জনগণকে আতঙ্কমুক্ত করতেই সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে
ঢাকা: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব জিল্লুর রহমান এক বিবৃতিতে জানান, সরকার কর্তৃক ১৪৪ ধারা জারীর মাধ্যমে সভা, শােভাযাত্রা এবং মিছিলের উপর নিষেধাজ্ঞার ফলে আগামী ২০ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে আওয়ামী লীগের গণজমায়েত অনুষ্ঠিত হবে না। তবে সরকারে উক্ত নিষেধাজ্ঞার ফলে দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনের অন্যতম কর্মসূচি ব্যাহত হবে না বলে জনাব জিল্লুর রহমান জানান। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দলের প্রতিটি কর্মী এবং আপামর জনসাধারণকে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও অগ্রগতি ব্যাহত করার অশুভ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ এবং নয়া উপনিবেশবাদের দালাল যে চক্রটি সক্রিয় রয়েছে তাদের নাশকতামূলক কার্যকলাপ প্রতিহত করার আহ্বান জানান। জনাব জিল্লুর রহমানের বিবৃতির পূর্ণ বিবরণ নিচে দেয়া হলাে:
আওয়ামী লীগের দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশন উপলক্ষে অধিবেশনের শেষদিনে চিরাচরিত রীতি মােতাবেক যথাযথভাবে অনুমতি গ্রহণ করে ২০ জানুয়ারি বিকেল ৩ ঘটিকায় পল্টন ময়দানে এক গণজমায়েত অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এবং সিদ্ধান্ত মােতাবেক গণজমায়েতের সার্বিক প্রস্তুতিও সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু রাজনৈতিক দল নামধারী সাম্রাজ্যাবদ ও উপনিবেশবাদের ক্রীড়নক শান্তি ও শৃঙ্খলার দুশমন একটি চক্র উক্ত গণজমায়েত অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে একই দিনে পল্টন ময়দানে তথাকথিত প্রতিরােধ দিবস অনুষ্ঠানের কথা ঘােষণা করেন। এবং এ উপলক্ষ্যে নানা প্রকার উস্কানিমূলক আস্ফালনও করেন। এর ফলে জনমনে কিছুটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয় বলে মনে করে আমি এক সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকৃত পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করি। ফলে বিভ্রান্তির অবসান ঘটে। এবং জনগণ উক্ত অশুভ চক্রটিকে ধিক্কার দিতে থাকে। এরপর গণধিকৃত চক্রটি হালে-পানি না পেয়ে শান্তি-শৃঙ্খলা নস্যাৎ করার জন্য ষড়যন্ত্র করে এবং গণমানুষের সাধারণ জীবনযাত্রা ব্যাহত করার জন্য জঘন্য উস্কানি দিতে থাকে। ফলে জনগণের মনে ভীতি ও আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার পবিত্র দায়িত্বে উদ্বুদ্ধ হয়ে জনগণকে ভীতি ও আতঙ্কমুক্ত করার জন্য সরকার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হয় এবং সর্ব প্রকার সমাবেশ, সভা ও মিছিল নিষিদ্ধ ঘােষণা করে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সাধারণ জীবনযাত্রা অব্যাহত রাখার ও জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার অক্ষুন্ন রাখার জন্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগ গণজমায়েতের সুযােগ হতে বঞ্চিত হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই গণজমায়েতে যােগদানের লক্ষ লক্ষ মানুষ ও আওয়ামী লীগ কর্মীরা মনে ব্যথা পাবেন। কিন্তু দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সরকারি সিদ্ধান্ত নিঃশঙ্কচিত্তে আমাদের মেনে নিতে হচ্ছে। কেননা আওয়ামী লীগ যে কোনাে মূল্যে শান্তি-শৃঙ্খলা অক্ষুন্ন রেখে দেশের অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে বদ্ধপরিকর। সরকারের এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ২০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য পল্টনের গণজমায়েত বাতিল হলেও আওয়ামী লীগের প্রতিটি কর্মী ও আপামর জনসাধারণকে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও অগ্রগতি ব্যাহত করার অশুভ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ ও নয়া উপনিবেশবাদের দালালদের চক্রটি সক্রিয় রয়েছে। তাদের নাশকতামূলক কার্যকলাপ প্রতিহত করার আহ্বান জানাচ্ছি। এখানে আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলে দিতে চাই যে, সরকারের উক্ত নিষেধাজ্ঞার ফলে। আওয়ামী লীগের দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনের অন্য কোনাে কর্মসূচি ব্যাহত হবে না। পরিশেষে আমি সংশ্লিষ্ট সকলকে জানিয়ে দিতে চাই যে, আওয়ামী লীগের দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশন ১৮ জানুয়ারি বিকেল ৩ ঘটিকায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অফিস প্রাঙ্গণে যথারীতি শুরু হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উক্ত সম্মেলন উদ্বোধন করবেন।৫২
রেফারেন্স: ১৪ জানুয়ারি ১৯৭৪, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত