You dont have javascript enabled! Please enable it!

লন্ডনে বাংলাদেশের তিনটি ব্যাংকের ৩০ কোটি টাকা গচ্চা

ঢাকা: যুক্তরাজ্যে অবস্থিত বাংলাদেশের তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখা এ যাবৎ ৩০ কোটি টাকা গচ্চা দিয়েছে। লন্ডন ও বাংলাদেশের মধ্যে অবৈধ পথে মুদ্রা পাচারই এই গচ্চা যাওয়ার প্রধান কারণ। এ ছাড়া বাংলাদেশে পাউন্ডের মুদ্রামান হ্রাস, কর্তব্যকর্মে কর্মচারীদের অবহেলা, আনুষঙ্গিক সুযােগ সুবিধার অভাবে দেশ উক্ত ৩০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা হতে বঞ্চিত হয়েছে বলে প্রাপ্ত তথ্যে প্রকাশ। এর ফলে খুব শীঘ্রই যুক্তরাজ্যে অবস্থিত এই তিনটি ব্যাংকের শাখা হতে দুটি গুটিয়ে নিতে বাধ্য হবে বলে নির্ভরযােগ্য সূত্রে জানা গেছে। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে সরকারিভাবে পাউন্ডের মূল্যমান ৩০ টাকা ধার্য করা হয়েছে। পক্ষান্তরে চোরাপথে প্রতিটি পাউন্ড ৪০-৪৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ফলে যুক্তরাজ্যস্থ প্রবাসী বাঙালিরা বাংলাদেশে সরকার নির্ধারিত পথে টাকা পাঠানাের পরিবর্তে অবৈধ পথে পাঠিয়ে থাকে। নির্ভরযােগ্য সূত্রে জানা গেছে বাংলাদেশ প্রতিমাসে অবৈধ পথে প্রবাসী বাঙালিরা প্রায় ৫ কোটি টাকা পাঠিয়ে থাকে। ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠানাের পরিবর্তে প্রবাসী বাঙালিরা অবৈধ পথে টাকা পাঠাতে উৎসাহী। তার কারণ সরকার ১ পাউন্ড বাবদ ৩০ টাকা দিয়ে থাকে। পক্ষান্তরে চোরাপথে টাকা পাঠালে প্রতি পাউন্ডে ৪০-৪৫ টাকা পাওয়া যায়। এছাড়া যুক্তরাজ্যস্থ বাংলাদেশের তিনটি ব্যাংকের শাখা বন্ধ করে দেয়ার জন্য একটি সংঘবদ্ধ মুদ্রা পাচারকারী দল কাজ করছে বলে জানায়। এ দলটি দ্বারা অবৈধ পথে টাকা পাঠানাের জন্য প্রবাসী বাঙালিদের উৎসাহিত করে থাকে। তাতে প্রবাসী বাঙালিরা ব্যাংকের পরিবর্তে চোরাপথে টাকা পাঠিয়ে থাকে। ঢাকা বিমানবন্দরে কিছু কর্মচারীও এই টাকা পাচারের সাথে জড়িত রয়েছে বলে প্রকাশ। ব্যাংকগুলাে জাতীয়করণের পর কর্মচারীরা আগেকার সুযােগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাদের কাজকর্মের দক্ষতাও বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। ফলে ব্যাংক ব্যবসার প্রতি কর্মচারীদের যে উৎসাহ ছিল, তা এখন নেই। আগে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠানাের পরিবর্তে কর্মচারীরা কমিশন পেত। বর্তমানে তা আর দেয়া হয় না। এছাড়া এখন আর বােনাস পাওয়া যায় না। কর্মচারীদের আগেকার সুযােগ সুবিধার অভাবে তারা ব্যাংকের ব্যবসা সম্প্রসারণের ব্যাপারে তত উৎসাহী নয়। ব্যাংকগুলাে পর্যাপ্ত ব্যবসার অভাবে বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে। অন্যদিকে উক্ত তিনটি শাখার মাথা ভারী প্রশাসনিক ব্যয়ে এই সমস্যাকে আরও প্রকট করে তুলেছে বলে জানা গেছে। বর্তমানে প্রশাসনিক কাজে উক্ত তিনটি ব্যাংকের প্রায় ২ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে বলে প্রকাশ। বিশ্বস্তসূত্রে প্রকাশ, এ ছাড়া পােস্ট অফিসের মাধ্যমে প্রবাসী বাঙালিরা আগে যে পরিমাণ টাকা পাঠাতাে তার পরিমাণ বর্তমানে শতকরা প্রায় ৯৮ ভাগ হ্রাস পেয়েছে। তার কারণ পােস্ট অফিসের মাধ্যমে টাকা পাঠানাে হলে গ্রাহকদের টাকা পেতে অত্যধিক বিলম্ব হয়। অন্যদিকে চোরাপথে টাকা পাঠানাে হলে অতি অল্পসময়ে গ্রহীতারা টাকা পায়। ফলে প্রবাসী বাঙালি পােস্ট অফিস ব্যতিত চোরাপথেই টাকা পাঠাতে আগ্রহী। এর ফলে প্রতিমাসে ৫ কোটি করে বছরে প্রায় ৬০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের জন্য এটা একটা মারাত্মক অর্থনৈতিক বিপর্যয় বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য বাংলাদেশ প্রবাসী বাঙালিদের মাধ্যমে বছরে প্রায় ১’শ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারে। এই বিপুল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য সরকারকে অবিলম্বে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়ােজন বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন। এ ছাড়া চোরাপথে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা আসার ব্যাপারে সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। প্রবাসী বাঙালিরা ও ব্যাংক কর্মচারীরা যাতে বৈধ পথে টাকা পাঠাতে উৎসাহিত হন তার জন্য আনুষঙ্গিক সুযােগ-সুবিধার ব্যবস্থা গ্রহণ করাও প্রয়ােজন বলে পর্যবেক্ষক মহল মতাে প্রকাশ করেন।৪৯

রেফারেন্স: ১৪ জানুয়ারি ১৯৭৪, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!