You dont have javascript enabled! Please enable it! 1973.12.24 | রাষ্ট্রপতি হিসাবে আবু সাঈদ চৌধুরীর পদত্যাগ | দৈনিক আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

রাষ্ট্রপতি হিসাবে আবু সাঈদ চৌধুরীর পদত্যাগ

রাষ্ট্রপতি বিচারপতি জনাব আবু সাঈদ চৌধুরী সােমবার পদত্যাগ করেছেন। সকাল সাড়ে ১১ টায় খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে আহূত এক জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে রাষ্ট্রপতি স্বয়ং এই পদত্যাগের। কথা ঘােষণা করেন। বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত এই সাংবাদিক সম্মেলনে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী আরও ঘােষণা করেন, তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী সরকারের বিশেষ প্রতিনিধির পদ গ্রহণ করেছেন। বিচারপতি জনাব আবু সাঈদ চৌধুরী বিশেষ প্রতিনিধিরূপে মন্ত্রিসভার সদস্যের সমমর্যাদা সম্পন্ন হবেন এবং একই পারিশ্রমিক, বিশেষ অধিকার ও সুযােগ সুবিধা ভােগ করবেন। সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়াও শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, অর্থ মন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ, যােগাযােগ মন্ত্রী জনাব মনসুর আলী, বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রী খন্দকার মােশতাক আহমদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হােসেন, আইন ও পার্লামেন্টারি দফতরের মন্ত্রী মি. মনােরঞ্জন ধর, তথ্য ও বেতার দফতরের প্রতিমন্ত্রী জনাব তাহের উদ্দিন ঠাকুর ও প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব জনাব তােফায়েল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর নিকট প্রদত্ত পদত্যাগ পত্রে বিচারপতি জনাব আবু সাঈদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘজীবন কামনা করেন এবং স্বদেশকে সােনার বাংলায় রূপান্তরিত করার ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর পূর্ণ সাফল্য কামনা করেন। বিচারপতি জনাব আবু সাঈদ চৌধুরী সাংবাদিক সম্মেলনে ঘােষণা করেন, একজন সাধারণ মানুষ হিসাবে জাতির খেদমতে যাতে নিজেকে আরও অধিক কার্যকরিভাবে নিয়ােজিত করতে পারি তার জন্য তিনি রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। সােমবার বিচারপতি জনাব চৌধুরী পদত্যাগের পরপরই সংবিধান মােতাবেক জাতীয় সংসদের স্পিকার জনাব মুহাম্মদুল্লাহ রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রীকে লিখিত পত্র : প্রধানমন্ত্রীর নিকট প্রেরিত পত্রে বিচারপতি জনাব চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেন, অসীম প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর প্রেরণাময় নেতৃত্বে সরকার ও জনগণ সাফল্য অর্জন করেছে। তিনি বলেন, প্রায় এক কোটি ছিন্নমূল মানুষের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন, বিপর্যস্ত প্রশাসনযন্ত্র পুনঃসংগঠন, অতি সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষের সফল প্রতিরােধ, গণতান্ত্রিক জীবন পথে বাস্তব পদক্ষেপ হিসাবে সংবিধান প্রণয়ন ও সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান আমাদের নবীন জাতির জন্য বিশ্বজনীন স্বীকৃতি অর্জন এবং আটক বাঙালিদের প্রত্যাবর্তনসহ উপমহাদেশে শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি প্রাথমিক পদক্ষেপসমূহ সম্বলিত বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিরাট সাফল্য ইত্যাদি কৃতিত্বের পরিচায়ক। উল্লেখযােগ্য যে, বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ১৯৭২ সালে ১২ জানুয়ারি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন এবং পরে সংবিধান অনুযায়ী ১৯৭৩ সালে ১০ এপ্রিল সর্বসম্মতক্রমে ৫ বছরের জন্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। প্রসঙ্গত আরও উল্লেখযােগ্য, স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী বিপ্লবী সরকারের বিশেষদূত হিসাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করেন এবং বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্ব জনমত গড়ে তুলতে বিশেষ সাফল্যের পরিচয় দান করেন। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, তার এই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত কোনাে আকস্মিক সিদ্ধান্ত নয়। রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অব্যাহিত লাভের জন্য তিনি দীর্ঘদিন ধরে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পুনঃ পুনঃ অনুরােধ জানিয়ে আসছিলেন। পদত্যাগ পত্রে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, জরুরি জাতীয় স্বার্থের তাগিদে আমি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসাবে পদত্যাগ করছি। যাতে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যেভাবে বাংলাদেশের সেবা করতে প্রয়াসী হয়েছিলাম তেমনি আবারও করতে পারি। বিচারপতি জনাব আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন তিনি অত্যন্ত আনন্দের সাথে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করছেন যাতে আরও ভালােভাবে দেশবাসীর খেদমত করতে পারেন। তার জন্য বিশেষ প্রতিনিধিরা নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করছেন। সাংবাদিক সম্মেলনে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী সুখী সমৃদ্ধিশালী সােনার বাংলা গঠনকল্পে। বঙ্গবন্ধু ও তার সহকর্মীদের সুদৃঢ় করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রীর জবাব : জনাব আবু সাঈদ চৌধুরীর পত্রের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, অধিকতর সক্রিয় ভূমিকায় দেশ সেবা করার ব্যাপারে আপনার ঐকান্তিক আগ্রহ আমাদের আলােচনাকালে লক্ষ্য করে আমি মুগ্ধ হয়েছি। আপনার এই ঐকান্তিকতায় দেশের প্রতি আপনার গভীর ভালােবাসা এবং তার সেবায় সর্বশক্তি নিয়ােগে আপনার আগ্রহ প্রতিফলিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বলেন যে, বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি হিসাবে নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করে তিনি (বিচারপতি) চৌধুরী আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বার্থকে মুক্তির সংগ্রাম কালের ন্যায় সাফল্য ও বৈশিষ্ট্যের সাথে তুলে ধরতে পারবেন। তাতে কোনাে সন্দেহ নেই।৬৫

রেফারেন্স: ২৪ ডিসেম্বর ১৯৭৩, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ