আইন-শৃঙ্খলা কায়েমে নয়া মূল্যবোেধ প্রতিষ্ঠার প্রতি গুরুত্ব আরােপ- তাজউদ্দীন আহমদ
অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ আইন-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নয়া মূল্যবােধ প্রতিষ্ঠা করার প্রতি গুরুত্ব আরােপ করেন। জনাব তাজউদ্দীন প্রসঙ্গত বলেন, নতুন সমাজ গড়ার ক্ষেত্রে দেশের প্রচলিত আইন ব্যবস্থা দিয়ে জনগণের মাঝে মানবিক মূল্যবােধ জাগ্রত করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে সরকারি প্রশাসন যন্ত্রের সাথে জড়িত ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কোনাে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা রাজনৈতিক সংগঠন দিয়ে দেশে আইন-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা যায় না। এমনকি বেসরকারি বিশেষ কোনাে প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব তাে নয়ই, বরং এ ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ব্যাহত করার প্রতিযােগিতা বৃদ্ধি পায় বলে তিনি উল্লেখ করেন। জনাব তাজউদ্দীন আহমদ রােববার জাতীয় দিবস উপলক্ষে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আয়ােজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির ভাষণ দিচ্ছিলেন। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব জনাব তােফায়েল আহমেদ। অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলার মেহনতি মানুষই দেশের সম্পদ সৃষ্টির উৎস। সম্পদ সৃষ্টির সুফল তাদের ভােগ করার নিশ্চয়তা দানের মহান কর্তব্য আমাদের ওপর অর্পিত। এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে স্বাধীনতার শহীদানের আত্মাহুতি বৃথা যাবে। পক্ষান্তরে বাংলার ইতিহাস শহীদের অমর ত্যাগ উজ্জল অক্ষরে লেখা থাকবে। কিন্তু ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়ে আমাদের নাম লেখা হবে বলে অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেন। প্রসঙ্গত তিনি বলেন, আজ যারা বাংলার সম্পদ পাচার করে ও শােষণ করে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে তারা বাংলার কুসন্তান। এসব পরগাছাদের বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করতে হবে। তিনি বলেন, আজকের দিনে। আমাদের আত্মসমালােচনার প্রয়ােজন রয়েছে। আত্মসমালােচনা ব্যতীত আমাদের বড় হবার, স্বনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তােলার সমাজবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কায়েম করার কোনাে পথ নেই বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন। জনাব তাজউদ্দীন বলেন, বুদ্ধিজীবীদের দায়িত্ব হলাে সত্য কথা বলা। নতুন সমাজ ব্যবস্থাকে আকর্ষণীয় ও লােভনীয় না করে মেহনতী জনগণের জন্য কল্যাণমুখী করার কাজে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি প্রসঙ্গত বলেন যে, বুদ্ধিজীবীদের উচিত আমাদের সাফাই না গেয়ে সমালােচনা করে সত্য প্রকাশ করা।
তােফায়েল আহমেদ : সেমিনারে সভাপতির ভাষণে জনাব তােফায়েল আহমেদ বলেন, ১৬ ডিসেম্বরের কামনা ছিল রাজনৈতিক স্বাধীনতার পর বাংলার মানুষ অর্থনৈতিক স্বাধীনতা পাবে। কিন্তু স্বাধীনতার পর অর্থনৈতিক মুক্তির সাধ বাংলার মানুষ পায়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে না পারলে জনগণকে শােষণমুক্ত অর্থনীতির সুফল ভােগ করতে না দিলে ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে। জনাব তােফায়েল বলেন, আজো কিছু সংখ্যক লােক মেহনতি মানুষকে শােষণ করে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হচ্ছে। অন্যদিকে শােষক বিপ্লবের কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এই শ্রেণি জানে না যে, তারা আহাম্মকের স্বর্গে বাস করছে। বাংলার মানুষ অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। রাজনৈতিক সচিব বলেন, এ শােষণ চলতে দেয়া যায় না। বঙ্গবন্ধু আবার এদের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনের ডাক দেবেন। গণআন্দোলনের ডাক অবশ্যই দিতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। জনাব তােফায়েল বলেন আজকের ১৬ ডিসেম্বর আমাদের শপথ নিতে হবে বাংলার স্বাধীনতা-সাবভৌমত্ব রক্ষায়। সকল প্রকার শােষণের হাত থেকে বাংলার মানুষকে মুক্ত করে যতদিন সম্পদের অংশ সকল দুঃখী মানুষের মাঝে দেয়া না যাবে ততদিন যুব সমাজের তথা আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।৪৪
রেফারেন্স: ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭৩, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ