বাংলাদেশ কোনাে বিশেষ ব্লকের পকেটে নয়- বঙ্গবন্ধু
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সুস্পষ্ট ভাষায় ঘােষণা করেছেন, বাংলাদেশ কোনাে বিশেষ। ব্লকের পকেটে নয়। তিনি আরাে বলেন, ৩০ লাখ শহীদের পবিত্র রক্ত ২ লাখ মা বােনের ইজ্জত এবং কোটি কোটি মানুষের সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। হকোনাে বিশেষ ব্লকে যােগদান করে আত্মমর্যাদা বিক্রি করার জন্য নয়। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গতকাল সকালে কারিগরি মিলনায়তনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির দ্বিতীয় কংগ্রেসে উদ্বোধনী ভাষণ দানকালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির ব্যাখ্যা প্রদানকালে উপরােক্ত মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কারাে অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে চায় না। বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারেও কারাে হস্তক্ষেপ বা নাক গলানাে সহ্য করা হবে না। তিনি এক শ্রেণির রাজনৈতিক নেতাদের সমালােচনার ব্যাপারে বলেন, ভারত-সােভিয়েত ইউনিয়ন আমাদের দুর্দিনের বন্ধু। এই বন্ধুত্ব পারস্পরিক মর্যাদার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ভারত এবং সােভিয়েত ইউনিয়ন কোনােদিনই আমাদের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলানাের চেষ্টা করেনি। ভবিষ্যতেও করবে না বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে জোট নিরপেক্ষ পররাষ্ট্র নীতিতে বিশ্বাসী। শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থান পররাষ্ট্র নীতির অন্যতম আদর্শ। তিনি বলেন, আমরা মনে প্রাণে বিশ্ব শান্তিতে বিশ্বাস করি বলেই বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশের সাথে। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক কামনা করি।
বিশ্ব দুভাগে বিভক্ত : প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, বিশ্ব শােষক এবং শােষিত এই দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার এবং জনগণ সবসময়ই বিশ্বের শােষিত মানুষের সংগ্রামের পাশে রয়েছে এবং থাকবে। তিনি আরাে বলেন, বিশ্বের যেখানেই নির্যাতন, অত্যাচার এবং শােষণ রয়েছে তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সরকার এবং জনগণ অব্যাহত গতিতে প্রতিবাদ জানাবে। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতির ব্যাখ্যা প্রদানকালে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্সসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলাের সাথে বাংলাদেশের ভালাে সম্পর্ক রয়েছে। তবে তা সােভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারতের বন্ধুত্বের বিনিময়ে নয়। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারত সরকার বাংলাদেশের বাস্তুত্যাগীদে পেছনে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা খরচ করেছে। তিনি আরাে বলেন, স্বাধীনতার পরবর্তীকালে দুর্ভিক্ষ এড়ানাের জন্য ভারত ৮ লাখ টন খাদ্যশস্য দিয়েছে। তিনি দুঃখ করে বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশের জন্য ভারতের এত কিছু করার পরেও এক শ্রেণির লােক উদ্দেশ্য প্রণােদিত হয়ে ভারতের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালায়। একইভাবে সােভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে এসব অকৃতজ্ঞ লােকজন মিথ্যা প্রচারণা চালায়। তিনি তাদের উপকারীর উপকার স্বীকার করার মতাে সাহস অর্জন করার আহ্বান জানিয়েছেন।৯
রেফারেন্স: ৪ ডিসেম্বর ১৯৭৩, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৩, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ