You dont have javascript enabled! Please enable it! 1949.03 | হাজং বিদ্রোহের ওপর সংবাদপত্রের প্রতিবেদন ও সরকারী প্রেস নোট - সংগ্রামের নোটবুক

শিরোনামঃ হাজং বিদ্রোহের ওপর সংবাদপত্রের প্রতিবেদন ও সরকারী প্রেস নোট

সুত্রঃ পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতিঃ বদরুদ্দীন উমর

তারিখঃ ফেব্রুয়ারী-মার্চ, ১৯৪৯

৪ঠা ফেব্রুয়ারীতে লেঙ্গুরা হাটের সামনে যে কৃষক-সিপাহী সংঘর্ষ হয় সে বিষয়ে ময়মনসিংহ থেকে ১০ই ফেব্রুয়ারী প্রেরিত দৈনিক আজাদ পত্রিকায় প্রকাশিত নিম্নলিখিত বিবরণটি এদিক থেকে উল্লেখযোগ্যঃ জানা গিয়াছে যে, গত ৪ঠা ফেব্রুয়ারী মোমেনশাহী জেলার আসাম-পূৰ্ব্ববঙ্গ সীমান্তবর্তী এলাকাবাসী হাজং ও আদিবাসীগণ লাঠি, তীর, ধনুক, বর্শা ও রামদা লইয়া লেঙ্গুরাস্থিত পুলিশ ক্যাম্প আক্রমণ করে। হাজংদের মধ্যে কমু্যনিষ্ট প্রভাব বলিয়া প্রকাশ। তাহারা দুই দলে বিভক্ত হইয়া পুলিশদিগকে আক্রমণ করে, কিন্তু পুলিশের পাল্টা আক্রমণ ও গুলি চালনার ফলে হটিয়া যায়। গুলিবর্ষণের ফলে ১০ জন হাজং নিহত ও আরও কয়েকজন আহত হইয়াছে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী প্রেরণ করা হয় এবং অবস্থা আয়ত্তাধীন আসিয়াছে বলিয়া প্রকাশ। পুলিশ হাজংদের কয়েকটি গ্রামে হানা দিয়া ২৮ জনকে গ্রেফতার করিয়াছে এবং বহু তীর, ধনুক ও বর্শা উদ্ধার করিয়াছে। জানা গিয়াছে যে, হাজংরা কিছুকাল যাবৎ সরকারের টঙ্ক ও কর সংগ্রহ পরিচালনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করিয়া আসিতেছে। টঙ্ক ব্যবস্থা অনুসারে নগদ টাকার পরিবৰ্ত্তে উৎপন্ন শস্যের একটি নিদিষ্ট অংশ জমিদারগণকে দিতে হয়। প্রকাশ যে, গত ৪ঠা ফেব্রুয়ারী ঘটনার পূর্বে উক্ত একই এলাকার অন্তর্গত বালিগঞ্জে সীমান্ত বাহিনীর একজন সৈন্য নিহত হয়। ময়মনসিংহ থেকে ১২ই ফেব্রুয়ারী প্রেরিত এবং দৈনিক আজাদ’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি রিপোর্ট ৯ই ফেব্রুয়ারী দুটি ঘটনা সম্পর্কে বলা হয়ঃ জানা গিয়াছে, গত ৯ই ফেব্রুয়ারী মোমেনশাহী জেলার পূর্ব পাক-আসাম সীমান্তবর্তী উত্তর এলাকার গারো হাজং কমিউনিষ্টগণ লাঠি, তীর, ধনুক, বর্শা ইত্যাদি মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত হইয়া দুর্গাপুর থানার নিকটস্থ ‘সেঙ্গু এবং হালুয়াঘাট থানার উপকণ্ঠস্থ পুলিশ ক্যাম্প আক্রমণ করিলে, পুলিশ বাহিনী পাল্টা আক্রমণ করিয়া গুলি চালায়। ফলে, হালুয়াঘাট থানার নিকটস্থ ঘটনা কেন্দ্রে কমিউনিষ্ট পক্ষের ১ জন নিহত এবং ৬ জন আহত হইয়াছে বলিয়া জানা গিয়াছে। লেঙ্গুরাস্থ ঘটনা কেন্দ্রের হতাহতের খবর এখনও পাওয়া যায় নাই। প্রকাশ, পূর্ব প্রকাশিত সরকারের টঙ্ক ও খাদ্য সংগ্রহনীতির বিরুদ্ধাচারনই এই সমস্ত সংঘর্ষের মূল কারণ। আর এক খবরে প্রকাশ, জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের অনুপস্থিতিতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট হালুয়াঘাট, নলিতাবাড়ী এবং শ্রীবর্দী থানাত্রয়ে ১৪৪ ধারা জারী করিয়াছেন। আরও প্রকাশ, অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী এবং ই, বি, রেজিমেন্ট রাইফেলস উক্ত অঞ্চলে প্রেরণ করা হইয়াছে। বর্তমান অবস্থা কিয়ৎ পরিমাণে শান্ত। ময়মনসিংহের হাজং অঞ্চলে কৃষক-সিপাহী সংঘর্ষ এবং সিপাহীদের কৃষক নির্যাতন সম্পর্কে এই সময় সংবাদ প্রকাশিত হয়। এই সব সংবাদের প্রতিবাদ করে পূর্ব বাঙলা সরকার ১৬ই ফেব্রুয়ারী ময়মনসিংহের উত্তরাঞ্চলের পরিস্থিতি সম্পর্কে নিম্নলিখিত প্রেসনোট জারী করেনঃ গত ১৫ই ফেব্রুয়ারী ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’ ও ‘হিন্দুস্তান ষ্ট্যান্ডার্ড’-এ প্রকাশিত ইউনাইটেড প্রেস অব ইন্ডিয়ার একটি খবরের প্রতি পূর্ববঙ্গ সরকারের দৃষ্টি আকৃষ্ট হইয়াছে। মোমেনশাহী জেলার আংশিক বহির্ভূত এলাকায় সাম্প্রতিক গোলযোগ সম্পর্কে উক্ত সংবাদ মিথ্যা বিবরণ দেওয়া হইয়াছে। উহাতে বলা হইয়াছে ।

যে, বাধ্যতামূলক ধান্য সংগ্রহ পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ ধান দিতে অস্বীকার করায় প্রায় একশত জনেরও অধিক কৃষককে গুলি করিয়া নিহত করা হইয়াছে। প্রকৃত ঘটনাটি এইরূপঃ উক্ত এলাকার হাজংদের আন্দোলন প্রায় স্থানীয় বৈশিষ্ট্যস্বরূপ : ১৯৪৬ সালে একবার তাহাদের আন্দোলন এত ব্যাপক এবং দীর্ঘস্থায়ী হইয়াছিল যে, অবস্থা আয়ত্তাধীনে আনিতে বাংলা সরকারকে পুলিশ প্রেরণ করিতে হইয়াছিল। জনসাধারণের অনুন্নত অবস্থার সুযোগে টঙ্ক প্রথার বিরুদ্ধে পুরাতন আন্দোলন পুনরায় আরম্ভ করা হইয়াছে। কমু্যনিষ্টদের নেতৃত্বে হাজংরা কয়েকটি সভা ও শোভাযাত্রায় টঙ্ক প্রথা, খাজনা ও ধান্য সংগ্রহের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলে। তাহারা বর্শা, দাও প্রভৃতি মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ছিল। কয়েকবার তাহারা ধানও লুট করে। ২৮শে জানুয়ারী সীমান্ত পুলিশ দলের জনৈক নায়েক তাহদের হস্তে নিহত হয়। একজন পুলিশ কনষ্টেবলকেও হাজংরা বেদম প্রহার করে। গত ৪ঠা ফেব্রুয়ারী কমু্যনিষ্ট হাজংদের এক বিরাট জনতা বর্শা ও দাও প্রভৃতি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হইয়া লেঙ্গুরা থানার পুলিশ ক্যাম্পটি পরিবেষ্টন করিয়া ফেলে। পুলিশ তাহাদিগকে ছত্রভঙ্গ করিতে অসমর্থ হইয়া গুলি চালায়। দুই ঘন্টা পর অপেক্ষাকৃত বৃহৎ আরেকটি জনতা ঐ স্থানে জমায়েত হয়। পুলিশ তাহাদিগকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য আবার গুলি চালায়। ৯ই ফেব্রুয়ারী দুর্গাপুর ও হালুয়াঘাট থানায় দুইটি স্থানেও অনুরূপ ঘটনা ঘটে। প্রত্যেক ক্ষেত্রেই জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য পুলিশ বারবার সাবধান করে। জনতা যখন ভীতি প্রদর্শন করে এবং অবস্থা যখন আয়ত্তের বাহিরে চলিয়া যাওয়ার উপক্রম হয়, তখনই পুলিশ গুলি করে। এ পর্য্যন্ত মোট ১৩ জন নিহত হইয়াছে। বর্তমানে অবস্থা শান্ত। ১৪ই ফেব্রুয়ারী ছাত্র ফেডারেশনের* ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ময়মনসিংহের হাজং কৃষকদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণ ও কৃষক হত্যার প্রতিবাদে ১৬ই ফেব্রুয়ারী তারিখ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একটি ছাত্রসভা আহবান করে। মোহাম্মদ বাহাউদ্দীনের সভাপতিত্বে সভার কাজ শুরু হওয়ার পরই দেখা যায় একদল ছাত্র জোরপূর্বক সভা ভেঙ্গে দিতে বদ্ধপরিকর। এদের মধ্যে একজন সভা কে আহবান করেছে সেটা জানতে চায় এবং সভাপতির হাত ধরে টেনে তাঁকে চেয়ার থেকে ফেলে দেয় এবং অন্য একজন সভাপতির চেয়ারটি পার্শ্ববর্তী পুকুরে নিক্ষেপ করে। এরপর সেই গুন্ডা ছাত্রদল সভাটির উদ্যোক্তাদের উপর ইচ্ছেমত কিল, চড়, ঘুষি ইত্যাদি চালাতে থাকে। ফলে সভাস্থলে এক দারণ হট্টগোল গন্ডগোলের সৃষ্টি হয় এবং সভার কাজ চালানো আর সম্ভব হয় না। এই গুন্ডামির বিরুদ্ধে অবশ্য সভাস্থলেই একদল ছাত্র তীব্র প্রতিবাদ জানান। এদের একজনের একটি পত্র নওবেলালে প্রকাশিত হয় এবং তাতে তিনি বলেনঃ সবাই বুঝিতে পারেন, যাহারা গুন্ডামি করিয়া সভা ভাঙ্গিয়া দেন তাহারা শুধু ছাত্র ফেডারেশনেরই শক্ৰ নন, তাহারা প্রত্যেকটি গণতন্ত্রকামী ছাত্র আন্দোলনেরই দুষমন। এরাই বাংলা ভাষা আন্দোলনে সরকারের দালাল সাজিয়েছিলন। এরাই জমিদারী উচ্ছেদ ব্যাপারে সরকারের জমিদার পোষণ নীতির সমর্থন করেন। সর্বোপরি এরা হাজং চাষীদের উপর গুলিবর্ষণ নীতির দিক দিয়া সমর্থন করেন।***

দেশ বিভাগের পূর্বে প্রতিষ্ঠিত কমিউনিষ্ট প্রভাবাধীন একটি ছাত্র প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটি সরকারী ও বেসরকরী প্রতিক্রিয়াশীলদের আক্রমণে এমই বিপর্যন্ত হয়ে পড়ে যে, তার অস্তিত্ব রক্ষা করা আর সম্ভব হয় না এবং অল্পকাল পরেই তার বিলুপ্তি ঘটে। বউ।

এই ধরনের ছাত্র প্রতিষ্ঠান তখন ঢাকাতে একটিই ছিল। তার নাম নিখিল পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ সরকার ও মুসলিম লীগের পৃষ্ঠপোষকতার এই সংগঠনের ছাত্ররাই বিরোধী দলের সভাগুলিতে সুপরিকল্পিতভাবে গুন্ডামি করতো। এদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেই

লীগ’ নামে একটি নতুন ছাত্র প্রতিষ্ঠান গঠন করেন।

সিলেট ও ময়মনসিংহ এলাকার হাজং আন্দোলনের সূত্রপাত হয় জমিদারীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে। কিন্তু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর এই হাজংদের আন্দোলন আবার নতুন করে দানা বেঁধে ওঠে ধানের ওপর সরকারী লেভী ও টঙ্ক (ধানের মাধ্যমে খাজনা) প্রথার বিরোধিতার মাধ্যমে। এটি সর্বশেষে সশস্ত্র আন্দোলনের রূপ নেয় এবং হাজংদের ওপর ব্যাপক অত্যাচারের ফলে এই আন্দোলনের বিলুপ্তি ঘটে। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন কমিউনিষ্ট পার্টি সর্মথিত কৃষক সমিতি।

পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ জুন, ১৯৪৯ রাজনৈতিক বক্তব্য সম্বলিত লিফলেট অতি বামপন্থী বিভেদকারীদের সম্পর্কে হুশিয়ারী ঢাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭ জন ছাত্র-ছাত্রীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা অবলম্বনের প্রতিবাদে ঢাকা- তথা পূৰ্ব্ব-পাকিস্তানের ছাত্রসমাজ ১৭ই এপ্রিল থেকে যে আন্দোলন শুরু করেছেন, বৰ্ত্তমানে তা এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। সংগ্রাম পরিষদ বরাবরই এই সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান চেয়েছে, কিন্তু কর্তৃপক্ষের ভ্রান্তনীতি ও অপরিণামদশী পদক্ষেপের জন্যে সমাধানের দুয়ার বারবার রুদ্ধ হয়েছে। কর্তৃপক্ষের রাইফেলের গুলিতে আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন; তারা ভেবেছিলেন যে ছাত্র নেতাদের কারাপ্রাচীরের অন্তরালে আবদ্ধ করে রাখলেই সংগ্রাম থেকে যাবে। কিন্তু সংগ্রামী ছাত্রসমাজ কোন জুলুমের মোকাবেলায়ই স্তব্ধ হয়ে যায়নি- বরঞ্চ নাগরিকদের স্বতঃস্ফুর্ত সমর্থন ও সহযোগিতায় তাদের আন্দোলন শতগুণ শক্তিশালী হয়েছে। চরম প্রতিকূল পরিবেমের মধ্যেও ছাত্রসমাজ মাথা উচু করে রেখেছে- তারা কোনক্রমেই আত্মসমর্পণ করেনি। সংগ্রাম পরিষদে লক্ষ্য ছিল- সমস্ত ছাত্রসমাজকে সমবেত করে শৃঙ্খলার সঙ্গে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া। এ ব্যাপারে সংগ্রাম পরিষদ সফল হয়েছে। কর্তৃপক্ষের দালালরা ছাত্র সংহতির মধ্যে ভাঙ্গন ধরাতে বহু চেষ্টা করেছে। কিন্তু তারা ছাত্রসমাজের ঐক্য এতটুকু ক্ষুন্ন করতে পারেনি। বরঞ্চ জনগণের সম্মুখে ঐ দালালদের স্বরূপ সুস্পষ্টভাবেই উদঘাটিত হয়েছে। কিন্তু আজ এক নতুন আপদ এসে জুটেছে। এটা হচ্ছে কমু্যনিষ্ট অধুষিত ছাত্র ফেডারেশন। আলস সংগ্রামের সময় গা ঢাকা দেওয়া এবং সুযোগ বুঝে মাটির তলা থেকে গলাটা বের করে দু’টারটি “অতিবিপ্লবী” বুলি কপচানই যাদের পেশা। “অতিবিপ্লব” যে “প্রতিবিপ্লব”-এরই সামিল তা অবশ্য এরা নিজেরাও জানেন। এই অদলীয় ফেডারেশন নেতারা প্রতিটি বলিষ্ঠ ছাত্র আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করতে চেষ্টা করেন এবং ঘোড়ার আগে গাড়ীজুড়ে বরাবরই আন্দোলনকে সাবোটাশ করেন। বলিষ্ঠ আন্দোলনের চেয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিই যাদের কাম্য, তারাই সাবোটাশ নীতি গ্রহণ করেন। গতবার রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনেও এই “অতিবিপ্লবী” অদলীয় নেতারা উড়ে এসে জুড়ে বসে আন্দোলনটিকে ধ্বংস করতে চেষ্টা করেছিলেন; কিন্তু ছাত্রসমাজের দৃঢ়তা ও সতর্কতায় তাদের অপচেষ্টা সফল হয়নি। এবারকার আন্দোলনেও এরা অনুপ্রবেশ করতে চেষ্টা করেছিলেন- কিন্তু সংগ্রাম পরিষদের সতর্কতায় এর সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। তাই এই অৰ্ব্বাচীন বামপন্থীরা এবার কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদ এবং পূৰ্ব্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযান শুরু করেছেন। সম্প্রতি এক ইশতাহারে এরা বলেছেন“পূৰ্ব্ব-পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ বারে বারে ছাত্রসমাজের সংগ্রামী জোয়ারে রাশ টেনেছে, নিখিল পূৰ্ব্বপাকিস্তান মুসলিম ছাত্র লীগের সঙ্গে এক সারিতে এসে দাঁড়িয়েছে এবং বস্তুতঃপক্ষে পূৰ্ব্ব-পাকিস্তান মুসলিম মিলাতে চান” ইত্যাদি। যে পূৰ্ব্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের উদ্যোগে এবং নেতৃত্বে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং সাম্প্রতিক সাধারণ ধৰ্ম্মঘট পরিচালিত হয়েছে, দমননীতির চক্রতলে নিষ্পেষিত প্রায় জনমতকে যারা পূৰ্ব্ব পাকিস্তানে এখনও জিয়ায়ে রেখেছ, প্রতিটি সংগ্রামের পুরোভাগে থেকে যারা পুলিশের লাঠি, গুলি এবং কাঁদুনে গ্যাসের মোকাবেলা করেছে, যারা দলে দলে

অকাতরে কারাবরণ করেছে (কিন্তু পেছন দুয়ার দিয়ে পালিয়ে গিয়ে মাটির তলায় আত্মগোপন করেনি) তাদের বিরুদ্ধে এই সব অপপ্রচার যে কতখানি হীন এবং উদ্দেশ্যমূলক তা বলাই বাহুল্য। যে সবার আগে কারাবরণ করেছে এবং আজও যে কারাপ্রাচীরের অন্তরালে আবদ্ধ আছে সেই মুজিবুর রহমান নিখিল পূৰ্ব্ব-পাক মুসলিম ছাত্রলীগের মত ভূইফোঁড়, প্রতিক্রিয়াশীল, দালাল প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে হাত মেলাতে ব্যস্ত এরূপ প্রলাপোক্তি ফেডারেশনের “আত্ম-প্রতারিত মুখরাই” করতে পারেন এবং তারাই এটা বিশ্বাস করতে পারেন। ফেডারেশনী চমুবা এমনি ধরনের অনেক প্রলাপোক্তিই করেছেন। আমরা জানি ছাত্রসমাজ সেগুলোকে উপেক্ষাই করবেন। কিন্তু এই সব অপপ্রচারের মধ্যে ফেডারেশনের যে বিভেদ সৃষ্টিকারী রূপ প্রকাশিত হয়েছে তার বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্রসমাজকে আমরা সতর্ক করে দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করছি। এই বিভেদ সৃষ্টিকারীদের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজ হুশিয়ার হউন। বিশৃঙ্খলাকামী তথাকথিক বামপন্থীদের স্বরূপ উদঘাটিত করে বলিষ্ঠ আন্দোলনকে চালু রাখুন। সমবেত কষ্ঠে ছাত্র বন্দীদের মুক্তি এবং শাস্তিমূলক আদেশ প্রত্যাহারের দাবী করুন। জুলুম, অনাচার ও অবিচারের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করুন। সুশৃঙ্খল সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পূৰ্ব্ব পাকিস্তানকে গড়ে তোলার শক্তি সঞ্চয় করুন। পাকিস্তান- জিন্দাবাদ, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ- জিন্দাবাদ।

শিরোনাম সূত্র তারিখ उद्भूतत्रहरूद्वजशा वाडार्लीटन्नट्स डाड़िक মাহে নও (আজাদী সংখ্যা) ১৪ই আগষ্ট, दद्धन्दा ఫి8ఫి পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার নাম মীজানুর রহমান দুনিয়ার প্রত্যেক আজাদ রাষ্ট্রের নিজস্ব রাষ্ট্রভাষা রয়েছে এবং থাকা দরকার। এই বিষয়ে তর্ক-তকরারের গোনজায়েশ নাই। তিকসিমের পর ভারতবর্ষ বা হিন্দুস্তানের রাষ্ট্রভাষারূপে গ্রহণ করা হয়েছে নাগরী হরফে লেখা হিন্দী বা হিন্দুস্থানীকে। পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার সওয়াল স্বাভাবিকভাবে উঠেছিল। কায়েদে আজম নির্দেশ দিয়ে গেছেনউর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। কায়েদে আজমের নির্দেশ যুক্তিসংগত। পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবার কবেলিয়াত উর্দুর রয়েছে। এই সমস্যার সমাধানের বুনিয়াদ তৈরী হয়েছে গেছে। আনজামের এনতেজাম শুধু বাকী। সমাধানের বিষয়গত আলোচনার দরকার নেই। তবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার নাম নিয়ে আমরা কিছু সোপারেশ রয়েছে। এই সোপারেশটুকু পেশ করার জন্যই আজকের আলোচনা। রাষ্ট্র বা জাতির নামানুসারেই হয়ে থাকে রাষ্ট্রভাষার নাম। হওয়াও সংগত এবং সুবিধাজনক। এই হিসাবে আমার মতে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার নাম হওয়া উচিৎ পাকিস্তানী উর্দু ভাষাকে “পাকিস্তানী” বলে অভিহিত করাই আমার প্রস্তাব। “উর্দু মানে সামরিক ছাউনি (মিলিটারী ক্যাম্প) উর্দু কেবল মুসলমানের ভাষা নহে। মুসলমান ও খাছ কোন তায়ালুক নেই। মরহুম মওলানা মোহাম্মদ আলীর কথায়- “উর্দু ইসলামের তোহফা নহে। আরবীফারসী-তুকী জবান হতেও উর্দুর উৎপত্তি নহে… আরবী-ফারসী জবানের কতকগুলি আলফাজই উর্দু ভাষায় মুসলমানদের নিজস্ব।… আরবী কোন দিনই ভারতের মুসলমানদের কথ্য ভাষা ছিলনা। ফারসী এবং তুর্কী এককালে ভারতের মুসলমানদের কথ্য ভাষা ছিল। “যদিও মুসলমানদের আদালতের ভাষা ফার্সিই রয়ে গেছে। মোঘলরা দিল্লির শাসন হারানোর অনেক আগে থেকেই হিন্দুস্তানিদের দৈনন্দিন কাজের জন্য মাতৃভাষা ব্যবহার করতে হত। এই ভাষাটিকে উর্দু বলা হয় এবং এটার ব্যপারে মুসলমানরা প্রবল ভাবে রক্ষনশীল। জনাব লয়েড জর্জ, হাস্যকর কথা হল এই যে, শুধু জনাব বাফুরই এই পরিকল্পনা করছেন না, যদিও ভারতের মুসলমানরা জানে যে, তারা আগে তাদের নিজেদের উর্দুর মত যে ফার্সির প্রতি আকৃষ্ট, সেটা তাদের নিজেদের না, এবং সেটা আরবির প্রতি তাদের আকৃষ্ট চেয়ে অনেক বেশি।”. উর্দু দৈনিক ‘হামদর্দের সম্পাদক এবং মশহুর উর্দু কবি মরহুম মওলানা মোহাম্মদ আলীর পক্ষে উর্দু হামদর্দই স্বাভাবিক। তথাপি সত্যের খাতিরেই মওলানা উপরের মন্তব্য করেছেন। উর্দুর বিকাশে মুসলমানের

দান অবশ্য প্রচুর। নিজস্ব শক্তি সৌন্দয্য এবং সাবলীলতার কল্যাণেই উর্দু ভারতবর্ষের নানা প্রদেশে এতটা প্রসার লাভ করেছিল। মুসলিম হুকুমাতের মারকাজ দিল্লীর সামরিক ছাউনীতেই উর্দুর পয়দায়েশ। রাজনীতিক কারণে বেচারা অপরিচিত নহে। বর্ণমালা ও ইসলামী অবধারার কল্যাণে এবং নিজস্ব শক্তি ও সৌন্দর্য্যের দওলতে উর্দু মুসলমানদের নিকট খুবই আদরণীয়। মাগরেবী পাকিস্তানের বাসিন্দাগণের নিকট উর্দুর মকবুলিয়াৎ সম্বন্ধে সন্দেহের অবসর নাই। মাশরেকী পাকিস্তানেরও উর্দুর কদরদামী ব্যাপক। মুসলমানী বাংলা এবং মুসলমানী উর্দু শব্দ সম্পাদকে বলতে গেলে খালাতো ভাই। মাশরেকী পাকিস্তানের মুসলমান সমাজে নিত্য প্রচলিত শব্দসমূহের শতকরা ৬০-৭০টি শব্দ উর্দু ভাষাতেও প্রচলিত বলে আমার বিশ্বাস। সাহিত্যিক বাংলার কথা অবশ্য আলাহিদা। তথাকথিত সাহিত্যিক বাংলা মাশরেকী পাকিস্তানের সাধারণ মাতৃভাষা নহে তাহা অবশ্যই স্বীকার্য। মোকামী জবান এবং আদাবী জবানের পার্থক্য সকল দেশেই বর্তমান। মোকামী জবানই আসলের মাদের জবান। মুসলমানী বাংলা এবং মুসলমানী উর্দুর আসল পার্থক্য লিখন প্রণালীতে। মাশরেকী পাকিস্তানের বাংলা জবানের লিখনরীতি পরিবর্তনের কথা উঠছে। আরবী হরফে লিখিত হলে মুসলমানী বাংলা এবং মুসলমানী উর্দুর বর্তমান পাথক্য কালক্রমে বিলোপ পাওয়া বিচিত্র নহে। পাকিস্তানের কল্যাণে আমাদের জীবন অনেক কিছু পরিবর্তন এসেছে এবং আরও আসবে। রাজনৈতিক আবর্তন বিবর্তনের সহিত ভাষার আবর্তন বিবর্তন বিশেষভাবে বিজড়িত। ভাব প্রকাশের জন্যই ভাষা। ভাবধারার পরিবর্তনের সংগে সংগে ভাষার পরিবর্তনও অবশ্যাম্ভাবী। মুসলিম জাতীয়তা ভৌগোলিক সীমারেখায় সীমাবদ্ধ নহে। ভৌগোলিক জাতীয়তার সহিত ইসলামী জাতীয়তার মৌলিক মোখলেকাৎ ভৌগোলিক ব্যবধান যাহাই হোক না কেন, সমগ্র দুনিয়ার মুসলমানদের এক খোদা, এক নবী, এক মযহাব, এক মিল্লাত, একই তাহজীব-তমাদুন। সুতরাং ভৌগোলিক ব্যবধানে মুসলিম মিল্লাতের সত্যিকার ভাবধারা বিভিন্নমুখী হতে পারে না। যেহেতু ভাবধারার উৎস এক, ভাবের বাহন ভাষাও মোটামুটি এক-কেন্দ্রিক হওয়াই স্বাভাবিক। আগেই বলেছি রাষ্ট্র-ভাষার নাম দেশ বা জাতির নামানুসারেই হয়ে থাকে। এবং হওয়াও সংগত। “পাকিস্তানী” বলাই আমার মতে সঙ্গত। পাকিস্তানী গৃহীত হলে আমার বিশ্বাস মুসলমানী বাংলা এবং মুসলমানী উর্দু Ultimate fusion-এর পথ অধিতর প্রশস্ত হবে। মুসলমানী বাংলা এবং মুসলমানী উর্দু সমবায়ে গঠিত হবে Common Script-এ লেখা পাকিস্তানী। মাশরেকী ও মাগরেবী পাকিস্তানের জবানী সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান এই পথে। স্বাভাবিকভাবেই সওয়াল হতে পারে উর্দু যখন হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা তখন উহার নাম বদলের দরকার কি? দরকার রয়েছে। পাকিস্তানের সবচেয়ে সমুন্নত ভাষা উর্দু এবং বাংলা। অন্য কোন প্রাদেশিক ভাষা বাংলার ন্যায় একটা বিকশিত নহে। মাশরেকী পাকিস্তানের মুসলমানী বাংলার সহিত উর্দুর সামঞ্জস্যের কথা বলেছি। পাকিস্তানের রাষ্ট্র-ভাষার নাম পাকিস্তানী রাখা হলে মাশরেকী ও মাগরেবী পাকিস্তানের ভাষাগত সমন্বয়ের পথ সহজ ও কোশাদা হবে। পাকিস্তানী কথাটায় পাকিস্তানের বাশিন্দাগণের প্রাণে যতটা অনুপ্রেরণার সঞ্চার করবে অন্য কোন নামে তাহা সম্ভবপর নহে। অনুপ্রেরণার কথাটা বিশেষভাবে কাবেলে কদর। নাম পরিবর্তনের উর্দুর অন্তর্নিহিত ও সাবলীলতা ব্যাহত হবে না। আবশ্যক সংস্কার এবং পরিবর্তনের পর মাশরেকী পাকিস্তানের বাংলা ভাষার নাম পরিবর্তনেরও কথা উঠেছে। মুসলমানী বাংলার নাম পরিবর্তন করে

পাকিস্তানী হতে পারে। পাকিস্তানী বাংলা ও পাকিস্তানী উর্দু স্বাভাবিকভাবেই চলবে ইসলামী তাহজীবতমদ্দুনের পথে। ভারতীয় উর্দু এবং পশ্চিম বাংলার বাংলা ভাষা চলবে অন্য পথে। দুই বিভিন্নমুখী ভাষার এক নাম অসংগত নহে কি? এই দিক দিয়ে বিবেচনা করলেও পাকিস্তানী বাংলা ও পাকিস্তানী উর্দুর নাম পরিবর্তনের আবশ্যকতা অনুভূত হবে। Common Script floo Common ideology GTRI’s *so of Common Languageeva

luation খুবই সম্ভব এবং স্বাভাবিক। পাকিস্তানী হওয়া উচিৎ উক্ত Common Language-5′ =ITĦI পাকিস্তানের সামগ্রিক কল্যাণ কামনায় Common Language তৈরী করার প্রচেষ্টা শুধু সংগত নহে, জরুরী। ইনশাআল্লাহ পাকিস্তান স্থায়ী হবার জন্যই এসেছে Common Language হবে পাকিস্তানের স্থায়ীতের অন্যতম সোনালী বন্ধন। নাম পরিবর্তনের উর্দু ভাষার আসল হাস্তি বজায় থাকবে। অথচ নতুন নামের দওলতে পাকিস্তানের সকল প্রদেশের কাছে খাছ করে মাশরেকী পাকিস্তানের বাশিন্দাগণের নিকট রাষ্ট্রভাষার মর্য্যাদা এবং আকর্ষণীয়তা বৃদ্ধি পাবে। কারণ আগেই বয়ান করেছি। একথা সত্য যে, উর্দু সাধারণভাবে পাকিস্তানের কোন প্রদেশেরই মাদের জবান নহে যদিও উর্দু পাকিস্তানের প্রচলিত জবানসমূহের মধ্যে পাকিস্তানের হুকুমতী জবান হবার পক্ষে অধিকতর মোমতাহেক। রাজনৈতিক আবর্তনে উর্দু নিজ বাসভূমে পরাবাসী হতে বসেছে। হিন্দুস্থানের ইউ,পি, দিল্লী প্রভৃতি প্রদেশেই ছিল উর্দুর শক্তিশালী আস্তানা। নাগরী হরফে লেখা হিন্দীর হামলায় উর্দু সাবেক আবাস হতে বহিস্কৃত হচ্ছে। পাকিস্তানী নামের বরকতে উর্দু ভাষা পাবে পাকাপোক্ত আস্তানা এবং উচ্চতর আসন পাকিস্তানের পাক মাটিতে। নাম বদলের প্রস্তাব পেশ করেছি বলে কেউ যেন মনে না করেন যে আমি উর্দুর মোখালেফ। বাংলা আমার মাদের জবান হলেও আমি বরাবর উর্দু ভাষার অধিকতর চর্চার পক্ষপাতী। পাকিস্তানের সামগ্রিক কল্যাণ কামনায়ই আমি নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব পেশ করেছি। আমার প্রস্তাবে কায়া বজায় থাকবে, বদল হবে কেবল ছায়া। ছায়ার চেয়ে কায়াই আসলে কাম্য। Common Script-a gran Common Language HTĚā “Izar GETTE EFÈ ATI-THI EFTETET বাদ দিয়ে রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ ও মংগলের জন্য আমাদিগকে সর্বপ্রকার ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকতে হবে। পাকিস্তানের স্বচ্ছ দৃষ্টি আকৃষ্ট হোক এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির প্রতি, পাক গণপরিষদে রাষ্ট্রভাষা প্রস্তাব গ্রহণ করবার কালে প্রস্তাবিত “পাকিস্তানী” নাম অনায়াসে গৃহীত হতে পারে। পাক-বাংলা, এবং পাক-উর্দুর সমন্বয় সাধনের প্রকৃষ্ট পন্থা সেরাতুল মোস্তাকীম, পাকিস্তানী।