মাওবাদী ও উগ্রপন্থিদের ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়ান, কমিউনিস্ট পার্টি
ঢাকা: বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি দেশকে প্রগতির ধারা থেকে বিচ্যুত ও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে জটিল ও সংকটাপন্ন করে তােলার সুপরিকল্পিত অপপ্রয়াসকে ঐক্যবদ্ধভাবে মােকাবেলা করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া দেশের স্বাধীনতা অক্ষুন্ন, প্রগতির ধারা অব্যাহত এবং আইন-শৃঙ্খলা, গণজীবনের নিরাপত্তা বিধান ও শান্তি বজায় রাখার উদ্দেশ্যে চক্রান্তকারীদের শক্ত হাতে মােকাবেলা করার জন্য সরকারের প্রতিও আহ্বান জানানাে হয়েছে। দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সংবাদপত্রে প্রদত্ত বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির এক বিবৃতিতে বলা হয় যে, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও মাওবাদী চীন পাকিস্তানের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার সংগ্রামকে নস্যাৎ করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। কিন্তু ভারত, সােভিয়েত প্রভৃতি বন্ধু দেশসমূহের সাহায্য ও সহযােগিতায় আমাদের জনগণের বিজয় সূচিত হয়। কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের পর মার্কিন-চীনপাকিস্তান আজও আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও প্রগতির বিরুদ্ধে চক্রান্ত অব্যাহত রেখেছে। বিবৃতিতে আরাে বলা হয় যে, দেশে বর্তমানে আইনানুগভাবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পরিচালিত আওয়ামী লীগ সরকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কতকগুলাে। প্রগতিশীল নীতি অনুসরণ করায় দেশের অভ্যন্তরে সমাজ প্রগতির শত্রুরা প্রথম হতেই নানাভাবে চক্রান্ত চালাতে শুরু করে। এদের কিছু অংশ মাওবাদের নামে দেশে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি ও আইন-শৃঙ্খলা ধ্বংস করার ভিন্ন প্রচেষ্টা চালাতে থাকে। গত ১৬ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক বিজয় দিবসের উৎসবকে পণ্ড করার জন্যও এরা অপচেষ্টা চালায়। মওলানা ভাসানী প্রমুখ ব্যক্তিগণ এদের প্রতি খােলাখুলি আশীর্বাদ করলেও জনগণ কর্তৃক এরা ধিকৃত হয়েছে। প্রগতি বিরােধীর অপর একটি উগ্র অংশ দেশে বিরাজমান অর্থনৈতিক সংকট, দুর্নীতি, সরকারের কতকগুলাে ব্যর্থতা প্রভৃতির সুযােগে মাথা চাড়া দিয়ে উঠে ও দেশে প্রচলিত গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থার সুযােগ নিয়ে উস্কানিমূলক কথাবার্তা ও কার্যকলাপ শুরু করে। এদের উদ্দেশ্য দেশের প্রতিষ্ঠিত সরকারকে হেয় করা ও জনগণের মনে হতাশা ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সন্ত্রাস সৃষ্টি করে দেশকে প্রগতির পথ থেকে বিচ্যুত করা। বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের সমস্যা নিয়ে ন্যায়সংগত আন্দোলন ও সরকারের ভুলত্রুটি সমালােচনা করার গণতান্ত্রিক অধিকার দেশে প্রচলিত রয়েছে। কিন্তু এই অধিকারের সুযােগ নিয়ে দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে চক্রান্ত এবং গণজীবনের শান্তি ও নিরাপত্তা নস্যাৎ করতে দেয়া যাবে না। দেশের প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলাে যখন ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করেছে, প্রগতির শত্রুরা তখন অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা, সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টি ও দেশকে রক্তপাতের দিকে ঠেলে দেয়ার জন্য উস্কানি দিতে শুরু করেছে। দেশের এই পরিস্থিতিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সরকারের কর্তব্য বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।৪২
রেফারেন্স: ১২ জানুয়ারি ১৯৭৪, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত