিসংগত ও যথার্থ মন্তব্য করেছেন।
জাতীয় সংসদে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির ভাষণের জন্য উত্থাপিত ধন্যবাদ প্রস্তাবের উপর’ সংসদে বিরােধী এবং স্বতন্ত্র সদস্যদের নেতা জনাব আতাউর রহমান খান কর্তৃক উত্থাপিত ৫টি সংশােধনী প্রস্তাবে দুঃখ প্রকাশ করে বলা হয়, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির ভাষণে দেশের প্রকৃত সামগ্রিক অবস্থা, জনগণের সমস্যা জর্জরিত জীবনের বিষয়, জনগণের সমস্যা সমাধানের আশু বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ, পাঁচশালা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়ােজনীয় পুঁজির সূত্রসমূহ, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি, জনসাধারণের দৈনন্দিন জীবনের নিরাপত্তার দারুণ অভাবের কথা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের ব্যর্থতার কথা, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের বাধা সৃষ্টির কথা, মুদ্রাস্ফীতির বিপদজ্জনক প্রবণতা, অর্থকরী ফসল পাট ও পাট শিল্প যে ধ্বংসের সম্মুখীন হয়েছে তার কারণ নির্ণয় ও প্রতিরােধ করার কথা, খাদ্য, নিত্যপ্রয়ােজনীয় দ্রব্য, দুষ্প্রপতা ও মূল্যেও বৃদ্ধি দ্রুত প্রতিরােধ করার জন্য সরকারি পদক্ষেপের কথা, চোরাচালানের বিষয়, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পে বিপুল পরিমাণ সরকারি ঋণ দান সত্ত্বেও লােকসানের কথা, সশস্ত্র বাহিনী গঠনে সরকারি পদক্ষেপের বিবরণ, দ্রব্যমূল্যের তুলনায় সরকারি কর্মচারীদের বেতনের হার সম্পূর্ণ অসামাঞ্জস্যপূর্ণের কথা এবং আমদানিকৃত পণ্যদ্রব্যের সুষম বণ্টনের ব্যাপারে সরকার ও সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলাের সম্পূর্ণরূপে বিফল হওয়ার কথা নেই।৬১
রেফারেন্স: ১৭ জানুয়ারি ১৯৭৪, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত