You dont have javascript enabled! Please enable it! 1973.12.17 | বাংলাদেশ কোনাে শক্তির তাবেদার নয়— তাজউদ্দীন আহমদ | দৈনিক আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

বাংলাদেশ কোনাে শক্তির তাবেদার নয়— তাজউদ্দীন আহমদ

অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ বলেছেন, বাংলাদেশ বিশ্বের কোনাে রাষ্ট্রের নাগপাশে আবদ্ধ নয়। বন্ধু রাষ্ট্রগুলাে যতদিন পর্যন্ত আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবে ততদিন পর্যন্ত তাদের সাথে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব বজায় থাকবে। অর্থমন্ত্রী সােমবার সন্ধ্যায় লালকুঠিতে ভারত-বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক পরিষদের আয়ােজিত এক আলােচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। সাংস্কৃতিক পরিষদের সভাপতি ড. কুদরত-ই-খােদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় আলােচনায় অংশ নের পরিষদের সহ-সভাপতি অ্যাডভােকেট ফজলুল করিম, শ্রী ভবেশ নন্দী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক জনাব এম, এ, আজিজ ও বাংলাদেশস্থ ভারতীয় দূতাবাসের শিক্ষা সচিব ড. এ, কে, এম, জালাল উদ্দিন। জনাব তাজউদ্দীন আহমদ ভারতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও কুৎসা রটনাকারীদের কঠোর সমালােচনা করেন। তিনি বলেন যে, বাংলাদেশকে দিল্লির নাগপাশ থেকে মুক্ত করার জন্য কারাে অনশনের প্রয়ােজন নেই। কারণ বাংলাদেশ কারাে নাগপাশে আবদ্ধ নয়। তিনি বলেন যে, যারা বিভ্রান্তির নাগপাশে আবদ্ধ হয়ে আছেন-তাদের বিভ্রান্তি থেকে মুক্তিলাভের উদ্দেশ্যে আত্মশুদ্ধির জন্য অনশন করা উচিত। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাড়ে বারাে হাজার ভারতীয় জোয়ান ও অফিসার প্রাণ দিয়েছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারত নিরপেক্ষ ভূমিকা গ্রহণ করলে পাকিস্তানিদের সুবিধাও হতাে। পক্ষান্তরে আমাদের দুর্ভোগ বহুগুণে বেড়ে যেতাে। তিনি বলেন যে, ভাবাবেগের বন্ধুত্ব স্থায়ী হয় না। ভারত-বাংলাদেশের বন্ধুত্ব ভাবাবেগে নয়, বাস্তব অবস্থা ও পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর প্রতিষ্ঠিত। ভারত কিভাবে কোথা থেকে কী কী জিনিস নিয়েছে, তা প্রকাশের জন্য তিনি ভারতের বিরুদ্ধে অপপ্রচারকারীদের প্রতি অনুরােধ জানান। অর্থমন্ত্রী আরাে বলেন যে, বাংলাদেশ প্রতিটি নিকটতম দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ ভূমিকা গড়ে তুলতে আগ্রহী। তিনি বলেন, উত্তেজনা জিইয়ে থাকলে উপমহাদেশীয় দেশগুলাের অগ্রগতি ব্যাহত হবে। উত্তেজনা হ্রাসের অনুকূলে ভূমিকা গ্রহণের জন্য তিনি পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানান।
অর্থমন্ত্রী বলেন, শুধু বাংলাদেশে নয় আন্তর্জাতিক বাজারেও জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। তিনি আন্তর্জাতিক বাজার দর সম্পর্কে জনসাধারণকে ওয়াকিবহাল রাখার জন্য দেশের সংবাদপত্রগুলাের প্রতি আবেদন জানান। জনাব তাজউদ্দীন আহমদ আরাে বলেন যে, বিদেশি সংস্কৃতিকে জানার প্রয়ােজন রয়েছে। প্রয়ােজন বােধে দেশীয় সংস্কৃতির সাথে বিদেশি সংস্কৃতির সমন্বয় সাধন করা আবশ্যক।৪৭

রেফারেন্স: ১৭ ডিসেম্বর ১৯৭৩, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ